ঢাকা ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo পানছড়িতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেলেন সেনাপ্রধান Logo আইফোন ১৭ সিরিজের ডিজাইনার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবিদুর চৌধুরী Logo ওএসডির ছয় মাস পর পরিচালকের দায়িত্ব পেলেন ডা. সাইফুল ইসলাম! Logo সুনামগঞ্জে এনসিপির যুগ্ম-সমন্বয়ক যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী Logo পানছড়িতে হেফাজত ইসলামের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত Logo শার্শায় ১২ কেজি গাঁজাসহ যুবক আটক Logo ফুলবাড়িয়ায় ৪৩ জনকে চোখের চিকিৎসা করালেন বিএনপি নেতা  Logo পদত্যাগের পর নেপালেই আছেন কেপি শর্মা ওলি Logo কেপি শর্মা ওলির পতনের পেছনে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র হাত! Logo ভারত ও চীনের ওপর শত ভাগ শুল্ক আরোপ করতে ইউরোপকে ট্রাম্পের আহ্বান

ওএসডি থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক

ওএসডির ছয় মাস পর পরিচালকের দায়িত্ব পেলেন ডা. সাইফুল ইসলাম!

Rayhan Zaman
  • আপডেট সময় : ০৮:২৭:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১১৯৮ বার পড়া হয়েছে

ডা.সাইফুল ইসলাম। ছবি: আস্থা

কিশোরগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রাইভেট ক্লিনিক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকাসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অথচ অভিযোগ রয়েছে চলতি বছরের ৩ মার্চ কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন থাকাবস্থায় তাকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) করা হয়েছিল। একই ব্যক্তিকে কিশোরগঞ্জের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে রহস্যজনক ও ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত, ৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যুগ্মসচিব সনজীদা শারমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ওএসডি হওয়া কিশোরগঞ্জের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলামকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যুক্ত করা হয়। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়োগকে ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন ‘যে ব্যক্তিকে দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে ওএসডি করা হয়েছিল, তাকে আবার কিসের জোরে এত বড় দায়িত্বে বসানো হলো?’

ডা. সাইফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন থাকার সময় শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্বাস্থ্যসেবাকে বাণিজ্যে পরিণত করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক চালু রাখা, লাইসেন্স নবায়নে অবৈধ লেনদেন, চিকিৎসা সেবায় অনিয়মসহ নানা অভিযোগ সেসময়ও উঠেছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের যোগদানকে কেন্দ্র করে পুরোনো সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গতকাল তার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই স্থানীয়রা হাসপাতালের ভেতর থেকে একদল দালালকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ‘মেডিকো’ নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ওই দালাল চক্র রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে দালালরা নিজেদের হাসপাতালের নবনিযুক্ত পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রফেসর রবিন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে যেই হোক আবারও তাকে একই এলাকায় দায়িত্ব উচিত না ’।

জেলার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার বর্মন বলেন,’আমরা সবসময় এসব বিষয়ে তৎপর থাকি। স্বাস্থ্যখাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অতীতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে আবারও দায়িত্ব দেওয়া মোটেই কাম্য নয়। আমরা সবসময়ই সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতাদের সচেতন করার চেষ্টা করি, কীভাবে সঠিকভাবে সেবা পাওয়া যায় এবং কীভাবে দায়িত্বশীলভাবে সেই সেবা দেওয়া উচিত।’

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চরত পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সম্বনয়ক আবু হানিফ বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন ডা. সাইফুল ইসলাম। সে সময় তাকে ওএসডি করা হয়েছিল। অথচ সেই একই ব্যক্তিকে পুনরায় মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি জুলাই শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানীর শামিল।

তিনি আরও বলেন, কিশোরগঞ্জে সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি আওয়ামীপন্থী একটি চক্রকে নিয়ে ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এখন আবার তাকে কিশোরগঞ্জে পদায়নের মধ্য দিয়ে সেই দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী নতুন করে সক্রিয় হয়ে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বাড়াবে, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে’

স্থানীয়রা বলছে, এভাবে বিতর্কিত ও অভিযোগে জর্জরিত একজন কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে আরও বঞ্চিত হবে। কিশোরগঞ্জের মানুষ চায় যোগ্য, সৎ ও নিরপেক্ষ নেতৃত্ব যেখানে দুর্নীতিগ্রস্তদের কোনো স্থান নেই।

ওএসডি থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক

ওএসডির ছয় মাস পর পরিচালকের দায়িত্ব পেলেন ডা. সাইফুল ইসলাম!

আপডেট সময় : ০৮:২৭:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কিশোরগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রাইভেট ক্লিনিক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকাসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অথচ অভিযোগ রয়েছে চলতি বছরের ৩ মার্চ কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন থাকাবস্থায় তাকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) করা হয়েছিল। একই ব্যক্তিকে কিশোরগঞ্জের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে রহস্যজনক ও ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত, ৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যুগ্মসচিব সনজীদা শারমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ওএসডি হওয়া কিশোরগঞ্জের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলামকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যুক্ত করা হয়। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়োগকে ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন ‘যে ব্যক্তিকে দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে ওএসডি করা হয়েছিল, তাকে আবার কিসের জোরে এত বড় দায়িত্বে বসানো হলো?’

ডা. সাইফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন থাকার সময় শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্বাস্থ্যসেবাকে বাণিজ্যে পরিণত করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক চালু রাখা, লাইসেন্স নবায়নে অবৈধ লেনদেন, চিকিৎসা সেবায় অনিয়মসহ নানা অভিযোগ সেসময়ও উঠেছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের যোগদানকে কেন্দ্র করে পুরোনো সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গতকাল তার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই স্থানীয়রা হাসপাতালের ভেতর থেকে একদল দালালকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ‘মেডিকো’ নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ওই দালাল চক্র রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে দালালরা নিজেদের হাসপাতালের নবনিযুক্ত পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রফেসর রবিন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে যেই হোক আবারও তাকে একই এলাকায় দায়িত্ব উচিত না ’।

জেলার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার বর্মন বলেন,’আমরা সবসময় এসব বিষয়ে তৎপর থাকি। স্বাস্থ্যখাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অতীতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে আবারও দায়িত্ব দেওয়া মোটেই কাম্য নয়। আমরা সবসময়ই সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতাদের সচেতন করার চেষ্টা করি, কীভাবে সঠিকভাবে সেবা পাওয়া যায় এবং কীভাবে দায়িত্বশীলভাবে সেই সেবা দেওয়া উচিত।’

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চরত পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সম্বনয়ক আবু হানিফ বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন ডা. সাইফুল ইসলাম। সে সময় তাকে ওএসডি করা হয়েছিল। অথচ সেই একই ব্যক্তিকে পুনরায় মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি জুলাই শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানীর শামিল।

তিনি আরও বলেন, কিশোরগঞ্জে সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি আওয়ামীপন্থী একটি চক্রকে নিয়ে ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এখন আবার তাকে কিশোরগঞ্জে পদায়নের মধ্য দিয়ে সেই দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী নতুন করে সক্রিয় হয়ে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বাড়াবে, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে’

স্থানীয়রা বলছে, এভাবে বিতর্কিত ও অভিযোগে জর্জরিত একজন কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে আরও বঞ্চিত হবে। কিশোরগঞ্জের মানুষ চায় যোগ্য, সৎ ও নিরপেক্ষ নেতৃত্ব যেখানে দুর্নীতিগ্রস্তদের কোনো স্থান নেই।