ঢাকা ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভুখা পেটে আর কতদিন পড়াবেন শিক্ষকরা!

Doinik Astha
Doinik Astha
  • আপডেট সময় : ১১:০১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১০২১ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষা একটি জাতির কণ্ঠস্বর, আর সেই কণ্ঠকে বাঁচিয়ে রাখেন শিক্ষকরা। কিন্তু আজ দেশের বহু শিক্ষক সম্মান পেলেও জীবনে দারিদ্র্যের কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন। অর্থ উপদেষ্টার প্রশ্ন- ভুখা পেটে আর কতদিন পড়াবেন শিক্ষকরা, এটি কেবল প্রশ্ন নয়, জাতির জন্য এক কঠিন সতর্কবার্তা।

বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.২%। রাজস্ব সংকুচিত থাকায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১.৮% এর বেশি ওঠে না, যেখানে ইউনেস্কো সুপারিশ করেছে অন্তত ৪–৬%। এই ঘাটতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে শিক্ষক বেতন, প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোর ওপর। সম্মান থাকলেও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা না থাকায় শিক্ষকরা যেন ডানা-কাটা পাখি, শ্রেণিকক্ষে আলো জ্বালানোর শক্তি হারাচ্ছেন।

ন্যূনতম বেতন পুনঃনির্ধারণ, স্বাস্থ্য বীমা, হাউজিং ভাতা, সুষ্ঠু পেনশন ও জরুরি তহবিল না থাকলে শিক্ষকের জীবনে স্থিতিশীলতা আসে না। ফলে অনেকেই পেশা পরিবর্তনের চিন্তায় পড়েন। এই অবস্থা শুধু শিক্ষক নয়, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি।

শুধু বাজেট বাড়ালেই সমাধান হবে না। বাস্তবে অনেক অর্থ দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও জাল-নাম তালিকার মাধ্যমে নষ্ট হয়। এটি ফুটো কলসিতে জল ঢালার মতো। এ অবস্থায় জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল পে-রোল, অনলাইন অডিট ও নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা দরকার।

নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ব্যবহার, পাঠ পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির উন্নতি ছাড়া শিক্ষকের মান বাড়বে না। পাশাপাশি, আরামদায়ক ও নিরাপদ অবকাঠামো ছাড়া মানসম্পন্ন শিক্ষা সম্ভব নয়। অনেক স্কুল এখনো গ্রীষ্মে আগুনের চুলা আর বর্ষায় জলে ভেজা কুঁড়ে ঘরের মতো।

সমাধানের জন্য সমন্বিত রোডম্যাপ দরকার:

  • স্বল্পমেয়াদে (৬–১২ মাস): জরুরি বেতন টপ-আপ, ডিজিটাল অডিট, দ্রুত কর সংস্কার।
  • মধ্যমেয়াদে (১–বছর): বাজেট পুনঃবিন্যাস, ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো রেজিলিয়েন্স।
  • দীর্ঘমেয়াদে (৩–বছর): টেকসই রাজস্ব, ক্যারিয়ারভিত্তিক শিক্ষক ব্যবস্থা ও বিকেন্দ্রীকরণ।

রাজস্ব বৃদ্ধি করতে কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, ভ্যাট কভারেজ বাড়ানো ও বড় আয়ের সেক্টরে নিরীক্ষা জরুরি। পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও সামাজিক দায়বদ্ধতার তহবিল থেকেও শিক্ষা অবকাঠামোতে সহায়তা আনা সম্ভব।

শিক্ষক জাতির পথপ্রদর্শক পাখি। কিন্তু ক্ষুধার্ত পাখি উড়তে পারে না। আমরা যদি এখনই শিক্ষকদের জন্য ন্যূনতম অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত না করি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নও ভেঙে যাবে। তাই আমাদের একসাথে বলতে হবে- না, আর নয়; ভুখা পেটে পড়াবেন না শিক্ষকরা।

 

এম রশিদ প্রধান
ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন

ট্যাগস :

ভুখা পেটে আর কতদিন পড়াবেন শিক্ষকরা!

আপডেট সময় : ১১:০১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিক্ষা একটি জাতির কণ্ঠস্বর, আর সেই কণ্ঠকে বাঁচিয়ে রাখেন শিক্ষকরা। কিন্তু আজ দেশের বহু শিক্ষক সম্মান পেলেও জীবনে দারিদ্র্যের কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন। অর্থ উপদেষ্টার প্রশ্ন- ভুখা পেটে আর কতদিন পড়াবেন শিক্ষকরা, এটি কেবল প্রশ্ন নয়, জাতির জন্য এক কঠিন সতর্কবার্তা।

বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.২%। রাজস্ব সংকুচিত থাকায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১.৮% এর বেশি ওঠে না, যেখানে ইউনেস্কো সুপারিশ করেছে অন্তত ৪–৬%। এই ঘাটতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে শিক্ষক বেতন, প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোর ওপর। সম্মান থাকলেও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা না থাকায় শিক্ষকরা যেন ডানা-কাটা পাখি, শ্রেণিকক্ষে আলো জ্বালানোর শক্তি হারাচ্ছেন।

ন্যূনতম বেতন পুনঃনির্ধারণ, স্বাস্থ্য বীমা, হাউজিং ভাতা, সুষ্ঠু পেনশন ও জরুরি তহবিল না থাকলে শিক্ষকের জীবনে স্থিতিশীলতা আসে না। ফলে অনেকেই পেশা পরিবর্তনের চিন্তায় পড়েন। এই অবস্থা শুধু শিক্ষক নয়, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি।

শুধু বাজেট বাড়ালেই সমাধান হবে না। বাস্তবে অনেক অর্থ দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও জাল-নাম তালিকার মাধ্যমে নষ্ট হয়। এটি ফুটো কলসিতে জল ঢালার মতো। এ অবস্থায় জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল পে-রোল, অনলাইন অডিট ও নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা দরকার।

নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ব্যবহার, পাঠ পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির উন্নতি ছাড়া শিক্ষকের মান বাড়বে না। পাশাপাশি, আরামদায়ক ও নিরাপদ অবকাঠামো ছাড়া মানসম্পন্ন শিক্ষা সম্ভব নয়। অনেক স্কুল এখনো গ্রীষ্মে আগুনের চুলা আর বর্ষায় জলে ভেজা কুঁড়ে ঘরের মতো।

সমাধানের জন্য সমন্বিত রোডম্যাপ দরকার:

  • স্বল্পমেয়াদে (৬–১২ মাস): জরুরি বেতন টপ-আপ, ডিজিটাল অডিট, দ্রুত কর সংস্কার।
  • মধ্যমেয়াদে (১–বছর): বাজেট পুনঃবিন্যাস, ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো রেজিলিয়েন্স।
  • দীর্ঘমেয়াদে (৩–বছর): টেকসই রাজস্ব, ক্যারিয়ারভিত্তিক শিক্ষক ব্যবস্থা ও বিকেন্দ্রীকরণ।

রাজস্ব বৃদ্ধি করতে কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, ভ্যাট কভারেজ বাড়ানো ও বড় আয়ের সেক্টরে নিরীক্ষা জরুরি। পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও সামাজিক দায়বদ্ধতার তহবিল থেকেও শিক্ষা অবকাঠামোতে সহায়তা আনা সম্ভব।

শিক্ষক জাতির পথপ্রদর্শক পাখি। কিন্তু ক্ষুধার্ত পাখি উড়তে পারে না। আমরা যদি এখনই শিক্ষকদের জন্য ন্যূনতম অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত না করি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নও ভেঙে যাবে। তাই আমাদের একসাথে বলতে হবে- না, আর নয়; ভুখা পেটে পড়াবেন না শিক্ষকরা।

 

এম রশিদ প্রধান
ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন