ঢাকা ০৮:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo আ.লীগের আগ্রাসনের প্রতিবাদে পানছড়িতে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল Logo তাড়াইলে ধলা ইউপি চেয়ারম্যান ঝিনুক গ্রেফতার Logo কিশোরগঞ্জে চবি চাকসুর জিএস সাঈদ বিন হাবিবকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা Logo কিশোরগঞ্জে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত Logo খাগড়াছড়িতে আ.লীগের মিছিল: সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা Logo প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার Logo রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ Logo নভেম্বরের ৯ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ৪৮.৭ শতাংশ বৃদ্ধি Logo ত্যাগ, নৈতিকতা নাকি দলীয় বলয়; কিশোরগঞ্জের ফাঁকা দুই আসনে কোন পথ বেছে নেবে রাজনীতি? Logo নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: ক্ষমতার লোভে পেয়েছে উপদেষ্টাদের

জবানের অপব্যবহারের পরিণাম

Doinik Astha
Doinik Astha
  • আপডেট সময় : ০১:৪৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪
  • / ১৩২২ বার পড়া হয়েছে

রাসূল (সা.) আমাদের জন্য আদর্শ। কথা-বার্তা, চাল-চলন, কাজ-কর্ম সব বিষয়ে তিনি কখনও অযথা অনর্থক কথা বলতেন না, এমনকি বলা পছন্দও করতেন না। শুধু উপকারী ও প্রয়োজনীয় কথা বলতেন। তিনি দীর্ঘসময় নীরব থাকতেন।

হাদিসে এসেছে : রাসূল (সা.) দীর্ঘসময় চুপ থাকতেন এবং কম হাসতেন। (মুসনাদে আহমাদ : ২০৮১০)। সরাসরি মিথ্যা, গালমন্দ, অশ্লীল কথা এগুলো থেকে আমরা অনেকেই বিরত থাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় বেখেয়ালে মিথ্যা বলে ফেলি। যেমন কিছু দেওয়ার বাহানা করে ছোট বাচ্চাকে ডাকা হলো অথচ আহ্বানকারীর কাছে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। এটি মিথ্যার শামিল।

উম্মে আবদুল্লাহ ইবনে আমের রা. ছোট বাচ্চাকে কিছু দেওয়ার কথা বলে ডাকছিলেন। রাসূল (সা.) বিষয়টি লক্ষ করলেন। বললেন, তুমি কি তাকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকছ (নাকি কিছু দেওয়ার বাহানা করে তাকে কাছে ডাকছ?)। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তাকে খেজুর দেওয়ার জন্য ডাকছি। তখন নবীজী বললেন : জেনে রাখ, তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে, তাহলে তোমার গুনাহের খাতায় একটি মিথ্যা লেখা হতো। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯১)।

গল্প-গুজব, হাসি-তামাশা ও রসিকতার ছলে অনেক সময় আমরা অলীক, অবাস্তব ও উদ্ভট কথা বলে ফেলি। এমনকি কখনো কখনো মিথ্যাও হয়ে যায়। এ সমস্যাটি ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সর্বশ্রেণির মানুষের মাঝে মহামারির আকার ধারণ করেছে। কারণ রসিকতায় শ্রোতাদের হাসানোই থাকে মুখ্য বিষয়। তাই মিথ্যা, অলীক, অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক কথা বলার প্রবণতা থাকে। এমনকি এসব নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। অথচ মিথ্যাকে আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যম বানানো মারাত্মক গুনাহ। এর পরিণাম অনেক ভয়াবহ। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : ধ্বংস ওর! যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে। ধ্বংস ওর! ধ্বংস ওর জন্য!! (মুসনাদে আহমাদ : ২০০২১)।

কারো কারো মাঝে কথায় কথায় লানত-বদদোয়া দেওয়ার অভ্যাস থাকে। বিশেষভাবে নারীদের মাঝে। অনেক সময় তারা আপনজন এমনকি নিজ সন্তানকেও বদদোয়া দিয়ে চলে। হতে পারে তখন দুআ কবুলের মুহূর্ত ছিল। ফলে খাল কেটে কুমির আনার মতো অবস্থা হয়। বদদোয়াটা লেগে যায়। এটা খুবই গর্হিত কাজ। জবানের মারাত্মক অপব্যবহার। তাই এ ব্যাপারে আমাদের হুঁশিয়ার থাকা উচিত।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা একে অপরকে লানত করো না; বলো না- তোমার ওপর আল্লাহর লানত হোক, তোমার ওপর আল্লাহর গজব পড়ুক, তুমি জাহান্নামে যাও। (জামে তিরমিযী : ১৯৭৬)।

জবানের অপব্যবহারের আরেকটি ক্ষেত্র হলো, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ, গীবত-অপবাদ ইত্যাদি। আমাদের কারো কারো কথাবার্তার বড় একটা অংশ থাকে তৃতীয় ব্যক্তিকে নিয়ে। হয়তো কারো দোষ চর্চা করা, না হয় কাউকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা অথবা কারো ব্যাপারে মন্দ বলা বা অপবাদ আরোপ করা। অথচ কুরআন-হাদিস এগুলো থেকে শক্তভাবে বারণ করেছে। এগুলো প্রত্যেকটাই কবীরা গুনাহ। পাশাপাশি জবানের অপব্যবহারেরও শামিল।

জবানের অপব্যবহার মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। দীর্ঘ এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত মুআয রা. রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন : কথার কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? (মুখের কথার কারণেও কি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে?) তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মুআজ রা.-এর উরুতে মৃদু আঘাত করে বললেন : হে মুআয! তুমি এ বিষয়টি বুঝ না! আরে, মানুষকে তো তার জবানের কথাই উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। যে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী সে যেন ভালো কথা বলে বা অন্তত মন্দ কথা থেকে বিরত থাকে। তোমরা ভালো কথা বল, লাভবান হবে। মন্দকাজ থেকে বিরত থাক, নিরাপদ থাকবে। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৭৭৭৪)।

রাসূল (সা.) জবানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। কত পূত-পবিত্র তাঁর জবান! যে জবান আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার কাছে ওহী পৌঁছায় এবং আল্লাহর কালামের ব্যাখ্যা দান করে। এ জবানের পবিত্রতা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন : সে তার নিজ খেয়াল-খুশি থেকে কিছু বলে না। এ তো ওহী, যা তার কাছে পাঠানো হয়। (সূরা আননায্ম : ৩-৪)। তা সত্ত্বেও রাসূল (সা.) বিনয়কাতর হয়ে আল্লাহর কাছে জবানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন : হে আল্লাহ! আমি আমার কান, চোখ, জবান, হৃদয় এবং লজ্জাস্থানের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। (সুনানে আবু দাউদ : ১৫৫১)।

আমাদের উচিত জবানের সঠিক ব্যবহারের প্রতি সচেতন ও যত্নবান হওয়া এবং এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা।

ট্যাগস :

জবানের অপব্যবহারের পরিণাম

আপডেট সময় : ০১:৪৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

রাসূল (সা.) আমাদের জন্য আদর্শ। কথা-বার্তা, চাল-চলন, কাজ-কর্ম সব বিষয়ে তিনি কখনও অযথা অনর্থক কথা বলতেন না, এমনকি বলা পছন্দও করতেন না। শুধু উপকারী ও প্রয়োজনীয় কথা বলতেন। তিনি দীর্ঘসময় নীরব থাকতেন।

হাদিসে এসেছে : রাসূল (সা.) দীর্ঘসময় চুপ থাকতেন এবং কম হাসতেন। (মুসনাদে আহমাদ : ২০৮১০)। সরাসরি মিথ্যা, গালমন্দ, অশ্লীল কথা এগুলো থেকে আমরা অনেকেই বিরত থাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় বেখেয়ালে মিথ্যা বলে ফেলি। যেমন কিছু দেওয়ার বাহানা করে ছোট বাচ্চাকে ডাকা হলো অথচ আহ্বানকারীর কাছে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। এটি মিথ্যার শামিল।

উম্মে আবদুল্লাহ ইবনে আমের রা. ছোট বাচ্চাকে কিছু দেওয়ার কথা বলে ডাকছিলেন। রাসূল (সা.) বিষয়টি লক্ষ করলেন। বললেন, তুমি কি তাকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকছ (নাকি কিছু দেওয়ার বাহানা করে তাকে কাছে ডাকছ?)। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তাকে খেজুর দেওয়ার জন্য ডাকছি। তখন নবীজী বললেন : জেনে রাখ, তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে, তাহলে তোমার গুনাহের খাতায় একটি মিথ্যা লেখা হতো। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯১)।

গল্প-গুজব, হাসি-তামাশা ও রসিকতার ছলে অনেক সময় আমরা অলীক, অবাস্তব ও উদ্ভট কথা বলে ফেলি। এমনকি কখনো কখনো মিথ্যাও হয়ে যায়। এ সমস্যাটি ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সর্বশ্রেণির মানুষের মাঝে মহামারির আকার ধারণ করেছে। কারণ রসিকতায় শ্রোতাদের হাসানোই থাকে মুখ্য বিষয়। তাই মিথ্যা, অলীক, অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক কথা বলার প্রবণতা থাকে। এমনকি এসব নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। অথচ মিথ্যাকে আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যম বানানো মারাত্মক গুনাহ। এর পরিণাম অনেক ভয়াবহ। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : ধ্বংস ওর! যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে। ধ্বংস ওর! ধ্বংস ওর জন্য!! (মুসনাদে আহমাদ : ২০০২১)।

কারো কারো মাঝে কথায় কথায় লানত-বদদোয়া দেওয়ার অভ্যাস থাকে। বিশেষভাবে নারীদের মাঝে। অনেক সময় তারা আপনজন এমনকি নিজ সন্তানকেও বদদোয়া দিয়ে চলে। হতে পারে তখন দুআ কবুলের মুহূর্ত ছিল। ফলে খাল কেটে কুমির আনার মতো অবস্থা হয়। বদদোয়াটা লেগে যায়। এটা খুবই গর্হিত কাজ। জবানের মারাত্মক অপব্যবহার। তাই এ ব্যাপারে আমাদের হুঁশিয়ার থাকা উচিত।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা একে অপরকে লানত করো না; বলো না- তোমার ওপর আল্লাহর লানত হোক, তোমার ওপর আল্লাহর গজব পড়ুক, তুমি জাহান্নামে যাও। (জামে তিরমিযী : ১৯৭৬)।

জবানের অপব্যবহারের আরেকটি ক্ষেত্র হলো, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ, গীবত-অপবাদ ইত্যাদি। আমাদের কারো কারো কথাবার্তার বড় একটা অংশ থাকে তৃতীয় ব্যক্তিকে নিয়ে। হয়তো কারো দোষ চর্চা করা, না হয় কাউকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা অথবা কারো ব্যাপারে মন্দ বলা বা অপবাদ আরোপ করা। অথচ কুরআন-হাদিস এগুলো থেকে শক্তভাবে বারণ করেছে। এগুলো প্রত্যেকটাই কবীরা গুনাহ। পাশাপাশি জবানের অপব্যবহারেরও শামিল।

জবানের অপব্যবহার মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। দীর্ঘ এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত মুআয রা. রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন : কথার কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? (মুখের কথার কারণেও কি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে?) তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মুআজ রা.-এর উরুতে মৃদু আঘাত করে বললেন : হে মুআয! তুমি এ বিষয়টি বুঝ না! আরে, মানুষকে তো তার জবানের কথাই উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। যে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী সে যেন ভালো কথা বলে বা অন্তত মন্দ কথা থেকে বিরত থাকে। তোমরা ভালো কথা বল, লাভবান হবে। মন্দকাজ থেকে বিরত থাক, নিরাপদ থাকবে। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৭৭৭৪)।

রাসূল (সা.) জবানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। কত পূত-পবিত্র তাঁর জবান! যে জবান আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার কাছে ওহী পৌঁছায় এবং আল্লাহর কালামের ব্যাখ্যা দান করে। এ জবানের পবিত্রতা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন : সে তার নিজ খেয়াল-খুশি থেকে কিছু বলে না। এ তো ওহী, যা তার কাছে পাঠানো হয়। (সূরা আননায্ম : ৩-৪)। তা সত্ত্বেও রাসূল (সা.) বিনয়কাতর হয়ে আল্লাহর কাছে জবানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন : হে আল্লাহ! আমি আমার কান, চোখ, জবান, হৃদয় এবং লজ্জাস্থানের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। (সুনানে আবু দাউদ : ১৫৫১)।

আমাদের উচিত জবানের সঠিক ব্যবহারের প্রতি সচেতন ও যত্নবান হওয়া এবং এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা।