গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিনকে নৃশংস হত্যা: দ্রুত বিচার ও সাংবাদিক নিরাপত্তা আইনের দাবিতে সারা দেশে প্রতিবাদ
সাংবাদিক তুহিন হত্যা: পাঁচজন আটক, সারাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিক্ষোভের ডাক
- আপডেট সময় : ০৩:৩১:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৩১১ বার পড়া হয়েছে
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮)। এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ অন্তত পাঁচজনকে আটক করেছে। তবে পুরো ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া একপক্ষের বক্তব্যের ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়া না চালানোর দাবি উঠেছে সাংবাদিক মহলে।
ঘটনা যেমন ঘটেছে
শুক্রবার সন্ধ্যায় পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় এক যুবক প্রকাশ্যে এক তরুণীকে মারধর করছেন। এসময় ৬-৭ জন সশস্ত্র যুবক চাপাতি, রামদা ও ছুরি নিয়ে ওই যুবকের দিকে ধেয়ে আসে।
ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুর প্রতিনিধি তুহিন। হামলার ভিডিও ধারণ করতে দেখে হামলাকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাওয়া করে। প্রাণ বাঁচাতে তুহিন স্থানীয় ঈদগাহ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানে গিয়েই হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
চায়ের দোকানের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন,
> “তুহিন ভাই দোকানে ঢুকেই বললেন ‘আমাকে বাঁচান’। কিন্তু পাঁচ-ছয়জন লোক চাপাতি নিয়ে ঢুকে পড়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আমি থামাতে গেলে তারা গালাগালি করে হুমকি দেয়। পরে আমি ভয়ে লুকিয়ে পড়ি।”
—
পুলিশের বক্তব্য
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম-উত্তর) মো. রবিউল হাসান বলেন,
> “আমাদের ধারণা একজনকে মারধরের ভিডিও ধারণ করায় তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে, দ্রুতই গ্রেপ্তার হবে।”
বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম ও অপর একজন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছেন। আটক পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
—
শোক ও ক্ষোভ
নিহতের ভাই মো. সেলিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
> “আমার ভাইকে কেন হত্যা করা হলো? তার স্ত্রী ও সন্তান এখন নিরাপত্তাহীনতায়। আমি দ্রুত বিচার চাই।”
—
প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ডাক
হত্যাকাণ্ডের পর গাজীপুরের সাংবাদিকরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন জানিয়েছে
> “এটি শুধু একজন সাংবাদিককে হত্যা নয়, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের ভয়ংকর উদাহরণ। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
আগামীকাল শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় সারাদেশে একযোগে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দৈনিক আস্থা নিশ্চিত করেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
—
সাংবাদিক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের দাবি
বাংলাদেশে গত দুই দশকে প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক খুন হয়েছেন, শত শত সাংবাদিক হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। অথচ এখনো কোনো সাংবাদিক নিরাপত্তা আইন কার্যকর হয়নি। সাংবাদিক সংগঠনগুলো বলছে—
> “প্রতিবারই তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ হয়, কিছুদিন পরে সব চুপচাপ। এবার আর সেটা হতে দেওয়া যাবে না। এখনই সাংবাদিক নিরাপত্তা আইন করতে হবে।”
—
দৈনিক আস্থার অবস্থান
আমরা মনে করি এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি। সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি এবং মাঠের সব তথ্য যাচাই না করে কেবল একপক্ষের বক্তব্যে আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে গেলে তা ন্যায়বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের নিরাপত্তা দুইই দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। তুহিন হত্যার বিচার হোক দ্রুততম সময়ে, আর যেন কোনো সংবাদকর্মীর কলম রক্তে ভিজে না যায়।
এমএইচ মানিক,
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী