কিশোরগঞ্জে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এর ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারী আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের আটক করেছে পুলিশ।
রবিবার (২ জুন) রাত ১০ টার দিকে শহরের পূর্ব তারাপাশা এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয় ।
আটককৃতরা হলেন বিজিবির ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারী ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার ডৌহখনা কাদিরন এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে আবুল খায়ের, কিশোরগঞ্জের গাইটাল নামাপাড়া এলাকার শরীফ উদ্দিনের ছেলে রুবেল মিয়া, লতিফাবাদ ইউপির চরপাড়া এলাকার আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে মো. বিল্লাল ও বৌলাই ইউপির দক্ষিণ রাজকুন্তি এলাকার আবু তালেবের ছেলে মো. তাজুল ইসলাম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ফজলুল হকের স্ত্রী কিশোরগঞ্জ টিটি কলেজের প্রভাষক রেদুয়ানা আক্তার জেসমিনের নামে যশোদল দামপাটুলী এলাকায় ৬৯ শতাংশ জায়গায় হক পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। তারা জমিসহ এ পোল্ট্রি ফার্মটি বিক্রি করার চেষ্টা করে আসছেন।
গত ২২ মে দুপুরে ৪ জন অপরিচিত ব্যক্তি ওই শিক্ষকের পোল্ট্রি ফার্মে আসেন। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে বিজিবির লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয় দেন এবং প্রমাণ হিসেবে তার মোবাইলে বিজিবির ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি দেখান। এ সময় ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়ধারী আবুল খায়ের ওই শিক্ষকের হক পোলট্রি ফার্মটি কিনবেন বলে জানান। পোল্ট্রি ফার্মটি তার খুব পছন্দ হয়েছে বলে জানায়।
অভিযুক্ত বাকি ৩ জন ওই শিক্ষককে বলেন, ‘স্যার প্রচুর টাকার মালিক। টাকার জন্য আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। পরে ওই শিক্ষক তাদের কথায় বিশ্বাস করে তাদেরকে পূর্ব তারাপাশা কাজী বাড়ি এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যান। এ সময় অভিযুক্তরা শিক্ষকের বাসায় বসে জায়গার যাবতীয় কাগজপত্র দেখে ফটোকপি তাদেরকে দিতে বললে শিক্ষক তাদেরকে কাগজ পত্রের ফটোকপি দেন। একই সঙ্গে জায়গার দরদাম ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেন। পরে অভিযুক্তরা ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিক্ষকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান।
পরের দিন ২৩ মে দুপুর সাড়ে ১২টার সময় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষককে ফোন করে শহরের গাংচিল রেস্টুরেন্টের দু-তলায় আসতে বললে তিনি তাদের কথা মতো আসেন। রেস্টুরেন্টে বসে তারা দুপুরের খাওয়া দাওয়া করেন। তখন ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারী আবুল খায়ের ওই শিক্ষকের ব্যাংকের লোনের লাভ ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা মওকুফ করে দেবেন বলে ওই শিক্ষকের স্ত্রীর কাছ থেকে একটি দরখাস্ত নেন এবং ইসলামী ব্যাংক লি. এর প্রধান শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা মওকুফ হয়েছে বলে জানান।
এ সময় হেড অফিসের ফাইল প্রসেসিং এর খরচ দেখিয়ে শিক্ষকের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে নগদ ১৬ হাজার টাকা নেন। এভাবে অভিযুক্তরা শিক্ষকের বিশ্বাস অর্জন করতে থাকেন। অভিযুক্তরা শিক্ষকের অর্থ-সম্পদ কেমন আছে তা গোপনে পর্যবেক্ষণ করে তাদের টোপে ফেলানোর চেষ্টা করতে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত ২৪ মে বিকেল ৫ টার দিকে শিক্ষকের বাসায় যান। এ সময় তারা ওই শিক্ষককে এসি গাড়ি যোগে নেত্রকোণা যাওয়ার জন্য বার বার প্রস্তাব দেন এবং নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভুক্তভোগী শিক্ষক তার শরীর ভালো না থাকায় তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় অভিযুক্তরা ঐদিন রাতে শিক্ষকের বাসায় রাত্রী যাপন করেন এবং পরের দিন ২৫ মে সকাল ১০ টার দিকে অভিযুক্তদের আমিন দিয়ে জায়গা মেপে বুঝে নেন এবং শিক্ষকের বাসায় দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে পরের দিন জমি রেজিস্ট্রি করার কথা বলেন। ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয় দানকারী তার সঙ্গে থাকা লোকদেরকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে শিক্ষকের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা চান ভুক্তভোগী শিক্ষক অভিযুক্ত আবুল খায়েরকে ২২ হাজার টাকা দেন।
অভিযুক্তরা যাওয়ার পর ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারীর দেওয়া বিকাশ নম্বর চেক করে ভুক্তভোগী শিক্ষক দেখতে পান বিকাশ নম্বরটি ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয় দেওয়া আবুল খায়েরের নিজের। তখন ভুক্তভোগী শিক্ষক ফজলুল হক বুঝতে পারেন অভিযুক্তরা তার সঙ্গে প্রতারণা করছেন।প্রতারণার বিষয়টি বোঝার পরও তাদের সঙ্গে ওই শিক্ষক স্বাভাবিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার ২ জুন রাত ৯ টার দিকে অভিযুক্তরা জমির বায়া দলিল ও কিছু খরচের টাকা নেয়ার জন্য পুনরায় ওই শিক্ষকের বাড়িতে আসলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের আটক করেন। আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযুক্তরা ভুয়া পরিচয় প্রদান এবং তাদের প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। প্রকৃতপক্ষে তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দলের সক্রিয় সদস্য। এ ঘটনায় মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যাবস্থাও নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।