কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে জলমহালে টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছে বাজিতপুরের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জুর ছোট ভাই আবু বকর সিদ্দিক ডালহৌসি, মঞ্জুর দুই ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মামুন ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল মিয়ার।
গত ২৭ অক্টোবর জেলা শহরের জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে উপজেলার ‘বেংলা চরাবাদা জলমহাল’ দখলের অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন বাজিতপুর উপজেলার দীঘিরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম, কাইমের বাউলী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন চন্দ্র দাস ও সুভারামপুর গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা অভিযোগ করেন বাজিতপুরে ‘বেংলা চরাবাদা জলমহাল’ নামে ১হাজার ৩৬৩ একর আয়তনের একটি সরকারি জলমহাল রয়েছে। এটি বার্ষিক ৫৪লাখ ৩১ হাজার টাকা হারে ১৪৩১ বঙ্গাব্দ থেকে ১৪৩৬ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ইজারা নেয় কাইয়ের বাউলী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। সমিতির এত টাকা না থাকায় দীঘিরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর কাইয়ুম ও আনিছুর রহমান মৎস্যজীবী সমিতির সঙ্গে একটি চুক্তিপত্র করেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যান ও আনিছুর জলমহালের ৬০ ভাগ লভ্যাংশের মালিক আর বাকি ৪০ ভাগের মালিক মৎস্যজীবী সমিতি। এছাড়া এই জলমহালে গত ৫মাসে তাঁরা ১কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা খরচ করেছে বলে অভিযোগ করেন।
অথচ জলমহালের এইসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাইমের বাউলী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শ্রী দ্বীপক চন্দ্র দাস তিনি বলেন, বেংলা চরাবাদা জলমহালটি গত ০৪ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয় হতে ছয় বছরের জন্য ছয়চল্লিশ লক্ষ বিরাশি হাজার আটশত উনত্রিশ টাকা চালান মূলে সরকারের কাছ থেকে আমি লীজ গ্রহণ করি। পরে অর্থ সংকটে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন (নিকলী-বাজিতপুর) এর সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের অর্থায়নে জলমহালটি আমার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
পরবর্তীতে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর এমপি আফজাল হোসেন আত্মগোপনে গেলে সেই সুযোগে জলমহালটি দখলে নিতে একটি কুচক্রী মহল পায়তারা শুরু করে তখন আমি আমার লীজকৃত জলমহালটি টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শক্রমে অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জুর ছোট ভাই আবু বকর ছিদ্দিক ডালহৌসি ও মঞ্জু পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান মামুনের শরণাপন্ন হলে আবু বকর ছিদ্দিক ডালহৌসি ও তাঁর ভাতিজা মোস্তাফিজুর রহমান মামুন আমার কাগজপত্রের বৈধতা দেখে আমার সাথে ৬বছর মেয়াদে একটি লীজের চুক্তিপত্র করেন। যাহার- স্ট্যাম্প নং- খল ১৫৫১৪৭৪, খল ১৫৫১৪৭৬, খল ১৫৫১৪৭৭। চুক্তিপত্রে লীজদাতা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক সুজন চন্দ্র দাসের স্বাক্ষর স্পষ্ট আছে। এখন একটি কুচক্রী মহল প্রয়াত এমপি মঞ্জু পরিবারের সুনাম নষ্ট করতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গত ২৬ অক্টোবর জেলা শহরের জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে একটি মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে’।
সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন চন্দ্র দাসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে এমপি আফজাল হোসেন আমাদের সমিতির সভাপতির মাধ্যমে আনিছসহ আরও কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেংলা চরাবাদা জলমহালে অর্থবিনিয়োগ করেন। সরকার পতনের পর এমপি আফজাল আত্মগোপনে গেলে আনিছসহ বিনিয়োগকরী অন্যান্যরা সমিতির সভাপতির কাছে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত চাইলে তিনি বলেন, আমি সরকারের থেকে লিজ নিয়েছি। এমপি সাহেব জলমহালে আমার মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগ করেছে। তিনি কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সেটা আমার জানার বিষয় না। সভাপতির এই কথার কারণেই আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি’।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান মামুন বলেন, ‘রাজনৈতিক ভাবে হেনস্থা করার জন্য একটি কুচক্রী মহল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমাদের এই নদীতে অর্থ বিনিয়োগের কারণ হচ্ছে সরকারের কাছ থেকে যিনি লীজ নিয়েছেন শ্রী দ্বীপক চন্দ্র দাস এই নদী পরিচালনা করার জন্য আমাদের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চাইলে আমরা তাঁর সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে উনার লীজকৃত নদীতে আমরা সম্পৃক্ত হই এবং অর্থ বিনিয়োগ করে আসছি’।
বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারাশিদ এনাম বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসক আমাকে অবহিত করেছেন। সরকার জলমহাল ইজারা দেয় একটি মৎস্যজীবী সমিতিকে। এর পর সমিতি অন্য কাউকে শেয়ার দিলে সেটি প্রশাসনের দেখার বিষয় না।