ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল

কাটিয়াদীতে অদক্ষ জনবল আর পরিত্যক্ত যন্ত্রে চলছে চিকিৎসা সেবা

Doinik Astha
Doinik Astha
  • আপডেট সময় : ১০:৫০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১২৫২ বার পড়া হয়েছে

রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল। ছবি: আস্থা

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ১১ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল। অদক্ষ জনবল, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ও মানহীন যন্ত্রপাতি দিয়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন স্থানীয় রোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এক্স-রে, ইসিজি, রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে নামমাত্র টেকনিশিয়ানদের দিয়ে। ল্যাব পিয়ন, আয়া, এমনকি বাবুর্চির মতো অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হাতে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মীর অধিকাংশের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

আরও জানা গেছে, ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আনা পরিত্যক্ত এক্স-রে মেশিন ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে রোগীরা অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে আল্ট্রাসনোগ্রাআল্ট্রাসনোগ্রাম রুমের পাশের কক্ষে বসানো হয়েছে এক্স-রে মেশিন এতে করে এক্স-রের বিকিরণে গর্ভবতী নারীরা বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মালিকপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নবায়ন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রচলিত নিয়মে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছর নবায়ন ও পরিদর্শন বাধ্যতামূলক।

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো পরিদর্শন হয়নি। পরবর্তীতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দায়সারা পরিদর্শনের মাধ্যমে একত্রে নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

বর্তমান আইন অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনার জন্য হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সনদ, ভ্যাট নিবন্ধন, পরিবেশ ছাড়পত্র, নারকোটিক পারমিট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চুক্তি বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি অন্তত একজন টেকনোলজিস্ট ও দুজন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান থাকা আবশ্যক। এছাড়া এনেস্থেসিয়া বা অপারেশন থিয়েটারে অনিবন্ধিত ডাক্তার রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল এসব কোনো শর্তই পূরণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ যোবায়েদ সুমন বলেন, ‘কাটিয়াদীতে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি পুরনো। কাগজপত্র সব আপডেট করা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আমরা আবেদন করেছি। তবে ভবনটি মূলত ডায়াগনস্টিকের জন্য উপযুক্ত নয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় এখানেই দীর্ঘ ১১ বছর ধরে স্থানীয়দের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অভিজিৎ শর্মা জানান, ‘রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল নিয়ে আরও অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর লাইসেন্সবিহীন এবং নিয়ম অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল

কাটিয়াদীতে অদক্ষ জনবল আর পরিত্যক্ত যন্ত্রে চলছে চিকিৎসা সেবা

আপডেট সময় : ১০:৫০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ১১ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল। অদক্ষ জনবল, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ও মানহীন যন্ত্রপাতি দিয়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন স্থানীয় রোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এক্স-রে, ইসিজি, রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে নামমাত্র টেকনিশিয়ানদের দিয়ে। ল্যাব পিয়ন, আয়া, এমনকি বাবুর্চির মতো অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হাতে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মীর অধিকাংশের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

আরও জানা গেছে, ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আনা পরিত্যক্ত এক্স-রে মেশিন ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে রোগীরা অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে আল্ট্রাসনোগ্রাআল্ট্রাসনোগ্রাম রুমের পাশের কক্ষে বসানো হয়েছে এক্স-রে মেশিন এতে করে এক্স-রের বিকিরণে গর্ভবতী নারীরা বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মালিকপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নবায়ন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রচলিত নিয়মে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছর নবায়ন ও পরিদর্শন বাধ্যতামূলক।

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো পরিদর্শন হয়নি। পরবর্তীতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দায়সারা পরিদর্শনের মাধ্যমে একত্রে নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

বর্তমান আইন অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনার জন্য হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সনদ, ভ্যাট নিবন্ধন, পরিবেশ ছাড়পত্র, নারকোটিক পারমিট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চুক্তি বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি অন্তত একজন টেকনোলজিস্ট ও দুজন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান থাকা আবশ্যক। এছাড়া এনেস্থেসিয়া বা অপারেশন থিয়েটারে অনিবন্ধিত ডাক্তার রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল এসব কোনো শর্তই পূরণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ যোবায়েদ সুমন বলেন, ‘কাটিয়াদীতে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি পুরনো। কাগজপত্র সব আপডেট করা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আমরা আবেদন করেছি। তবে ভবনটি মূলত ডায়াগনস্টিকের জন্য উপযুক্ত নয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় এখানেই দীর্ঘ ১১ বছর ধরে স্থানীয়দের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অভিজিৎ শর্মা জানান, ‘রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল নিয়ে আরও অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর লাইসেন্সবিহীন এবং নিয়ম অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’