বৃষ্টির কারণে হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কে নির্মাণাধীন ব্রিজের ৩টি বিকল্প রাস্তা ভেঙে পড়ায় মূল সড়কের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে বাস-ট্রাক ও যাত্রী পরিবহন করা যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ সড়কে যাতায়াতকারী। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে অফিসগামী, শিক্ষার্থী ও ব্যাবসায়ীরা।
বিকল্প রাস্তা হিসেবে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে দশ মিনিটের রাস্তা গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে এক ঘণ্টারও বেশি। সেখানেও ঘটছে যানজট ও ছোটখাটো দুর্ঘটনা। দুই কিলোমিটার দূরে যেতে পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। এতে ভাড়াগুণতে হচ্ছে তিনগুণ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অব্যাবস্থাপনার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। শুধু যাতায়াতকারী নয় হুমকির মুখে কৃষকের বিস্তীর্ণ বোরো ধান। কবে নাগাদ যান চলাচল স্বাভাবিক হবে তা সঠিকভাবে জানাতে পারেনি কেউ। এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বলছে, হঠাৎ গত কয়েকদিন থেকে অতিবৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃষকের ধান ক্ষেত ডুবে গেছে। ফলে ক্ষুদ্ধ কৃষকরা নিজেরাই বিকল্প রাস্তা ভেঙে দেয়ায় ওই সড়কে
যাতায়াত বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, হিলি-ঘোড়াঘাট ২৬ কিলোমিটারের সড়কটি প্রশস্তকরণ ও জরাজীর্ন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ ও বাজার অংশে রিজিড পেভমেন্ট ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল প্রাইভেট লিমিটেড। হিলি-ঘোড়াঘাট সড়ক প্রশস্তকরণসহ ২৯টি ব্রিজ পুনঃনির্মানের কাজ চলছে দ্বিতীয় মেয়াদে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে মাটি ভরাট করে ব্রিজগুলোর বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করেন ঠিকাদার। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হয়ে কৃষকের বিস্তৃর্ণ ধান ক্ষেত। পানির নিচে কৃষকের স্বপ্নের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন । ধান বাঁচাতে উপয়ন্ত না পেয়ে বিকল্প রাস্তার কিছু অংশ কেটে দেন। তবে পানির তীব্র গতির করণে রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।
সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা য়ায়, হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের হাকিমপুর উপজেলার জালালপুর তুলশীঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন পার্শ্বরাস্তা, বাওনা ব্রিজের পার্শ্বরাস্তা ও ডুগডুগির হাট ব্রিজের পার্শ্বরাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বাংলাহিলি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার মহিমা জানান, তার বাড়ি থেকে স্কুল তিন কিলোমিটার। প্রতিদিন স্কুলে আসতে দশ টাকা অটো ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু জালালপুর ব্রিজের পার্শ্বরাস্তা ভেঙে যাওয়ায় মোল্লাবাজার দিয়ে অটোতে আসতে হয়েছে। এতে ১৫ মিনিটের রাস্তা আসতে একঘণ্টারও বেশি সময় লেগছে। আর ভাড়াগুণতে হচ্ছে ত্রিশ টাকা।
দিনাজপুর বাস মটরশ্রমিক পরিবহন ইউনিয়নের হাকিমপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন ক্ষুদ্ধ প্রকাশ করে জানান, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় দু’দিন হল হিলি-বগুড়া সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে জানান, ঠিকাদার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে শুধু মাটি ভরাট করে বিকল্প রাস্তা তৈরি করেছে। এখন বর্ষা রাস্তা ভেঙে গেছে। এর দায় ঠিকাদার ও সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
উপজেলার রাউতার গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, জালালপুর ব্রিজের উত্তর পাশের ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছে। ফলন ও বাম্পার হয়েছে। আর মাত্র সপ্তাহখানেক পর ফসল ঘরে তুলবেন। কিন্তু ব্রিজের পাশেররাস্তায় পানি যাওয়ার ব্যাবস্থা না থাকায় বৃষ্টির কারণে ধান তলিয়ে গেছে। এতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অমিত রায় জানান, রোববার রাতে অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের ফসল পানির নিচে ডুবে যায়। তাই কৃষকের ফসল বাঁচাতে পরদিন সোমবার রাতে জালালপুর ব্রিজের বিকল্প রাস্তার কিছু অংশ কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সেটি ছিল খুবই সামান্য । কিন্তু পানির গতি তীব্রতার কারণে সেটি এখন অনেকটা ভেঙে গেছে। তবে ঠিকাদার ও সওজ কর্তৃপক্ষকে সমস্যা সমাধানে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকাবাল প্রাইভেটন লিমিটেড এর প্রকল্প ব্যাবস্থাপক আনিছুর রহমান জানান, বিকল্প রাস্তায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা আছে। তবে অতি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা বৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন স্থান ভেঙে গেছে আবার কোন কোন স্থানে কৃষকরা নিজেরাই ভেঙে দিয়েছে। তবে ভাঙা বিকল্প রাস্তাগুলোতে অস্থায়ী বেইলী ব্রিজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রাহণ করা হয়েছে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর উপ-প্রকৌশলী তাওহিদ- উর রহমান জানান, ইতোমধ্যে খবর পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সড়কটি পরিদর্শন করা হয়েছে। ঠিকাদারকে অস্থায়ী বেইলী ব্রিজ নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে পানির স্রোতের তীব্রতার কারণে কাজটি শুরু করতে সময় লাগছে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানের নিকট একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।