ঢাকা ১২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার Logo রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ Logo নভেম্বরের ৯ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ৪৮.৭ শতাংশ বৃদ্ধি Logo ত্যাগ, নৈতিকতা নাকি দলীয় বলয়; কিশোরগঞ্জের ফাঁকা দুই আসনে কোন পথ বেছে নেবে রাজনীতি? Logo নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: ক্ষমতার লোভে পেয়েছে উপদেষ্টাদের Logo খাগড়াছড়ি কারাগার থেকে পালিয়েছে দুই আসামি Logo পানছড়িতে যুবদলের সাংগঠনিক সভা অনুষ্টিত Logo খাগড়াছড়িতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত Logo ইমানের হেফাজত করতে চাইলে জামায়াতে ইসলামী থেকে দূরে থাকতে হবে: আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী Logo ভারতে পাচার কালে বাংলাদেশী পণ্য আটক করেছে বিজিবি

প্রার্থীর নৈতিকতা ও জনপ্রিয়তা হবে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের নির্ণায়ক, দলীয় ভুলে পরাজয়ের আশঙ্কা

ত্যাগ, নৈতিকতা নাকি দলীয় বলয়; কিশোরগঞ্জের ফাঁকা দুই আসনে কোন পথ বেছে নেবে রাজনীতি?

Doinik Astha
Doinik Astha
  • আপডেট সময় : ১২:৩৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১০৭৬ বার পড়া হয়েছে

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের দুইটি আসন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) ও কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ভোটারদের মনোভাবেও দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট পরিবর্তন। দলীয় আনুগত্য বা জনপ্রিয়তার চেয়ে এবার তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রার্থীর নৈতিকতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধে।

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে মাঠে থাকা কিছু নেতাকর্মীর চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, ভূমিদস্যুতা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড রাজনীতির মাঠে নৈতিক অবক্ষয় ডেকে এনেছে। ফলে সাধারণ ভোটাররা এখন দলীয় জনপ্রিয়তার চেয়ে নীতি, সততা ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্বের প্রতিই আস্থা রাখছেন।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ ছাড়া রাজনৈতিক বড় দল হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।  গত, ৩ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। তবে কিশোরগঞ্জ-১ ও কিশোরগঞ্জ-৫ আসন দুটি ফাঁকা রাখা হয়। যা স্থানীয় রাজনীতিতে নানামুখী আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের রয়েছে এক বিশেষ ঐতিহ্য। এখানকার ভোটাররা খোদাভিরু, ধার্মিক ও রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ব। দলীয় আনুগত্যের চেয়ে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা ও সামাজিক মর্যাদাকেই তারা প্রধান বিবেচনায় রাখেন।

রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, সাত দশক ধরে এই আসনে ভোটাররা দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে নীতিনিষ্ঠ, মার্জিত ও যোগ্য নেতৃত্বকে সমর্থন দিয়েছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে মেম্বার অব ন্যাশনাল এসেম্বলি (এমএনএ) নির্বাচিত হন মাওলানা আতহার আলী (রহ.)। সে সময় আওয়ামী লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি, নেজামে ইসলাম ও অন্যান্য বাম দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে নেজামে ইসলামের প্রধান হিসেবে তিনি বই প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিপক্ষ ছিলেন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)-এর ছাতা প্রতীকের মাওলানা সৈয়দ মুসলেহুদ্দীন (রহ.)। দুই প্রভাবশালী আলেমের ভোট বিভাজনের সুযোগে সামান্য ব্যবধানে জয় পান আওয়ামী লীগের সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই দুই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মাওলানার সম্মিলিত প্রাপ্ত ভোট ছিল বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে বেশি। দুই বুজুর্গ আলাদা না হলে কিশোরগঞ্জ সদর আসনে তাদের যে কোনো একজন পাস করতেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব এমপি হতে পারতেন না।

পরবর্তী সময়ে এই আসনে আওয়ামী লীগের এডভোকেট আবদুস সাত্তার, এডভোকেট আবদুল কুদ্দুস ও অধ্যাপক আবদুল গণি এমপি হন। আওয়ামী আমলে একদলীয় নির্বাচনে সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান পট্টু মিয়া সাহেবকে (সৈয়দ নজরুল সাহেবের ছোটো ভাই) পরাজিত করে নির্বাচিত হন জনপ্রিয় শিক্ষক আশরাফুদ্দীন আহমদ। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময় বিএনপির ডা. ফজলুল করিম নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হন।

১৯৮৬ সালের নির্বাচনে নির্দলীয় প্রার্থী মাওলানা আতাউর রহমান খান (রহ.) রিকশা প্রতীকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও কেন্দ্র দখল ও কারচুপির ঘটনায় পরাজিত ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের প্রস্তাব তিনি নীতিগত কারণে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি পুনরায় জয়ী হন, রাজনৈতিক সৌজন্যের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে ভোটাররা কখনোই একচেটিয়া রাজনীতি পছন্দ করেননি। বরং তাঁরা বারবার বেছে নিয়েছেন নীতি, সততা ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্বকে।

বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ভোটব্যাংক এক রহস্যে ঘেরা। ইসলামী রাজনৈতিক ধারার ভোট, নতুন তরুণ ভোটার এবং নারী ভোটারদের অংশগ্রহণই হতে পারে আসনের ফল নির্ধারণের মূল ফ্যাক্টর। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার ভোটই নির্ধারণ করবে চূড়ান্ত বিজয়-পরাজয়।

কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির জন্য সুযোগ তৈরি হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতা দলটির নির্বাচনী সম্ভাবনাকে হুমকিতে ফেলেছে। ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।

প্রার্থীর নৈতিকতা ও জনপ্রিয়তা হবে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের নির্ণায়ক, দলীয় ভুলে পরাজয়ের আশঙ্কা

ত্যাগ, নৈতিকতা নাকি দলীয় বলয়; কিশোরগঞ্জের ফাঁকা দুই আসনে কোন পথ বেছে নেবে রাজনীতি?

আপডেট সময় : ১২:৩৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের দুইটি আসন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) ও কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ভোটারদের মনোভাবেও দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট পরিবর্তন। দলীয় আনুগত্য বা জনপ্রিয়তার চেয়ে এবার তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রার্থীর নৈতিকতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধে।

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে মাঠে থাকা কিছু নেতাকর্মীর চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, ভূমিদস্যুতা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড রাজনীতির মাঠে নৈতিক অবক্ষয় ডেকে এনেছে। ফলে সাধারণ ভোটাররা এখন দলীয় জনপ্রিয়তার চেয়ে নীতি, সততা ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্বের প্রতিই আস্থা রাখছেন।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ ছাড়া রাজনৈতিক বড় দল হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।  গত, ৩ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। তবে কিশোরগঞ্জ-১ ও কিশোরগঞ্জ-৫ আসন দুটি ফাঁকা রাখা হয়। যা স্থানীয় রাজনীতিতে নানামুখী আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের রয়েছে এক বিশেষ ঐতিহ্য। এখানকার ভোটাররা খোদাভিরু, ধার্মিক ও রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ব। দলীয় আনুগত্যের চেয়ে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা ও সামাজিক মর্যাদাকেই তারা প্রধান বিবেচনায় রাখেন।

রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, সাত দশক ধরে এই আসনে ভোটাররা দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে নীতিনিষ্ঠ, মার্জিত ও যোগ্য নেতৃত্বকে সমর্থন দিয়েছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে মেম্বার অব ন্যাশনাল এসেম্বলি (এমএনএ) নির্বাচিত হন মাওলানা আতহার আলী (রহ.)। সে সময় আওয়ামী লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি, নেজামে ইসলাম ও অন্যান্য বাম দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে নেজামে ইসলামের প্রধান হিসেবে তিনি বই প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিপক্ষ ছিলেন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)-এর ছাতা প্রতীকের মাওলানা সৈয়দ মুসলেহুদ্দীন (রহ.)। দুই প্রভাবশালী আলেমের ভোট বিভাজনের সুযোগে সামান্য ব্যবধানে জয় পান আওয়ামী লীগের সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই দুই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মাওলানার সম্মিলিত প্রাপ্ত ভোট ছিল বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে বেশি। দুই বুজুর্গ আলাদা না হলে কিশোরগঞ্জ সদর আসনে তাদের যে কোনো একজন পাস করতেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব এমপি হতে পারতেন না।

পরবর্তী সময়ে এই আসনে আওয়ামী লীগের এডভোকেট আবদুস সাত্তার, এডভোকেট আবদুল কুদ্দুস ও অধ্যাপক আবদুল গণি এমপি হন। আওয়ামী আমলে একদলীয় নির্বাচনে সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান পট্টু মিয়া সাহেবকে (সৈয়দ নজরুল সাহেবের ছোটো ভাই) পরাজিত করে নির্বাচিত হন জনপ্রিয় শিক্ষক আশরাফুদ্দীন আহমদ। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময় বিএনপির ডা. ফজলুল করিম নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হন।

১৯৮৬ সালের নির্বাচনে নির্দলীয় প্রার্থী মাওলানা আতাউর রহমান খান (রহ.) রিকশা প্রতীকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও কেন্দ্র দখল ও কারচুপির ঘটনায় পরাজিত ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের প্রস্তাব তিনি নীতিগত কারণে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি পুনরায় জয়ী হন, রাজনৈতিক সৌজন্যের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে ভোটাররা কখনোই একচেটিয়া রাজনীতি পছন্দ করেননি। বরং তাঁরা বারবার বেছে নিয়েছেন নীতি, সততা ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্বকে।

বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ভোটব্যাংক এক রহস্যে ঘেরা। ইসলামী রাজনৈতিক ধারার ভোট, নতুন তরুণ ভোটার এবং নারী ভোটারদের অংশগ্রহণই হতে পারে আসনের ফল নির্ধারণের মূল ফ্যাক্টর। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার ভোটই নির্ধারণ করবে চূড়ান্ত বিজয়-পরাজয়।

কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির জন্য সুযোগ তৈরি হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতা দলটির নির্বাচনী সম্ভাবনাকে হুমকিতে ফেলেছে। ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।