আজ ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০’ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রিভিউ পিটিশনের বহুল আলোচিত শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষমেশ তা হয়নি। আদালত হঠাৎ করেই শুনানি স্থগিত করে “One week after vacation” সময় নির্ধারণ করেছে।
এই শুনানি স্থগিতাদেশকে কেন্দ্র করে দেশপ্রেমিক মহলে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, দেশবিরোধী একটি কুচক্রী মহল সুপরিকল্পিতভাবে এই মৃত আইনকে পুনরুজ্জীবিত করার অপচেষ্টা করছে, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে সংবিধানের আওতার বাইরে পরিচালনা করা যায়।
এই ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বে রয়েছে সন্তু লারমা, প্রসীত বিকাশ খীসা, ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও মাইকেল চাকমা গং। তারা একযোগে আদালতের উপর চাপ প্রয়োগ করে ১৯০০ সালের ব্রিটিশ প্রণীত শাসনবিধিকে বৈধ ঘোষণা করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০: ইতিহাস ও বিচারিক পটভূমি
ব্রিটিশ শাসনের ধাঁচে বিশেষ মর্যাদা:
১৯০০ সালের ১ মে থেকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০’ কার্যকর হয়। এটি ছিল উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা, যা রাষ্ট্রীয় প্রচলিত আইনকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অকার্যকর করে তোলে। এটি বাংলাদেশের সংবিধান ও জাতীয় আইনের পরিপন্থী একটি মৃত আইন হিসেবে বিবেচিত।
বিচারালয় ভিন্নমত:
২০০৩ সালে রাঙামাটি ফুডস প্রোডাক্ট লিমিটেডের মামলায় হাইকোর্ট এই শাসনবিধিকে ‘ডেড ল’ ঘোষণা করে। তবে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের পৃথক দুটি রায়ে শাসনবিধিকে বৈধ ও কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়।
বাঙালিদের রিভিউ আবেদন:
২০১৮ সালে খাগড়াছড়ি জেলার আব্দুল আজিজ আখন্দ ও আব্দুল মালেক রিভিউ পিটিশন করেন। একাধিক শুনানির পর আদালত শাসনবিধিকে পুনরায় ‘ডেড ল’ হিসেবে রায় দেন—যা রাষ্ট্রীয় আইন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বহিরাগত চাপ ও পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্ত
পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো এখন এই মৃত আইন পুনর্বহালের জন্য হেডম্যান-কার্বারীদের মাধ্যমে জনমত গঠন ও জনসমাগম ঘটিয়ে আদালতের উপর চাপ প্রয়োগ করছে।
তিন চীফ সার্কেল (চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা) এর মধ্যে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
শাসনবিধি বহাল হলে সম্ভাব্য বিপর্যয়
ক. বাঙালিদের ভূমি অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে।
খ. রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।
গ. উপজাতিরা পার্বত্য অঞ্চলের একক ভূমির মালিক হবে।
ঘ. হেডম্যান-কার্বারী-চীফদের হাতে অসীম ক্ষমতা চলে যাবে।
ঙ. রাষ্ট্রের ভূমি নিয়ন্ত্রণ খর্ব হবে, বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দেবে।
চ. আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর উস্কানিতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে।
সতর্কবার্তা: পাহাড়ের জনগণ রেডি থাকুন!
সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই শুনানি স্থগিতাদেশ হঠাৎ নয়—বরং একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, সংবিধানের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পাহাড়ের জনগণ ও দেশের সচেতন নাগরিকদের এখনই প্রস্তুত ও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
এমকে/আইএ/আস্থা