দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। পুলিশের নীতিগত শ্লোগান সামনে রেখে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম যে কোন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ চ্যালেঞ্জের সাথে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে কাজ করছেন।
সম্প্রতি ভাঙ্গায় বেশ কয়েকটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি থেকে উন্নতীতে পুলিশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় বিষয়টি নজরে এসেছে সুশীল সমাজের।
ভাঙ্গা পৌরসভাসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চলমান সময়ে পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যরা (কনস্টেবল) চৌকস অফিসার ইন চার্জের নির্দেশনায় থানার অভ্যন্তরে অফিস সেবা ও বাহিরে দাঙ্গা ফ্যাসাদসহ বিবিধ ঘটনার দমনে করে সাধারণ জনগণের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও পুলিশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারানা পাল্টে দিচ্ছেন অভিমত সেবা গ্রহণকারী অসহায় ভুক্তভোগীদের।
স্থানীয় একাধীক সুত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ভাঙ্গা থানায় যোগদান করেন। তার যোগদানের শুরু থেকেই ভাঙ্গায় সাংবাদিক ও সুধী সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে মত বিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে তিনি সবার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন যে কোন পরিস্থিতিতে মাদক, জুয়ার আসরসহ আইনশৃখলার বিপরীতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার। পাশাপাশি এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বিশেষ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান), সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ যদি পুলিশের পাশাপাশি যে কোন ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগীতায় পুলিশের কাজের গতি আরও বেগবান হয়ে উঠবে বলে মনে করেন।
ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম ভাঙ্গা থানায় যোগদানের পর এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রাখতে সচেষ্ট ভূমিকা পালনে বদ্ধপরিকর হওয়ার সুবাধে রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছেন। বিশেষত ভাঙ্গা উপজেলা একটি দাঙ্গা প্রবণ এলাকা হিসেবে ঘারুয়া, আলগী, নুরুল্লাগঞ্জ, কালামৃধা ইউনিয়নগুলতে বিভিন্ন সময়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সঙ্ঘাত ও সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সাধারণ মানুষের জানমালের রক্ষায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ পরিবার।
এছাড়া বিভিন্ন মামলার দ্রুত তদন্তের অগ্রগতি, আদালতের তামিল পরোয়ানা আসামী গ্রেপ্তারসহ মাদকের ঘাটিতে পুলিশের হানা, জুয়ার আসরের খবর পেলে দ্রুত অভিযান পরিচালনায় ভাঙ্গায় পুলিশ সাধারণ মানুষের জন্য শান্তিপূর্ণ নিরাপত্তার পুলিশ হিসেবে জনগণের পাশে থেকে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলার রক্ষায়।
প্রায় তিন লক্ষাধীক জনগণের বসবাস ভাঙ্গা উপজেলায়। সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ভাঙ্গা মানুষের জন্য ভাঙ্গা থানা পুলিশ ষ্টেশন পুলিশ, হাইওয়ে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ পৃথকভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। উল্লেখিত থানাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ভাঙ্গা থানার পুলিশ প্রতিনিয়ত পালন করে আসছেন অভিমত এলাকাবাসীর। উল্লেখ না করলেই নয়- বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে কোটি কোটি মানুষের সপ্নের সৌন্দর্য বিলাস পদ্মা সেতু নির্মাণ করার পর জননেত্রী প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ভাঙ্গা একটি গুরুত্বপূর্ণ থানায় পরিণত হয়। ভাঙ্গা থানায় পুলিশের লোকবল সংখ্যা ভাঙ্গার জনগণের দিক থেকে কম হলেও ইউনিয়ন ভিত্তিক বিট পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা ও গোটা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ভিভিআইপি ও ভিআইপি প্রটোকল প্রদানে ভাঙ্গা থানা পুলিশ কাজ করছেন। এজন্য ভাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জের ভূয়সী প্রসংশা রয়েছে পুলিশের উচ্চ মহলে। এছাড়াও তিনি ২০২২ সালে শ্রেষ্ঠ অফিসার ইন চার্জ সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন ভাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার কারণে ফরিদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী ফরিদপুর থেকে।
সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার আলগী ইউনিয়নের বড় খাইদ্যা গ্রামে ধান কাঁটার অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বিবদমান দুটি দলের মধ্যে সঙ্ঘটিত সংঘাতে আলমগীর মাতুব্বর নামের একজন বৃদ্ধাকে মারধোর করায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের হলেও প্রতিপক্ষের অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের একাধীক ঘটনা ঘটে। অপরদিকে মানিকদা ইউনিয়নের পুখুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে রাতের বেলায় একটি শিশু বাচ্চাকে পরিবারের সামনের থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ছেলেধরা সন্দেহে এলাকাবাসীর গণধোলাইর শিকার হয়ে শামচেল মোল্লা নামের একজন নিহত হন। পুলিশ জানায় শামচেল মোল্লার বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক মামলাসহ মোট ৬টি মামলা ছিল। কিন্ত নিহতের পরিবারের দাবী এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। ঘটনাটি পুলিশ ও পিবিআইর তদন্ত শুরু হয়েছে।
ভাঙ্গা উপজেলার পৃথক দুটি ইউনিয়নের উল্লেখিত ঘটনায় অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলামসহ থানা পুলিশ একদিকে আলগী ইউনিয়নের আলমগীর হত্যায় আসামী পক্ষের বাড়ি ঘর ভাংচুর থেকে রক্ষায় পুলিশী একশন,এবং ওই পৃথক দুটি হত্যা মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
এনিয়ে উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি থানার অফিসার ইনচার্জ ও পুলিশ সদস্যদের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ভাঙ্গা থানা পুলিশ সদস্যরা যে ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন এটি প্রশংসনীয়। রাতের বেলায় আমরা সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকি পুলিশ তখন রাস্তায় বা ওলিতে গলিতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য জেগে থাকে। যে কোন সময়ের থেকে ভাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভাল বলে সংসদ সদস্য উল্লেখ করেন।
থানায় সেবা নিতে এসে ফাতেমা বেগম জানান,পারিবারিক বিষয় সংক্রান্ত একটি ঘটনা নিয়ে আমি সরাসরি অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলামের কাছে গেলে তিনি বিনয়ের সাথে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বশকারে আমার সকল তথ্য শুনেন এবং সমাধানে আইনী পদক্ষেপ নিতে সহযোগীতায় কথা বলেন।
ভাঙ্গা সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী অনুপম জানান, আমার জরুরি কিছু কাগজ পত্র হারিয়ে যাওয়ায় থানায় গেলে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার সাধারণ ডায়েরী করতে সহযোগীতা করেন। সাধারণ কোন ডায়েরী করতে এর আগে থানায় টাঁকা নেওয়া হত। কিন্ত এখন এ ধরনের কিছু নেই বলে সে বেশ খুশী। এছাড়া আজকাল অনলাইনেও সাধারণ ডায়েরী করা সহজতর হয়েছে বলে জানান অনুপমের সঙ্গী সুজন মিয়া।
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে সারাদেশের মানুষের জন্য পুলিশ জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগকে উন্নত রাষ্ট্রর পুলিশী ব্যবস্থার আদলে গড়ে তুলতে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে পুলিশ প্রশাসন একটি জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে সেই ধারাবাহিকতায় ভাঙ্গা থানার অফিসার ইন চার্জ জিয়ারুল ইসলাম একজন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সকল পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় প্রতিনিয়ত কাজ করছেন।
ভাঙ্গা থানা যুবলীগ নেতা ও সরকারী কেএম কলেজের সাবেই জি এস লাবলূ মুন্সী বলেন, ভাঙ্গা থানার পুলিশ এলাকার মানুষের শান্তির জন্য আইনশৃঙ্খলা ভাল রাখার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। বিএনপি জামাত সরকারের সময়ে ভাঙ্গা থানায় রাজনৈতিক দাল্লালদের সংখ্যা ছিল অগণিত। কিন্ত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আমাদের ফরিদপুর-৪ আসনের জনপ্রিয় সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপির হস্তক্ষেপে ভাঙ্গা থানা আজ দালাল মুক্ত। এজন্য ভাঙ্গা থানার অফিসার ইন চার্জ জিয়ারুল ইসলাম আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও অপরাধ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় তিনি ধন্যবাদ জানান।
ভাঙ্গা থানার অফিসার ইন চার্জ জিয়ারুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকতা পেশাটা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বলে স্বীকৃত। ঠিক পুলিশের পেশাটাও অধীক ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশের কাজ হচ্ছে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন। অপরাধীদের কাছে পুলিশ আতঙ্কিত একটি নাম হলেও
পুলিশ সম্মানিত নাগরিককে যোগ্য সম্মান দিয়ে থাকেন। পুলিশের প্রতিটি কাজে ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান পিপিএম সেবা এর দিক নির্দেশনা মোতাবেক ভাঙ্গা থানা পুলিশ অপরাধ দমনে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন বলে জানান ভাঙ্গা থানার মানবিক ও চৌকশ অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম। ভাঙ্গা উপজেলার জনগণ শান্তিপ্রিয় বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভাঙ্গায় কিছু কিছু গ্রাম এলাকায় আধিপ্ত্য বিস্তার কেন্দ্র করে প্রায় সংঘাতের ঘটনা ঘটে। মাঝে মাঝে পুলিশও নিরাপদ নয়! দাঙ্গা হাঙ্গামা থামাতে গিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যবর্তী যথাযথ অবস্থান নিলেও পুলিশের উপরও দাঙ্গাবাজরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। অনেক সময় পুলিশ সদস্যরা গুরুত্বর আহত হয়ে থাকে। এরপরেও পুলিশের ধর্ম হচ্ছে জনগণের শান্তির লক্ষে তাদের নিরাপত্তা দিয়ে ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া। তবে যে কোন পরিস্থিতিতে ভাঙ্গায় চ্যালেঞ্জের সাথে অপরাধ দমনে কাজ করছে পুলিশ।
মামুনুর রশীদ,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার/ফরিদপুর