ঢাকা ০৭:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জ বিএনপি সম্মেলনে কাউন্সিলর তালিকা ঘিরে চরম অসন্তোষ

সম্মেলনের আগেই দলে অশান্তি: বাদ পড়ল জেলখাটা ও প্রবীণ নেতারা

Rayhan Zaman
  • আপডেট সময় : ০৫:০৯:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১২১৯ বার পড়া হয়েছে

কিশোরগঞ্জ বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। ছবি: আস্থা

দীর্ঘ প্রায় নয় বছর পর আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। তবে সম্মেলনকে ঘিরে দলের ভেতরে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সুর শোনা যাচ্ছে। কারণ কাউন্সিলর তালিকায় রাখা হয়নি দলের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বহুবার কারাভোগ করা অভিজ্ঞ নেতাদের।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, তৃণমূলের ভোটারদের নিয়ে গঠিত এ কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়নের সময় নতুন মুখদের প্রাধান্য দেওয়া হলেও দলীয় ইতিহাস ও সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নেতাদের নাম বাদ পড়েছে। এতে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মীদের মধ্যে।

জেলার ১৩ উপজেলার বিভিন্ন শাখা থেকে কাউন্সিলর করা হয়েছে ২ হাজার ৯০ জনকে। তবে বাদ পড়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী, জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এডভোকেট ফজলুর রহমান শিকদারসহ আওয়ামী লীগ আমলে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার বহু নেতা-কর্মী।

কাউন্সিলর না হওয়ায় সাবেক সভাপতি-সম্পাদকসহ জেলখাটা নেতাদের ক্ষোভ সম্মেলনের পরিবেশে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত তৃণমূলের মধ্যে বিভক্তি বাড়াবে এবং নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

অন্যদিকে, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর তালিকা গঠনতন্ত্র ও দলের নীতির আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছেন, কিছু অভিজ্ঞ নেতার নাম বাদ পড়ায় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী বলেন, ‘তারা যা শুরু করেছে টেন্ডারবাজি, সিএনজি স্ট্যান্ড দখল, কমিটি বাণিজ্য এর পরিণতি ভালো হবে না।’

সাবেক জেলা সদস্য ও রশিদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন শিহাব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়েছি। পাঁচবার জেল খেটেছি, দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট পর্যন্ত পাইনি। আওয়ামী লীগের পতনে সব দুঃখ ভুলেছিলাম। কিন্তু নিজের দলের সম্মেলনে কাউন্সিলর না হওয়াটা সবচেয়ে বড় দুঃখ।

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক পদপ্রার্থী রুহুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা ১৭ মাস জেলে ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। অথচ শরীফুল আলমের লোকজন আমাকে হামলাকারী বানিয়ে মামলায় আসামি করেছে। অথচ ওয়ান-ইলেভেনসহ বড় কোনো আন্দোলনে তাদের দেখা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক চোখ হারানো বিএনপি কর্মী জাহিদুল ইসলাম নিরব বলেন, আন্দোলনে লাঠি-গুলি খাই আমরা; কিন্তু কাউন্সিলর হয় সুবিধাভোগীরা।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম বলেন, থানা কমিটিগুলো নির্ধারিতদেরকেই কাউন্সিলর করেছে। উপদেষ্টাদের ভোট নেই। আর যাদের দীর্ঘদিন গ্যাপ আছে, মাঠে না থাকায় কাউন্সিলর করা হয়নি।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সম্মেলনের ফলাফলে উপেক্ষিত নেতাদের ক্ষোভ কীভাবে প্রতিফলিত হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতরে চলছে নানা সমীকরণ।

কিশোরগঞ্জ বিএনপি সম্মেলনে কাউন্সিলর তালিকা ঘিরে চরম অসন্তোষ

সম্মেলনের আগেই দলে অশান্তি: বাদ পড়ল জেলখাটা ও প্রবীণ নেতারা

আপডেট সময় : ০৫:০৯:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দীর্ঘ প্রায় নয় বছর পর আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। তবে সম্মেলনকে ঘিরে দলের ভেতরে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সুর শোনা যাচ্ছে। কারণ কাউন্সিলর তালিকায় রাখা হয়নি দলের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বহুবার কারাভোগ করা অভিজ্ঞ নেতাদের।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, তৃণমূলের ভোটারদের নিয়ে গঠিত এ কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়নের সময় নতুন মুখদের প্রাধান্য দেওয়া হলেও দলীয় ইতিহাস ও সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নেতাদের নাম বাদ পড়েছে। এতে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মীদের মধ্যে।

জেলার ১৩ উপজেলার বিভিন্ন শাখা থেকে কাউন্সিলর করা হয়েছে ২ হাজার ৯০ জনকে। তবে বাদ পড়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী, জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এডভোকেট ফজলুর রহমান শিকদারসহ আওয়ামী লীগ আমলে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার বহু নেতা-কর্মী।

কাউন্সিলর না হওয়ায় সাবেক সভাপতি-সম্পাদকসহ জেলখাটা নেতাদের ক্ষোভ সম্মেলনের পরিবেশে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত তৃণমূলের মধ্যে বিভক্তি বাড়াবে এবং নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

অন্যদিকে, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর তালিকা গঠনতন্ত্র ও দলের নীতির আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছেন, কিছু অভিজ্ঞ নেতার নাম বাদ পড়ায় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী বলেন, ‘তারা যা শুরু করেছে টেন্ডারবাজি, সিএনজি স্ট্যান্ড দখল, কমিটি বাণিজ্য এর পরিণতি ভালো হবে না।’

সাবেক জেলা সদস্য ও রশিদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন শিহাব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়েছি। পাঁচবার জেল খেটেছি, দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট পর্যন্ত পাইনি। আওয়ামী লীগের পতনে সব দুঃখ ভুলেছিলাম। কিন্তু নিজের দলের সম্মেলনে কাউন্সিলর না হওয়াটা সবচেয়ে বড় দুঃখ।

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক পদপ্রার্থী রুহুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা ১৭ মাস জেলে ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। অথচ শরীফুল আলমের লোকজন আমাকে হামলাকারী বানিয়ে মামলায় আসামি করেছে। অথচ ওয়ান-ইলেভেনসহ বড় কোনো আন্দোলনে তাদের দেখা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক চোখ হারানো বিএনপি কর্মী জাহিদুল ইসলাম নিরব বলেন, আন্দোলনে লাঠি-গুলি খাই আমরা; কিন্তু কাউন্সিলর হয় সুবিধাভোগীরা।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম বলেন, থানা কমিটিগুলো নির্ধারিতদেরকেই কাউন্সিলর করেছে। উপদেষ্টাদের ভোট নেই। আর যাদের দীর্ঘদিন গ্যাপ আছে, মাঠে না থাকায় কাউন্সিলর করা হয়নি।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সম্মেলনের ফলাফলে উপেক্ষিত নেতাদের ক্ষোভ কীভাবে প্রতিফলিত হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতরে চলছে নানা সমীকরণ।