নেত্রকোণার হাওরে বোর ধান কাটা শুরু: আগাম ফলনের আশার কপাল পুড়লো কৃষকের
আব্দুর রহমান ঈশান/নেত্রকোণা প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলে ধান কাটা শুরু হলেও ব্রি-২৮ ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। হাওরাঞ্চল ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা অকাল বন্যার হাত থেকে সারা বছরের একমাত্র ফসল রক্ষা এবং আগাম ফলনের আশায় নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিল।
বেশীরভাগ জমির ধান ছিটা হওয়ায় এবং শিলাবৃষ্টির কারণে ধান জমিতে ঝড়ে যাওয়ায় কপাল পুড়ল তাদের। এখন তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। এতে সারা বছরের খোরাকী এবং ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। এর আগের বছরও একই ধান চাষ করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরও তাদের অসচেতনতা এবং কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদাসিনতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে ফের ক্ষতির মুখে পড়েছে হাওরাঞ্চলের ধান উৎপাদন।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণা জেলায় চলতি বোরো মওসুমে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪ শত ৭০ হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬ শত ৯০ হেক্টর জমি।
খালিয়াজুরী উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের সঞ্জিত সরকার বলেন, আমি প্রায় ২৫ কাটা জমিতে ব্রি-২৮ ধান করেছিলাম। আমার বেশীরভাগ জমির ধান ছিটা হয়েছে।মেন্দীপুর গ্রামের কৃষক জানু চৌধুরী বলেন, ব্রি-২৮ ধান ছিটা ওহয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি শিলাবৃষ্টির কারণে ধান জমিতে ঝড়ে পড়েছে। মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, প্রতি কাটা জমিতে আগে যেখানে ধান হতো ৭/৮ মন সেখানে ধান হয়েছে ২/৩ মন। ছিটা হওয়ার পরও কেন ধান কাটছেন জানতে চাইলে কৃষক দুলাল মিয়া জানান, গরু খাবার সংগ্রহ করতেই ধান কাটছি। খালাসী পাড়ার কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, আমি আমার ধান শ্রমিকদের নিয়ে যেতে বলেছি। শুধু বন যেন আমাকে দিয়ে দেয়।
কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেন, ব্রি-২৮ ধান আবাদ না করতে যে রকম প্রচার প্রচারণা করার দরকার ছিল তা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ফলে কৃষকরা বার বার একই ভূল করে লোকসানের মুখে পড়েছে।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলে আগাম জাতের ব্রি-২৮ জাদের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। দ্রুততম সময়ে ধান কাটার জন্য ৭শ ৩০টি কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন প্রস্তুত রয়েছে। হাওরে ব্রি-২৮ ধানে ছিটা দেখা দিয়েছে। মওসুমের শুরুতেই বালাই নাশক প্রয়োগ কৃষকদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই ধানের চাষাবাদ না করতেও কৃষকদের বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ব্রি ২৮ এর পরিবর্তে ব্রি ৮৮ জাতের ধান চাযাবাদ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।