জেলা প্রতিনিধি:
আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ১১টার দিকে পৌর এলাকার চাতাল মোড়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নৌকা প্রতীকের ৪ কর্মী রক্তাক্ত জখম হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে, সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হয়।
পরে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হারদীতে অবস্থিত আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহতরা হলেন- মৃত জিন্নাহর ছেলে শাহিন, মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রশিদুল, জামিরুল হোসেনের ছেলে বিপ্লব। আহত আরেকজনের নাম জানা যায়নি। এদিকে, এ ঘটনায় রাতেই মোবাইল প্রতীকে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম সবেদ আলীর ৪৯ জন কর্মী-সমর্থকের নাম উল্লেখপূর্বক আরও ১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন নৌকা প্রতীকের কর্মী আ. স. ম সালাউদ্দীন। ঘটনার পর থেকেই আলমডাঙ্গা শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী নির্বাচনী সহিংসতা। তবে যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো শহরজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হঠাৎ করে নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত ও উত্তাপময় হয়ে উঠায় আলমডাঙ্গা পৌর নির্বাচন সংঘাতে দিকে এগোচ্ছে বলেও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিমত দেন। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে থানায় নেয়া হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় এম সবেদ আলীর পক্ষে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ‘আলমডাঙ্গায় পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হাসান কাদির গনুর চাতাল মোড়ের নির্বাচনী অফিসে কর্মী-সমর্থকেরা বসে ছিলেন। হঠাৎ রাত ১০টার দিকে এম সবেদ আলীর মোবাইল প্রতীকের শতাধিক সমর্থক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নৌকার অফিসে হামলা চালায়। হামলায় এরশাদপুরের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রশিদ, একই এলাকার মৃত জিন্নাত আলীর ছেলে শাহিন ও জামিল হেসেনের ছেলে বিপ্লবসহ অজ্ঞাত আরও একজনকে কুপিয়ে জখম করে। এসময় ভাঙ্চুর করা হয় চাতাল মোড়ের নৌকার নির্বাচনী অফিসটিও।
একইসময় কলেজপাড়ায় নৌকার অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙ্চুর করা হয়েছে। এছাড়াও কলেজপাড়ার যুবলীগ নেতা হাসেমের দোকানের সাটারে এলোপাতাড়িভাবে কোপানোসহ ছাত্রলীগ নেতা মিডিল মৃধার বাড়িতে হামলা চালায় তারা। ঘটনা জানাজানি হলে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’ পরে খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ সময় চুয়াডাঙ্গা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবির।
পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম ও ওসি আলমগীর কবির বলেন, ‘আপনারা সকলেই রাস্তা থেকে সরে যান এবং যে যার বাড়িতে চলে যান। এখানে যে ঘটনা ঘটেছে, এটি এককথায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মাঠে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ সদস্য আছে। সেইসাথে কাল (আজ শুক্রবার) থেকে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি টহল জোরদারসহ বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
এছাড়া এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হামলার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হাসান কাদির গনু বলেন, ‘শান্ত পরিবেশ অশান্ত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অফিসে হামলা চালিয়ে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের কুপিয়ে জখম করেছে এম সবেদ আলীর সন্ত্রাসীরা। এতে আমার চারজন নেতা-কর্মী গুরত্বর জখম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার কলেজপাড়া, গোবিন্দপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ৪টি নৌকার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙ্চুর করা হয়েছে।
এবিষয়ে মোবাইলফোন প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সমাদ আলী বলেন, ‘পূর্বে আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা। সেইসময়ে আমি কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনের নামে আলমডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দায়ের করি। সেই হামলার ঘটনার সুরাহা হতে না হতেই আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) আবারও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার নির্বাচনী অফিসে আচমকা হামলা চালিয়ে ভাঙ্চুর করে।
এ ঘটনা আড়াল করতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নিজেরাই নিজেদের অফিস ভাঙচুরসহ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবীর জানান, ‘আলমডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে দুজন মেয়র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের সংবাদ আমরা পেয়েছি। সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলমসহ আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।’
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘আলমডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে দুজন মেয়র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের সংবাদ আমরা পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর আ. স. ম সালাউদ্দীন নামের একজন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’