DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশনিবার ৩০শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাশনিবার ৩০শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

আশায় ছিলাম একদিন কেউ প্রতিবাদ করবে :নির্যাতিত নারী

News Editor
অক্টোবর ৭, ২০২০ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নোয়াখালী সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বেগমগঞ্জের একলাশপুর। পিচঢালা রাস্তা শেষে কাদামাটির আঁকাবাঁকা সরু মেঠোপথ। নিভৃত পল্লি জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে জন্ম তার। এই সেই নারী, যার ওপর ঘটে যাওয়া বর্বরতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে দেশ।

গতকাল মঙ্গলবার দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা সমকালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় নির্যাতনের শিকার বেগমগঞ্জের এই নারীর। তার কথায় উঠে এসেছে দুর্বিষহ সেই দিনগুলোর কথা। নোয়াখালী অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও তিনি মোটামুটি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন।

জন্মের পর থেকে সামাজিক বিধিনিষেধের মধ্যে বেড়ে ওঠেন এই নারী। ২০০১ সালে বিয়ে হয় পাশের গ্রামে। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ের বিয়ের পর সপ্তম শ্রেণি পড়ূয়া সন্তানকে ঘিরেই তার যত স্বপ্ন। এর মধ্যেই স্বামী আরেক বিয়ে করার পর ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন জয়কৃষ্ণপুরে বাবার বাড়ি। এখানেই জীবন চলছিল তাদের। দিন যত যাচ্ছিল ততই তিনি দেখছিলেন সামাজিক নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন দিক। এক শ্রেণির মানুষের দৃষ্টি পড়ে তার ওপর। নিজেকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। তবে গত ২ সেপ্টেম্বর তার ওপর বয়ে যায় বর্বরতা। ৩২ দিন পর গত রোববার একদল দুর্বৃত্তের ভয়াল থাবার ভিডিও প্রকাশের পর সবুজ-ছায়া-সুনিবিড় অজপাড়া সেই গ্রাম এখন সারাদেশে আলোচিত। কোলাহলহীন জনপদে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিকসহ নানা মানুষের পদচারণা। তার ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।

এখন যাকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই নারী বিচারের আশায় ঘুরেছেন বিভিন্ন জায়গায়। বিচার তো পাননি; বরং প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। সেসব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর নির্যাতনের ঘটনার এক মাস আগে তার মেয়ের বিয়ে হয়। তারও আগে দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীর সঙ্গে নিজের বিচ্ছেদ ঘটে। মেয়ের বিয়ের পর তিনি ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। এ সময়ে দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় তাকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তাতে সাড়া না দেওয়ায় দেলোয়ার ও তার বাহিনীর সদস্যরা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। প্রায় প্রতি রাতেই তারা ঘরের চারপাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করত এবং ভয় দেখাত। এ অবস্থায় মেয়ে তাকে অনুরোধ করেন, বাবার সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে একসঙ্গে থাকতে। মেয়ের অনুরোধে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিরোধ মীমাংসার জন্য। ওই দিন (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর তার স্বামী তাদের বাড়িতে আসেন। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালায়।

আরো পড়ুন :  বেনাপোলে তৃতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন ধর্মঘট, ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদের ভোগান্তি

ওই রাতের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, যা ঘটেছিল তা দেশবাসী এখন জানে। আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল ওরা। মাথার ওপর যখন বাড়ি দিয়েছে, তখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখেছি। ‘আব্বা আব্বা’ বলে তাদের পায়ে ধরার পরও তারা আমাকে ছাড়েনি। উল্টো তারা হেসেছে। ভিডিও ধারণ করেছে। আমার চিৎকারে আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি।

বিচার চেয়েও না পাওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরদিন সকালে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচার চেয়েছি। মেম্বার বলেছেন, তুমি কি বিচার চাও, নাকি থানায় মামলা করবে? আমি বলেছিলাম, মামলা করার মতো টাকা আমার নেই। পরে মেম্বার বিচার তো আর করেননি; বরং আসামিদের পক্ষ নিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নির্যাতনকারীরা পুনরায় অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। আমি তাদের বারবার বলেছিলাম, আমার একটা মেয়ে আছে। তোরা ভিডিও ছেড়ে দিয়ে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করিস না। একপর্যায়ে ভয়ে বসতঘরে তালা দিয়ে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাই ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি- মৃত্যুদণ্ড। ওদের যারা আশ্রয় দেয় তাদের শাস্তি দাবি করছি। এতটুকু চাওয়া। আর কিছু না।’

দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, সেই রাতের পর থেকে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। ৩২ দিন আমার কাছে মনে হয়েছে ৩২টি বছর। একেকটি দিন কতটা গভীর ক্ষত নিয়ে পার করেছি, তা বোঝাতে পারব না।

এত কিছুর পর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। নিজের দুর্বিষহ জীবন ও লজ্জা ঠেলে উঠে দাঁড়াতে চান তিনি। তার ওপর ঘটে যাওয়া বর্বরতার বিরুদ্ধে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি যে এই জীবনে ফিরতে পারব, এভাবে কথা বলতে পারব, সেটি ভাবতেই পারিনি। আমার ওপর যা হয়েছে, মরে যাওয়ার মতোই। পরে ভেবেছি, না, ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমার জন্য একদিন কেউ প্রতিবাদ করবে, এ আশায় ছিলাম। আমি জানি, পৃথিবীতে ভালো মানুষও আছে। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ আমার পাশে দাঁড়াবে। এখন সারাদেশ আমার জন্য লড়াই করছে। এটাই অনেক। ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আর চাই, কেউ যেন এমন বর্বরতার শিকার না হন।-সমকাল

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০