সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে নববধূকে গণধর্ষণের ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যার পর ঘটনার খবর পেয়ে টিলাগড় এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন।
এমসি ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
প্রথম দিকে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ধর্ষণের ঘটনাটি ধাপাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। তারা আপস মীমাংসারও চেষ্টা চালান। পুলিশও প্রথমদিকে ঘটনাটি গণমাধ্যমের কাছে এড়িয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তারা।
পুলিশের দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের কারণে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয় বলে স্থানীয়দের দাবি।
ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় পুলিশের দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের কারণে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছে স্থানীয়দের এমন দাবির ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার সন্ধ্যায় এসএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) সোহেল রেজা যুগান্তরকে জানান, ‘আমার কাছে এরকম কোনো তথ্য নেই।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের সামনে গৃহবধূটিকে গণধর্ষণ করা হয়। কক্ষটি ২০১২ সাল থেকে ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষ হিসেবে পরিচিত। ওই কক্ষের ছাত্রলীগের একটি পক্ষের ৬-৭ কর্মী থাকে। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে। এ সময় অভিযুক্ত ধর্ষকদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আর ওই দম্পতির ব্যবহৃত গাড়িটিও উদ্ধার করা হয়। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে রাত ১২টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকালে এমসি কলেজ এলাকায় নিজেদের গাড়িতে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যান গৃহবধূ। সন্ধ্যার পর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গাড়িটি রেখে তারা দোকানে যান। এরপর কেনাকাটা করে এসে তারা গাড়িতে বসে গল্প করছিলেন। রাত ৮টার দিকে পাঁচ যুবক তাদের গাড়িটি ঘিরে ধরে এবং স্বামী-স্ত্রীকে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়।
এরপর ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে নিয়ে যায়। স্বামীকে গাড়িতে আটকে রাখে দুই যুবক। ঘণ্টাখানেক পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সেখানে গিয়ে তিনি স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান।
ছাত্রাবাসের পাশের আবাসিক এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, স্বামীর চিৎকার শুনে বালুচর এলাকা থেকে কিছু লোক এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের দিকে নজর রাখছিলেন। একপর্যায়ে নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে ছাত্রাবাস স্টাফ কোয়ার্টার থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে দেখতে পান। ছাত্রাবাস ফটকের সামনে তখন তাদের গাড়িটি ছিল। একপাশে একটি মোটরসাইকেল রাখা দেখে স্থানীয় লোকজন শাহপরান থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তারা ঘটনার বিবরণ দেন।
স্বামী পুলিশকে বলেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে দু’জনকে তিনি এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে আগে দেখেছেন। এ দু’জন গাড়িতে তাকে আটকে রেখেছিল। তিন থেকে চারজন তার সামনে স্ত্রীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর ওই তিন যুবক দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় দুই যুবকও পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় শনিবার ভোর রাতে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে নয়জনকে আসামি করে এসএমপির শাহপরান থানায় মামলা করেন গৃহবধূর স্বামী।
আর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এসআই মিল্টন সরকার বাদী হয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেছেন।
ইতোমধ্যে গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান ও ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও অধরা আরও ৪ আসামি।