কুষ্টিয়ায় আলোচিত এনআইডি নকল করে জমি জালিয়াতি মামলায় এক নিরীহ ব্যবসায়ীকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সিআইডির এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম মোক্তার হোসেন। তিনি কুমারখালী উপজেলার জয়নাবাদ এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে। শহরের লাহিনী এলাকায় ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা রয়েছে তার।
গত মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় অবস্থিত অস্থায়ী কার্যালয়ে আটকে রেখে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে বড় ভাইয়ের সামনেই নির্যাতন চালানো হয় ওই ব্যবসায়ীর ওপর। এরপর দুই ঘণ্টার মধ্যে ৫ লাখ টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন এসআই সুজিত।
পরে মোক্তারের বড়ভাই ইবাদত হোসেনকে ছেড়ে দিলে তিনি দেড় ঘণ্টার মধ্যে ধার দেনা ও স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসেন। আর ২০ হাজার টাকা মোক্তার তার মোবাইলের বিকাশ থেকে তুলে দেন। এরপর মোক্তার ও তার ভাইকে আলাদা দুটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মাগরিবের নামাজের সময় ছেড়ে দেয়া হয়।
কারাগারে যে হালে আছেন ওসি প্রদীপ
মোক্তার জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি অভিযোগ আকারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রতিকার চান।
মোক্তার হোসেন জানান, ‘লাহিনী এলাকায় আমার ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির শো-রুম রয়েছে। গত মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) আমার এক স্বজনের বিয়ের জন্য পাত্র দেখতে যাই। দোকানে আমার কর্মচারী রুবেল ছিল। ৪ জন লোক এসে সিআইডি পরিচয় দিয়ে আমার খোঁজ করে। এরপর না পেয়ে আমার দোকানের ভিজিটিং কার্ডেই একটি মোবাইল নম্বর লিখে দিয়ে যায় (০১৭২১-১৯১৫৩৬)। নম্বরটি এসআই সুজিতের জানিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বলে। আমি রাতে দোকানে ফিরে নম্বরে কল দিয়ে কথা বলি। পরদিন আমাকে সিআইডি অফিসে যেতে বলে।’
মোক্তার অভিযোগ করে বলেন, বড় ভাইকে সাথে নিয়ে পরদিন বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডিসি অফিসের তৃতীয় তলায় সিআইডির কার্যালয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর সুজিত তার পাশে একটি চেয়ারে আমাকে বসতে দেয়। আমার ভাইকেও সেখানে বসতে বলে। এরপর হঠাৎ করে সে আমার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেয়। এরপর জমি জালিয়াতির ঘটনায় আমাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে। আমি এসবের কিছুই জানি না বললে সে আমাকে লাঠি দিয়ে পিঠে মারধর করতে থাকে। এরপর আমাকে অফিসের অন্য সকলের সামনেই হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় দুই হাত ওপরে তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। হাত নিচে নামালেই সে লাঠি দিয়ে মারছিল। এভাবে দু দফায় দু ঘণ্টা আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এরপর আমাকে ও ভাইকে মামলা থেকে বাঁচতে হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে, না হলে আসামী করে চালান করে দেয়ার কথা বলে। পরে বড় ভাই ইবাদতকে টাকা জোগাড় করে আনার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর নানা জায়গায় ধার দেনা ও আমার স্ত্রীসহ ভাবীদের গহনা বন্ধক রেখে তাৎক্ষণিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসে। আর আমার মোবাইলের বিকাশ থেকে ২০ হাজার তুলে তার হাতে দিলে সে আমাদের সামনেই ১ লাখ ৭০ হাজার তার ড্রয়ারে রাখে।
মোক্তারের অভিযোগ, টাকা পাওয়ার পর দুটি আলাদা কাগজে আমার ও বড় ভাইয়ের স্বাক্ষর নেয়া হয়। একটি কাগজে কিছু লেখা ছিল। আরেকটি সাদা কাগজ ছিল। সাদা কাগজে আমার একার ও অন্যটিতে দুই ভাইয়ের স্বাক্ষর নেয়। সেখানে কয়েকজনের নাম লেখা ছিল এমন বুঝতে পেরেছি।
সর্বশেষ গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) আবারও মোক্তারের মোবাইলে ফোন দেন এসআই সুজিত। ফোন দিয়ে বাকি টাকার জন্য চাপ দেন তিনি। বাড়ির ৫টি গরু বিক্রি করে বাকি টাকা দেবেন বলে জানান মোক্তার।
মোক্তার বলেন, জমি জালিয়াতির বিষয়টি টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। সজুন ও আমার বাড়ি একই এলাকায়। তার মানে এ নয় যে আমি এসবের সাথে জড়িত। আমার এলাকায় খোঁজ নিলে লোকজনই বলবে আমি কেমন। এসবের আমরা কিছুই জানি না। এখন আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীণতায় ভুগছি। আমরা সঠিক তদন্ত ও দোষীর শাস্তি চাই।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজিতের মোবাইলে রিং দিলে বলেন, ‘কিছু অভিযোগের কারনে আমি তাদের আসতে বলি। আসার পর অফিসে তাদের সাথে কথা হয়েছে। কোন অর্থ ও টাকা পয়সা নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে তার ভাইয়ের জিম্মায় দেয়া হয়। তারা যেসব অভিযোগ করছে তার কোন ভিত্তি নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মোক্তার হোসেন নামের একজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর সিআইডির শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।’