বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, যারা গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, নিখোঁজ হয়েছেন- পরবর্তী সরকার অর্থাৎ বিএনপি সরকার তাদের দায়িত্ব নেবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পায় এবং যৌক্তিক কারণেই ভাতা পায়। তাহলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহসী সৈনিক যারা শহীদ হবে তারা কেন পাবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে এবং আগামীতে যখন বিএনপি সরকার আসবে তখন এটা নিশ্চিত করবে- এটা পরিষ্কার কথা।
শনিবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে ‘চাকরিচ্যুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মোরশেদ হাসান খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানকে পুনর্বহালের দাবি এবং জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোট প্রদানে অনীহা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের পক্ষে থেকে শামসুজ্জামান দুদু আশ্বস্ত করে বলেন, যে সরকার এখন আছে এই সরকারের পরের সরকারটাই হচ্ছে বিএনপি সরকার। আমি বিএনপি করি বলে বলছি না। আজকের মধ্যে যদি এই সরকারের পতন হয় তাহলে পরশুদিন বিএনপি সরকার আসবে। যদি একমাস পরও হয় তাহলে বিএনপি সরকার আসবে। আওয়ামী লীগের এই বাস্তবতাটা বুঝতে হবে দুই মাস পর হলেও এরপরের সরকার বিএনপি সরকার।
তিনি বলেন, মোরশেদ খান-ওয়াহিদুজ্জামান শুধু পুনর্বহাল হবেন না। যারা এই সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা সবাই পুনর্বহাল হবেন। শুধু স্বপদেই না পদমর্যাদা বাড়বে। এমন হতে পারে মোরশেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পকালীন উপাচার্য হয়েছেন। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের যেখানে যারা অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের সবাই পুনর্বহাল হবেন। কারণ তারা গণতন্ত্রের রক্ষা জন্য চাকরিচ্যুত হয়েছেন। স্বৈরতান্ত্রিক বিরোধিতা করেছেন বলেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, যে সমাজে ভিন্নমত পোষণ করা যায় না। সেই সমাজ হচ্ছে জলাশয়, সেই সমাজ হচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক, ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে একজন ব্যক্তি যদি ভিন্নমত পোষণ করে তাহলে রাষ্ট্র তাকে রক্ষা করে এটাই আমরা জানি, এটাই গণতন্ত্র। কিন্তু এ সমাজ বদ্ধসমাজ, অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ, এই সমাজে গণতন্ত্রের কথা যে চিন্তা করবে সে আঘাত পাবে, মামলা হবে। যারা এক লক্ষ মামলায় ৩৬ লক্ষ আসামি হয়েছে এরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরবর্তী সরকারে জাতীয় বীর হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাদের বিশেষভাবে সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এখানে কে যেন ভুল করে বললেন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন পেয়েছেন। না তিনি জামিন পান নাই। তিনি কারাগারে ছিলেন এখন তার বাসাটা কারাগার। আপনি যান তো তার বাসায়, দেখা করতে পারেন কিনা। বেগম খালেদা জিয়া ঈদ মোবারকের জন্য পত্রিকায় কিছু বলতে পারেন? বেগম জিয়া কি কোনো মিটিং করতে পারেন? জামিনে থাকলে আমরা যেমন মিটিং করছি তিনিও করতে পারতেন। বেগম জিয়া কারাগারে আছেন। ওই কারাগার, বাসা কারাগার আর একটা কারাগার আছে কাশিমপুরী, আর একটা আছে কেরাণীগঞ্জে আসলে পুরো দেশটাই তো এখন কারাগার।
এই সরকার মুক্তিযুদ্ধ মানে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান রাজনৈতিক কারণেই দেশের বাইরে আছেন। এই দেশকে ভালোবাসেন। তার রাজনৈতিক মানবতার রাজনীতি, তার রাজনীতি স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনীতি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি, সেই জন্য তিনি দেশে থাকতে পারছেন না। কারণ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীশক্তি এখন ক্ষমতায়। এরা মুক্তিযুদ্ধ মানে না। নির্বাচন মানে না।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয়ের কিছু নেই। আপনি আমি বিএনপির যত ভোটার আছে সবাই যদি রাস্তায় নামি পুলিশের গাড়ি যাওয়ার জায়গা থাকবে না। বেগম জিয়া তখন পতাকা নিয়ে আবার ঘুরে আসবেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ-তায়ালা যদি বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন বেগম খালেদা জিয়া এবং যদি বাংলাদেশের বালা-মসিবত দূর করতে হয় তাহলে বেগম জিয়া সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- আ ন ম এহছানুল হক মিলন। উপস্থিত ছিলেন কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিয়া মো. আনোয়ার, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।