এবার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেছে ধর্ষকের এক বন্ধু। ধর্ষণের তথ্য কাউকে না জানানো ও যখন ডাকা হবে তখনই আসতে হবে, না এলে ধারণকৃত ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ওই ধর্ষক ও তার বন্ধু।
এ ঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার ওই স্কুল ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় মামলা করেছেন। (মামলা নং-০৪)।
গত শনিবার (৩ অক্টোবর) উপজেলার ধারাবাশাইল গ্রামের ইব্রাহিম হাওলাদারের মাছের ঘেরপাড়ের ঝুপড়ি ঘরে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের কাশাতলী মেধাবিকাশ ডিজিটাল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
কুলিয়ায় কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা ও গাছ বিতরণ
মামলা সূত্রে ও ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী জানিয়েছে, শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় স্থানীয় মেধাবিকাশ ডিজিটাল স্কুলের সোহাগ স্যারের কাছ থেকে প্রাইভেট পড়ে স্থানীয় চৌধুরী বাজারে খাতা ও কলম কিনতে যায় সে। এ সময় একই উপজেলার পূর্ণবতী গ্রামের মহাসিন উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আলী হোসাইন হাওলাদার ও একই গ্রামের ইব্রাহিম হাওলাদারের ছেলে মাসুদ হাওলাদার তাকে ভয় দেখিয়ে নৌকায় করে ধারাবাসাইল গ্রামে অবস্থিত ইব্রাহিম হাওলাদারের মাছের ঘেরে নিয়ে যায়। বিল বেষ্টিত নির্জন ঘেরের একটি টং-ঘরে আলী হোসাইন হাওলাদার তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে বলে। এতে ওই স্কুলছাত্রী রাজি না হওয়ায় সে তাকে মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে সে তাকে জোর করে ধর্ষণ করে। এ সময় তার বন্ধু মাসুদ হাওলাদার মোবাইল ফোনে এ দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে। এই ধর্ষণের কথা কাউকে বললে এবং আগামীতে ডাকলে না এলে এই ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে সে বাড়িতে আসার পর বিষয়টি তার মাকে বলে। পরে এ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে একটি মহল উঠে-পড়ে লাগে। মহলটি সালিস মীমাংসা করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ধর্ষিতার পরিবার রাজি না হওয়ায় তাদের চেষ্টা ভেস্তে যায়। একই দিন সন্ধ্যায় ধর্ষিতার খালু হালিম শাহ বিষয়টি কোটালীপাড়া থানায় জানান।
ধর্ষিতার খালু বলেন, ঘটনার দিন শনিবার সন্ধ্যায় আমি কোটালীপাড়ায় থানায় গিয়ে জানাই। কিন্তু এ কয়দিন থানা থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপর পিঞ্জুরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাজা হাওলাদার ও সরোয়ার তালুকদার মেয়ের বাবাকে ডেকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমরা এতে রাজি না হওয়ায় সোমবার কোটালীপাড়া থানা থেকে পুলিশ এসেছিল। খোঁজখবর নিয়েছে।
ধর্ষিতার বড় বোন বলেন, এভাবে যদি চলতে থাকা তাহলে তো কোনো মেয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হবে না। স্কুল-কলেজে যাবে না। তাই আমি আমার বোনের ধর্ষক ও সহায়তাকারীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
ধর্ষিতার বাবা বলেন, আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে জোর করে ধর্ষণ ও মারপিট করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। যাতে করে অন্য কোনো মেয়ে বা বোন এ ঘটনার শিকার না হয়।
প্রতিবেশী মোক্তার সিকদার ও তৌহিদুল হাজরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
কোটালীপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাকারিয়া বলেন, স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। দোষীরা পলাতক রয়েছে। দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আগমীকাল মঙ্গলবার ধর্ষিতাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। বিষয়টির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।