বাল্যবিয়ে শুধু বাংলাদেশেই সমস্যা নয়। বরং এটি বিশ্বব্যাপী অনেক দেশেই একটি প্রধান সমস্যা। ইউএনএফপিএর তথ্য মোতাবেক, যে সকল কারণ সমূহ বাল্যবিবাহের জন্য দায়ী তার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, লিঙ্গ বৈষম্য, জমি-জমা বা সম্পদের চুক্তি, পরিবারের সম্মান রক্ষা, প্রচলিত প্রথা বা চর্চা, নিরাপত্তাহীনতা, বিশেষত যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ বা মহামারীর সময়। অন্যান্য কারণসমূহের মধ্যে আছে- বিয়ের মাধ্যমে দুই পরিবারের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তোলা।
মানবাধিকার সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বলছে, বাল্যবিবাহের প্রভাব মেয়েদের উপর ব্যাপক, যা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও থেকে যায়। কিশোরী বয়সে বা তারও আগে বিবাহিত নারীরা কম বয়সে গর্ভধারণ করার ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগে। কম বয়সে গর্ভধারণ সন্তান জন্মদানে জটিলতা সৃষ্টি করে। গরীব দেশসমূহে অল্প বয়সে গর্ভধারণ শিক্ষার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, যা তাদের অর্থনৈতিক মুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করে। বাল্যবিবাহের শিকার নারীরা সাধারণত পারিবারিক সহিংসতা, শিশু যৌন নির্যাতন এবং বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হয়।
বাংলাদেশে দোলা আক্তার(১৬) নামে এক কিশোরী মেয়েদের বাল্যবিয়ের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি এবং তার সহকর্মীরা মিলে গত দুই বছরে এই দেশের ছয় শতাধিক বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন।
দোলা জানিয়েছেন, তার বয়স যখন মাত্র ১২ তখন আশপাশের অনেকেই তার মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতেন এবং তার নিজের মায়েরও মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার চেয়ে ৮ বছরের বড় একজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।
আরও পড়ুনঃবিতর্কিত কৃষি বিলের জেরে বিক্ষোভে উত্তাল ভারত
দোলা মাত্র ১০ বছর বয়সে ওয়ার্ল্ড ভিশনে যোগ দেন এবং বেশকিছু প্রশিক্ষণও সম্পন্ন হয়েছে তার। বর্তমানে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবীদের সঙ্গে অনেক তরুণ কর্মীদের মধ্যে দোলা অন্যতম। অল্প বয়সে বিবাহের ফলে কি কি সমস্যা হতে পারে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন তারা।
গত বছর তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের সমস্যা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে তার সফলতার কথা তুলে ধরেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ হার যে দেশগুলোতে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। প্রতি ৩টি বিয়ের ২টি হয় বাল্যবিবাহ। ২০০৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেসময়ের ২৫-২৯ বছর বয়সী নারীর মধ্যে ৪৯% এর বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সে। “বিশ্বজুড়ে শিশুদের অবস্থা-২০০৯” এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের ৬৩% -এর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। ২০০৮ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে কোনো মেয়ের প্রতি বাড়তি বছর অবিবাহিত থাকার ফলে সে গড়ে ০.২২ বছর বাড়তি পায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য।