DoinikAstha Epaper Version
ঢাকারবিবার ২৪শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকারবিবার ২৪শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

জয়পুরহাটে স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চলে মরিয়মের

Ellias Hossain
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩ ৮:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জয়পুরহাটে স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চলে মরিয়মের

 

জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটে জীবন যুদ্ধে থেমে নেই দিন মজুর মরিয়ম (৪০)। ক্লান্ত হলেও প্রতিদিনের কাজে থেমে থাকার সুযোগ নেই। সকালের ঘুম ভাংলেই শুরু হয় তার কাজ, চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত । এ ভাবেই কাজের মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে যাচ্ছে তার জীবন । ১৩ বছর আগে বিয়ে হয় বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার নুর ইসলাম (৫০) এর সাথে।

বিয়ের ১ বছর পর তাদের কোলে আসে একটি মেয়ে সন্তান। সন্তান জন্মের ৭ মাস পর জমানো টাকা ও ১ গরু নিয়ে পালিয়ে যায় মরিয়মের স্বামী নুর ইসলাম । সেই থেকে তার সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি দুঃখী মরিয়মের।
স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চলে মরিয়মের।

মরিয়ম জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের দুরুঞ্জ নয়াপাড়া গ্রামের আঃ গফুরের মেয়ে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, তার কর্মস্থল মিলন স্যানেটারিতে গিয়ে কথা হয় মরিয়মের সাথে, তখন তিনি তার জীবনের দুঃখের বিভীষিকাময় কথাগুলি তুলে ধরে বলেন, ৩০ বছর আগে মারা যায় বাবা, দুঃখ কষ্টে বড় হই। তখন আমার বয়স ১০ বছর, তখনো থেকেই বিভিন্ন জায়গায় কাজ করি। এক সময় আমার দুঃখ-কষ্ট দেখে কালাই পৌর এলাকার মিলন স্যানিটারি মালিক তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ দেন । তারপর থেকেই মিলন স্যানিটারিতে ২০ বছর ধরে সততার সাথে কাজ করে আসছি ।

তিনি বলেন, কাজের যাতায়াতের পথে বগুড়া সোনাতলার নুর ইসলাম ফলো করতো। দীর্ঘদিন ধরে পিছনে ঘুরঘুর করে ঘুরতে থাকে নুর ইসলাম। পরে উভয়ের সম্মতিতে গ্রামের লোকজন নুর ইসলাম এর সাথে বিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ঘর সংসারের ১ বছর পর আমরা মেয়ে সন্তান জন্ম লাভ করি। সন্তানের বয়স যখন ৭ মাস তখন স্বামী নুর ইসলাম আমাকে কোনোকিছু না বলেই হঠাৎ টাকা ও গরু নিয়ে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকেই শুরু হয় আমার কষ্টের জীবন। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সাত মাসের এই ছোট সন্তানকে ঘাড়ে নিয়ে কাজ করি মিলন স্যানিটারিতে। চিন্তায় চোখে ঘুম নাই। রাত জেগে চোখের পানি ফেলি। তখন এই দুঃসময়ে আমাকে সাহস জুগিয়েছে কালাই পৌরসভা এলাকার মিলন স্যানিটারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলন ভাই। তিনি ছাড়া এই দুনিয়াতে আমার দেখাশোনা করার আর কেউ নেই। ২০ বছর ধরে মাথা গোজার ঠায় তিনি যুগিয়েছেন। সেই থেকেই এখন অবধি থেমে নেই আমার স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ। আর এই উপার্জন দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছি আমার মেয়ের পড়াশুনা। আমার মেয়ে এখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে।

মরিয়ম আরও বলেন, স্বামী নুর ইসলাম ছেড়ে যাবার ১২ বছর পর আমাকে তালাকের কাগজ পাঠিয়ে দেয়। আমি বিহীন আমার মেয়ের জীবনের কোন মূল্য বা আশা নেই। আমি একদিন পড়ে থাকলেও মেয়েকে দেখার কেউ নেই। আর চেয়ে আমার আর কি জীবন চাইবো? এভাবেই কাঁদেন মরিয়ম।

তিনি আরও বলেন, ২০ বছর ধরে স্যানিটারি এ কাজে আমাকে ভারে করে বালি, সিমেন্ট, পাথর এনে মিক্সড করতে হয়। সেই মিক্সড করা মাল অন্যত্র নিয়ে যেতে হয়। এভাবেই সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলে আমার এ কাজ। তারপর সামাল দিতে হয় নিজের সংসার ও সন্তান। কষ্ট করে কাজ করে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। জায়গা জমি কেনার কোন সমর্থ না থাকায় সরকারি খাস জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এত দুঃখ কষ্টের পরেও মেয়র বা কাউন্সিলর কাছে অনেক বড় বড় অনুদান আসলেও ঈদ চান্দে ৫/১০ কেজি চাল ছাড়া কোন কিছু পাইনা। ৩-৪ শত টাকায় দিন কাজ করে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ করানোর পাশাপাশি কোনোমতে সংসার চালাতে হয়।

পরিশেষে তিনি বলেন, আমার জীবনে যা হয়েছে হয়েছে আমার মেয়ের জীবনে এমন ঘটনা যেন না ঘটে। আর সে জন্যই আমার মেয়েকে জীবন দিয়ে হলেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ করানোর চেষ্টা করছি। যাতে আমার মত মেয়েকে কর্ম করে না খেতে হয়। এ জন্য সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পেলে অনেক বড় উপকার হবে।

মিলন স্যানিটারিতে কর্মরত আইজুল বলেন, আমার ওস্তাদ মরিয়ম। আমি তার পরামর্শ নিয়ে চলি। আমি ছোট থেকেই দেখছি সে খুব কষ্ট করে চলে। মেয়েকে অনেক বড় করার আশা তার। এ জন্য তিনি নিজে খেয়ে না খেয়ে মেয়েকে মানুষ করার চেষ্টা করছে।

স্যানিটারির প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলন আকন্দ বলেন, মরিয়ম একটা বাড়িতে কাজ করার সময় সে বাড়ি থেকে কিছু টাকা হারালে তার উপরে খুব নির্যাতন হয়। তখন সে অসহায় হয়ে পরলে আমার স্যানিটারি প্রতিষ্ঠানে তাকে কাজ শিখায়। এখন সে সব কাজ পারে। তাই পুরুষ মানুষের যা বেতন হয় সে পরিমাণ বেতন তাকে দেয়। অনেকে কষ্ট করে জীবন পার করছে মরিয়ম। সে তার মেয়েকে নিয়ে খাস জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে বসবাস করছে।

কালাই পৌরসভা ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম মন্ডল বলেন, আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবা প্রদান করে আসছি। সে কষ্ট করে জীবন যাপন করছে তা জানি। আমি তাকে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে বলেছি। পরবর্তীতে যা হয় আমি সহযোগিতা করবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, সে ঘর বরাদ্দের জন্য আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো এবং তার সন্তানের যাবতীয় লেখাপড়ার খরচা চালাতে সহযোগিতা করবো।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৫৭
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৫
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০২
  • ১১:৪৭
  • ৩:৩৬
  • ৫:১৫
  • ৬:৩১
  • ৬:১৬