DoinikAstha Epaper Version
ঢাকামঙ্গলবার ১৫ই জুলাই ২০২৫
ঢাকামঙ্গলবার ১৫ই জুলাই ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

জানুয়ারি থেকে জুন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দিনে ১১ খুন

Astha Desk
জুলাই ১৫, ২০২৫ ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

জানুয়ারি থেকে জুন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দিনে ১১ খুন

স্টাফ রিপোর্টারঃ

গত বুধবার দিনের আলোয় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যা। সোহাগকে অনেক মানুষের সামনে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়।

গত ১ জুন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের বিএনপি নেতা মহব্বত হোসেন ও ইউনুছ আলী খুন হন। বিএনপির স্থানীয় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন এ দুই ভাই। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, সারা দেশে গড়ে প্রতিদিন ১১ জন মানুষ খুন হচ্ছেন।

গত মাসে মুরাদনগরের ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অস্বস্তি বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অপরাধীদের ভয়ে এগিয়ে আসছেন না সাধারণ জনগণও। এতে জনমনে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও ক্ষোভ দুটোরই প্রকাশ দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সারা দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া খুনের মামলার তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধ পরিসংখ্যান তৈরি করে পুলিশ সদর দপ্তর। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৯৩০ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে খুন হন ২৯৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে খুনের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০০। পরের মাসে খুনের সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। মার্চে সারা দেশে ৩১৬ জন খুন হয়েছেন। এপ্রিলে ৩৩৬ জন, মে মাসে ৩৪১ জন খুন হন। জুনে চলতি বছরের সর্বোচ্চ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে সারা দেশে মোট ৩৪৩ জন খুন হয়েছেন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এ বছরে প্রতি মাসেই খুনের ঘটনা বাড়ছে। বেশি খুন হচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন, ঢাকা রেঞ্জ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে।

অনেক খুনের পেছনে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের মতো ঘটনা কাজ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন এ খুনের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে মিছিল-সমাবেশ করেছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এসএন মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মিটফোর্ডের ঘটনাটি চরম নৃশংসতার বহিঃপ্রকাশ। অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় নেই,৷ তার পরিচয় একটাই, সে অপরাধী। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

খুনের পাশাপাশি সারা দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডাকাতি, ছিনতাই, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং অপহরণের মতো অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৪টি ডাকাতি হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। এছাড়া এ ছয় মাসে ১১ হাজার ৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে গত এপ্রিলে।

আরো পড়ুন :  কিশোরগঞ্জে ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি ও অবস্থান

অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য এএসএম নাসির উদ্দিন এলান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা যে অর্জনটা করেছিলাম তার মধ্যে এখন একটা পলিটিক্যাল দুর্বৃত্তায়ন ঢুকে গেছে। এ উত্তাপেই মূলত এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের সংকট নিরসনে সরকারকে কঠোর হতে হবে। দলমত নির্বিশেষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। এছাড়া দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না।’

পুরান ঢাকায় সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঠিক দুইদিন পর ১১ জুলাই শুক্রবার খুলনা দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের সংশ্লিষ্টতা পাচ্ছে পুলিশ। মাহবুবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) উপকমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি।’

গতকাল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সারা দেশে আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা তৈরির কথা জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। পাশাপাশি সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

অপরাধের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে মনে করে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘রাজনীতিবিদ বলি বা চিন্তক বলি সবাই একটা কথা বলেন যে পলিটিক্যাল কালচার একটা বড় বিষয়। বিগত সময়ে চারটা কেয়ারটেকার সরকার আমরা দেখেছি। তখন কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর হতে চললেও এখনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে আমার মনে হয় নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকার গঠনের বিকল্প নেই। যত দ্রুত সম্ভব একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সরকার গঠন করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া যেতে পারে।’

বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে। উপরন্তু যদি কোনো অপরাধ সংঘটিত হয় পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ঘটনাগুলোয় পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
[prayer_time]