জাল এনআইডি তৈরির কারিগর সাজ্জাদের প্রতারণার ফাঁদ
রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরশহরের বাসিন্দা ভয়ঙ্কর প্রতারক সাজ্জাদ হোসেন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির নিপুণ কারিগর। নিজেকে পরিচয় দেন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে। তার প্রতারণার শিকার হয়ে এখন শতাধিক নারী-পুরুষ নিঃস্ব। ভুক্তভোগীরা এ নিয়ে বদরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), বয়স্ক ভাতা, বিধবা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে ইতোমধ্যে কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে নিয়েছেন ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এসব ঘটনায় প্রতারণার শিকার কুলসুম বেগম নামে এক নারী ওই প্রতারক সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
বদরগঞ্জ পৌরশহরের পকিহানা ডাক্তারপাড়ার আব্দুস সামাদ মাস্টারের ছেলে সাজ্জাদ। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তিনি মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতা। এভাবে গ্রামের অতিদরিদ্র পরিবারের মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা।
এলাকাবাসী ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে নিজেকে সরকারি বড় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন সাজ্জাদ হোসেন। সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে গড়ে তোলেন সুসম্পর্ক। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মানুষের নানা সমস্যার কথা শুনে সুযোগ নেন তিনি। তাদের নানা প্রলোভন দিয়ে সরকারি চাকরি, দুস্থদের ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহায়তার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ, ঢেউটিনসহ বিভিন্ন অনুদান ও প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া লোভ দেখান।
চাকরি ও ভাতার ধরণ হিসেবে তাদের কাছ থেকে কয়েক দফায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে দেন তিনি। কিন্তু কাউকে কোন চাকরি কিংবা সরকারি অনুদান দিতে পারেননি। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী নারী কুলসুম বেগম (৩৫) গত ৭ এপ্রিল পৌরশহরের পকিহানি ডাক্তারপাড়ায় সাজ্জাদের বাড়িতে যান। দরিদ্র মানুষের দেওয়া টাকা ফেরত চান তিনি। এতে নানা হুমকি-ধমকি দেন সাজ্জাদ। টাকা ফেরত দেবে না বলে তাকে জানিয়ে দেন তিনি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
বাধ্য হয়ে কুলসুম বেগম প্রতারক সাজ্জাদের বিরুদ্ধে গত ১৭ এপ্রিল বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ এ ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছেন অভিযোগকারী কুলসুম বেগম।
প্রতারণার শিকার দামোদরপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী মোনাব্বির হোসেন নামে এক যুবক বলেন, উপজেলা পরিষদে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাজ্জাদ আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও আমাকে চাকরি দিতে পারেনি। এখন টাকা চাইতে গেলে আমাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
একই এলাকার শারমীন আক্তার বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে সাজ্জাদ। একই অবস্থা অন্তত ৭০ জনের ক্ষেত্রেও।
এদিকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়ার কথা বলে অন্তত ১০ নারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে প্রতারক সাজ্জাদ। কিন্তু ভাতা করতে তাদের লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র। বাংলাদেশ সরকারের কার্ড প্রদানকারীর স্বাক্ষর ও ভুয়া বারকোড ব্যবহার করে এনআইডি নম্বর দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেন সাজ্জাদ।
এদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ভাতার আশায় মর্জিনা খাতুন, রওজা খাতুন, আনজুয়ারা খাতুন লিমা ও তাজমিরা খাতুন দুই হাজার করে টাকা দেন সাজ্জাদ হোসেন। পরে এসব জাতীয় পরিচয়পত্রের এনআইডি নম্বর যাচাই করে দেখা যায় পুরোটাই ভুয়া। সাজ্জাদ হোসেন বর্তমানে গা-ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অভিযোগকারী কুলসুম বেগম বলেন, সাজ্জাদ বাড়িতে এসে আমার সঙ্গে বোনের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে গ্রামের প্রায় ৮০ জন বেকার তরুণ-তরুণীকে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখায় সে। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। এখন টাকা চাইতে গিয়ে সাজ্জাদ আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। উল্টো স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নাম বলে আমাকে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে সে।
জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। এমনকি এনআইডি কার্ড তৈরি করে দিইনি। বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।