দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা। বৃহস্পতিবার মহাষষ্ঠী। চণ্ডীপাঠ, ধূপ আর ঢাকের তালে শুরু হচ্ছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। করোনা মহামারির কারণে এবারের দুর্গাপূজায় নেই তেমন আমেজ। দুপুরেই শেষ হবে দেবীর ষষ্ঠীবিহিত পূজা।
সন্ধ্যায় হবে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। জনসমাগম এড়াতে দেয়া হয়েছে কয়েক দফা নির্দেশনা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা।
এবার মহালয়া ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। মহালয়ার ৬ দিন পর সাধারণত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’ মানে অশুভ মাস হওয়ার কারণে কার্তিক মাসে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পঞ্জিকা মতে এবার দেবী দুর্গার আগমন দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, দোলায় আগমন এর অর্থ মড়ক। ফলে, পুজার বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারীর পরিস্থিতি বজায় থাকার আশংকা রয়েছে। তবে, মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমনের ফল শুভ হয়।
পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে এ পূজার আয়োজন করায় এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। আবার রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাত্রার আগে শ্রীরাম চন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবশ্যা তিথিতে। এ জন্যই দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়।
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এবছর ঢাকায় কোনো মন্ডপে কুমারী পূজা উদযাপন করা হবে না। তবে, ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় কুমারী পূজা হতে পারে।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, ‘করোনা অতিমারীর কারণে এবার উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। একারণে এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করছি।’ সপ্তমী তিথিতে বিশ্ববাসীর করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনের জন্য বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, নির্দেশনা মেনে এবারের পূজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে না। অঞ্জলি দানের সময় ফেসবুক লাইভের সহযোগিতা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ‘যেসব জায়গায় সরাসরি অঞ্জলি হবে, সেখানে ২৫ থেকে ৫০ জনের বেশি আসতে পারবেন না। সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টার মধ্যে অবশ্যই পূজা মন্ডপ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই দুর্গা পূজায় আগেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
এছাড়াও, ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান যেন বাজানো না হয়, মাইক বা পিএ সেট যেন ব্যবহার করা না হয়, পূজামন্ডপে ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত দীর্ঘ সময়’ কোনো দর্শনার্থী যেন না থাকে এবং সন্ধ্যার বিরতির পর দর্শনার্থীদের প্রবেশে যেন নিরুৎসাহিত করা হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২শ ২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গতবছরের তুলনায় এবার ১হাজার ১শ ৭৫ টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্য দিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২শ ৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২শ ৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পূজা হচ্ছে ৭শ ৪০টি। গতবছরের চেয়ে এবার মাত্র দুটি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে।
ঢাকা বিভাগে এবার ৭ হাজার ১৪টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৭ হাজার ২শ ৭১টি মন্দিরে। গতবছরের তুলনায় চট্রগ্রাম বিভাগে এবার ৫শ ৫০ টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। এ বিভাগে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে ৩ হাজার ৯০৬টি। খুলনা বিভাগে ৪ হাজার ৬শ ৮৯টি, সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৬শ ৪৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৫শ ৮৪টি, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৭০১ টি, রংপুর বিভাগে ৫ হাজার ২৫০টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৩ হাজার ৪শ ৩৫ টি মন্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মন্ডপ, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামন্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মন্ডপ, শাখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।