ঢাকা ০৭:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo মানবতার ডাক’-এর মহতী উদ্যোগ: মরণ ফাঁদ রাস্তায় ফেরালো জীবনের চলাচল Logo গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ জাতিসংঘ আদালতের Logo মাটিরাঙ্গায় গনধর্ষণের শিকার কিশোরী: আটক-২ Logo শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় পাহাড়ে কাজ করছে বিজিবি Logo ন্যায্য দাবি আদায়ে দীঘিনালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি Logo শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা হবে মোট ১৫ শতাংশ, দুই ধাপে দেওয়া হবে Logo দশমিনায় জেলেদের জিম্মি করে ছাত্রদল নেতার চাঁদাবাজি Logo বেনাপোলে কোটি টাকার বকেয়া আদায়ের দাবিতে আমদানিকারকের সংবাদ সম্মেলন Logo মানবতার আলোর পথে: লালন দর্শনের নতুন পাঠ Logo পরিমাপের ক্ষেত্রে মানসম্মত পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম : ড. ইউনূস

তীব্র গরমে পাকিস্তানে হাঁসফাঁস, একদিনেই প্রায় দেড়শো জনের মৃত্যু

Doinik Astha
Doinik Astha
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
  • / ১০২৬ বার পড়া হয়েছে

তীব্র গরমে পাকিস্তানে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। গত ছয়দিনে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ৫ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একদিনেই উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় দেড়শো জনের লাশ।

এমনকি দেশটির করাচি শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, সেখানে অনুভূত তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে মৃতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। দেশটির ইধি (Edhi) অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা বলছে, তারা সাধারণত প্রতিদিন করাচি শহরের মর্গে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জনের লাশ নিয়ে যায়।

তবে গত ছয় দিনে তারা প্রায় ৫৬৮ টি লাশ সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত মঙ্গলবারই তারা সংগ্রহ করেছে ১৪১টি লাশ।

অবশ্য প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ঠিক কী তা অলাদা করে এখনই বলা যাবে না। তবে করাচির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর ওপরে বেড়ে যাওয়ায় মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। আর উচ্চ আর্দ্রতার কারণে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো গরম অনুভব হচ্ছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।

লোকজন সাহায্যের খোঁজে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছে। করাচির সিভিল হাসপাতালে গত রোববার থেকে বুধবারের মধ্যে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ২৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. ইমরান সারওয়ার শেখ। তাদের মধ্যে বারোজন মারা গেছেন।

ডা. ইমরান শেখ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যাদেরকে হাসপাতালে আসতে দেখেছি তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৬০ বা ৭০ এর দশকে, যদিও তাদের মধ্যে প্রায় ৪৫ বছরের আশপাশের কয়েকজন এবং এমনকি ২০ বছরের বেশি বয়সী এক দম্পতিও রয়েছে।’

যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের বমি, ডায়রিয়া এবং উচ্চমাত্রায় জ্বরসহ নানা উপসর্গ রয়েছে।

ডা. ইমরান সারওয়ার শেখ বলছেন, ‘আমরা যাদের হাসপাতালে আসতে দেখেছি তাদের অনেকেই বাইরে কাজ করছিল। আমরা তাদের বলেছি- তারা যাতে প্রচুর পানি পান করে এবং এই উচ্চ তাপমাত্রায় হালকা পোশাক পরিধান করে।’

বিবিসি বলছে, তীব্র গরমের এই উচ্চ তাপমাত্রা এই সপ্তাহান্তে শুরু হয়। একজন আবহাওয়াবিদ এটিকে ‘আংশিক তাপপ্রবাহ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। পরে জনসাধারণকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ কেন্দ্র এবং ক্যাম্প স্থাপন করে কর্তৃপক্ষ।

গরমের মধ্যে শিশুরা ঝর্ণায় খেলা করছে। মূলত এর মাধ্যমে কিছুটা শীতল হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। মোহাম্মদ ইমরান নামে এক ব্যক্তিও ঠাণ্ডা থাকার জন্য কার্যত লড়াই করে চলেছেন।

সোমবার রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে তিনি বলেন, ‘আমার দিকে তাকাও! আমার জামাকাপড় পুরোপুরি ঘামে ভিজে গেছে’।

অবশ্য যাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল তারা সবাই হাসপাতালে পৌঁছেনি। ওয়াসিম আহমেদ জানতেন, তিনি বাড়িতে এসে সুস্থ বোধ করছেন না। ৫৬ বছর বয়সী এই নিরাপত্তা প্রহরী সবেমাত্র ১২ ঘণ্টার নাইট ডিউটির শিফট শেষ করে বাসায় ফিরেছেন। নাইট ডিউটি করলেও তিনি খুব বেশি তাপমাত্রাই অনুভব করেছেন।

ওয়াসিমের চাচাতো ভাই আদনান জাফর বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি দরজা দিয়ে এসে বললেন, আমি এই গরম আবহাওয়া মোকাবিলা করতে পারব না। তিনি এক গ্লাস পানি চাইলেন। পানি পান শেষ করার পরেই, তিনি ভেঙে পড়েন।’

ওয়াসিমের পরিবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা বলেন, তিনি ইতোমধ্যেই সন্দেহভাজন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। আদনান বলেছেন, তার আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল, তবে এর আগে তিনি এতো গরমে ভোগেননি।

এদিকে উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে করাচির বাসিন্দা কার্যত লড়াই করছে। নিয়মিত লোডশেডিংয়ের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কারণ নিজেদের ঠাণ্ডা রাখতে অনেকেই ফ্যান এবং এয়ার কন্ডিশনারের ওপর নির্ভর করে থাকেন।

মুহম্মদ আমিন নামে এক ব্যক্তি ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে ভুগেছেন। তার এক আত্মীয় বলেন, তাদের ফ্ল্যাটে ক্রমাগত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিল। তার পরিবারের মতে, ৪০ বছরের বেশি বয়সী মুহম্মদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তারপর মারা যান।

মৃত্যুর কারণ এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি, তবে তার পরিবার সন্দেহ করছে, তাপ সম্পর্কিত কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

পাকিস্তানের ডন পত্রিকার মতে, শহরের রাস্তায় জরুরি পরিষেবাগুলো প্রায় ৩০ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। পুলিশ সার্জন সুমাইয়া সৈয়দ এই পত্রিকাকে বলেন, অনেকেই সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত। তবে তাদের শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই।

বিবিসি বলছে, করাচি পাকিস্তানের একমাত্র অঞ্চল নয় যা তীব্র এই তাপ সামলাতে লড়াই করছে। রয়টার্সের তথ্য অনুসারে, গত মাসে সিন্ধ প্রদেশ – যার রাজধানী করাচি – প্রায় রেকর্ড-ব্রেকিং ৫২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে।

পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চরম, মারাত্মক তাপমাত্রায় ভুগছে। ভারতের রাজধানী দিল্লিও ‘অভূতপূর্ব’ তাপপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করে চলেছে। গত মে মাস থেকে সেখানে প্রতিদিনের তাপমাত্রাই ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে, কখনও কখনও তা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।

শহরের চিকিৎসকরা বলছেন, তারা এর আগে এমন কিছু দেখেননি। করাচির বাসিন্দা মোহাম্মদ জেশানের কাছে অবশ্য এটা পরিষ্কার যে সমস্যাটা আসলে ঠিক কী। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘এটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। এটি সারা বিশ্বে ঘটছে। এটা ইউরোপে ঘটছে। তারা তীব্র গরমের মুখোমুখি হলেও তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।’

কিন্তু এখানে দুঃখজনক যে, সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

বিশেষজ্ঞরা একমত, এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হয়ে উঠছে। করাচির এই তীব্র তাপপ্রবাহ আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও তাপমাত্রা কিছুটা কম হওয়ার পূর্বাভাসও রয়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা এখন বর্ষা ঋতুতে তাদের মনোযোগ দিচ্ছেন, যেটি খুব তাড়াতাড়ি শুরু হতে চলেছে এবং এই মৌসুমে ৬০ শতাংশ বৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্যাগস :

তীব্র গরমে পাকিস্তানে হাঁসফাঁস, একদিনেই প্রায় দেড়শো জনের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৯:৩৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

তীব্র গরমে পাকিস্তানে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। গত ছয়দিনে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ৫ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একদিনেই উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় দেড়শো জনের লাশ।

এমনকি দেশটির করাচি শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, সেখানে অনুভূত তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে মৃতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। দেশটির ইধি (Edhi) অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা বলছে, তারা সাধারণত প্রতিদিন করাচি শহরের মর্গে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জনের লাশ নিয়ে যায়।

তবে গত ছয় দিনে তারা প্রায় ৫৬৮ টি লাশ সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত মঙ্গলবারই তারা সংগ্রহ করেছে ১৪১টি লাশ।

অবশ্য প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ঠিক কী তা অলাদা করে এখনই বলা যাবে না। তবে করাচির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর ওপরে বেড়ে যাওয়ায় মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। আর উচ্চ আর্দ্রতার কারণে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো গরম অনুভব হচ্ছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।

লোকজন সাহায্যের খোঁজে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছে। করাচির সিভিল হাসপাতালে গত রোববার থেকে বুধবারের মধ্যে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ২৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. ইমরান সারওয়ার শেখ। তাদের মধ্যে বারোজন মারা গেছেন।

ডা. ইমরান শেখ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যাদেরকে হাসপাতালে আসতে দেখেছি তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৬০ বা ৭০ এর দশকে, যদিও তাদের মধ্যে প্রায় ৪৫ বছরের আশপাশের কয়েকজন এবং এমনকি ২০ বছরের বেশি বয়সী এক দম্পতিও রয়েছে।’

যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের বমি, ডায়রিয়া এবং উচ্চমাত্রায় জ্বরসহ নানা উপসর্গ রয়েছে।

ডা. ইমরান সারওয়ার শেখ বলছেন, ‘আমরা যাদের হাসপাতালে আসতে দেখেছি তাদের অনেকেই বাইরে কাজ করছিল। আমরা তাদের বলেছি- তারা যাতে প্রচুর পানি পান করে এবং এই উচ্চ তাপমাত্রায় হালকা পোশাক পরিধান করে।’

বিবিসি বলছে, তীব্র গরমের এই উচ্চ তাপমাত্রা এই সপ্তাহান্তে শুরু হয়। একজন আবহাওয়াবিদ এটিকে ‘আংশিক তাপপ্রবাহ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। পরে জনসাধারণকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ কেন্দ্র এবং ক্যাম্প স্থাপন করে কর্তৃপক্ষ।

গরমের মধ্যে শিশুরা ঝর্ণায় খেলা করছে। মূলত এর মাধ্যমে কিছুটা শীতল হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। মোহাম্মদ ইমরান নামে এক ব্যক্তিও ঠাণ্ডা থাকার জন্য কার্যত লড়াই করে চলেছেন।

সোমবার রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে তিনি বলেন, ‘আমার দিকে তাকাও! আমার জামাকাপড় পুরোপুরি ঘামে ভিজে গেছে’।

অবশ্য যাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল তারা সবাই হাসপাতালে পৌঁছেনি। ওয়াসিম আহমেদ জানতেন, তিনি বাড়িতে এসে সুস্থ বোধ করছেন না। ৫৬ বছর বয়সী এই নিরাপত্তা প্রহরী সবেমাত্র ১২ ঘণ্টার নাইট ডিউটির শিফট শেষ করে বাসায় ফিরেছেন। নাইট ডিউটি করলেও তিনি খুব বেশি তাপমাত্রাই অনুভব করেছেন।

ওয়াসিমের চাচাতো ভাই আদনান জাফর বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি দরজা দিয়ে এসে বললেন, আমি এই গরম আবহাওয়া মোকাবিলা করতে পারব না। তিনি এক গ্লাস পানি চাইলেন। পানি পান শেষ করার পরেই, তিনি ভেঙে পড়েন।’

ওয়াসিমের পরিবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা বলেন, তিনি ইতোমধ্যেই সন্দেহভাজন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। আদনান বলেছেন, তার আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল, তবে এর আগে তিনি এতো গরমে ভোগেননি।

এদিকে উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে করাচির বাসিন্দা কার্যত লড়াই করছে। নিয়মিত লোডশেডিংয়ের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কারণ নিজেদের ঠাণ্ডা রাখতে অনেকেই ফ্যান এবং এয়ার কন্ডিশনারের ওপর নির্ভর করে থাকেন।

মুহম্মদ আমিন নামে এক ব্যক্তি ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে ভুগেছেন। তার এক আত্মীয় বলেন, তাদের ফ্ল্যাটে ক্রমাগত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিল। তার পরিবারের মতে, ৪০ বছরের বেশি বয়সী মুহম্মদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তারপর মারা যান।

মৃত্যুর কারণ এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি, তবে তার পরিবার সন্দেহ করছে, তাপ সম্পর্কিত কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

পাকিস্তানের ডন পত্রিকার মতে, শহরের রাস্তায় জরুরি পরিষেবাগুলো প্রায় ৩০ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। পুলিশ সার্জন সুমাইয়া সৈয়দ এই পত্রিকাকে বলেন, অনেকেই সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত। তবে তাদের শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই।

বিবিসি বলছে, করাচি পাকিস্তানের একমাত্র অঞ্চল নয় যা তীব্র এই তাপ সামলাতে লড়াই করছে। রয়টার্সের তথ্য অনুসারে, গত মাসে সিন্ধ প্রদেশ – যার রাজধানী করাচি – প্রায় রেকর্ড-ব্রেকিং ৫২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে।

পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চরম, মারাত্মক তাপমাত্রায় ভুগছে। ভারতের রাজধানী দিল্লিও ‘অভূতপূর্ব’ তাপপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করে চলেছে। গত মে মাস থেকে সেখানে প্রতিদিনের তাপমাত্রাই ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে, কখনও কখনও তা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।

শহরের চিকিৎসকরা বলছেন, তারা এর আগে এমন কিছু দেখেননি। করাচির বাসিন্দা মোহাম্মদ জেশানের কাছে অবশ্য এটা পরিষ্কার যে সমস্যাটা আসলে ঠিক কী। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘এটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। এটি সারা বিশ্বে ঘটছে। এটা ইউরোপে ঘটছে। তারা তীব্র গরমের মুখোমুখি হলেও তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।’

কিন্তু এখানে দুঃখজনক যে, সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

বিশেষজ্ঞরা একমত, এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হয়ে উঠছে। করাচির এই তীব্র তাপপ্রবাহ আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও তাপমাত্রা কিছুটা কম হওয়ার পূর্বাভাসও রয়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা এখন বর্ষা ঋতুতে তাদের মনোযোগ দিচ্ছেন, যেটি খুব তাড়াতাড়ি শুরু হতে চলেছে এবং এই মৌসুমে ৬০ শতাংশ বৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।