তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রথম মাদরাসা,কওমি সিলেবাস অনুযায়ী চলবে। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো একটি আলাদা মাদরাসা। স্বতন্ত্র এই মাদরাসাটির নাম রাখা হয়েছে ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা’। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ছাতা মসজিদ রোড এলাকায় অবস্থিত মাদরাসাটি শুক্রবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
শনিবার থেকে সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন।
জানা গেছে, মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই মাদরাসাটি চালু হয়েছে। এই মাদরাসায় পড়ালেখার জন্য হিজড়াদের কোনো খরচ লাগবে না।
বশেমুরবিপ্রবির দুই সাংবাদিককে হয়রানি, থানায় জিডি
২০২০ সালে সরকার স্বীকৃত কওমি সিলেবাস অনুযায়ী মাদরাসাটি পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে ১০ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে অনাবাসিক এই মাদরাসাটির যাত্রা শুরু হয়েছে।
শুরুতে মাদরাসাটিতে তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাদরাসাটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সচিব মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ হুসাইনী।
তিনি বলেছেন, মাদরাসায় নুরানি বিভাগ থেকে নিয়ে হেফজুল কোরআন, দাওরায়ে হাদিস থাকবে। গত বছর সরকার কওমি মাদরাসার যে সিলেবাসের (সনদ) স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই সিলেবাস অনুসারে মাদরাসাটি পরিচালিত হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে মাদরাসার শিক্ষকদের ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হচ্ছে। যারা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আছে তাদের বেতন ৩০ হাজার টাকা। শিক্ষকসহ মাদরাসার পরিচালনার খরচ দিচ্ছে মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন।
দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছে একটি তিন তলা ভবনে। এর প্রতিটি তলায় প্রায় ১২০০ বর্গফুট জায়গা রয়েছে। এখানেই সব শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ব্যাচে ভাগ করে পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হবে। তৃতীয় লিঙ্গের এই মাদরাসায় পড়ার ক্ষেত্রে কোনো বয়স সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ হিজড়া জনগোষ্ঠীর যেকোনো বয়সের মানুষ এই মাদরাসায় ভর্তি হতে পারবেন।
সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, এই সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
এ ধরনের স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পেয়ে খুশি হিজড়া সম্প্রদায়। হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য এই প্রথম দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। হিজড়াদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর সুযোগ দেয়া হলে তারা রাস্তায় নেমে কাউকে বিরক্ত করবে না। তারাও সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে চায়। আমি এজন্য মাদরাসাটির উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।
এদিকে বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে ২০১৩ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেয় শেখ হাসিনা সরকার। সর্বশেষ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিতে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে নিবন্ধন করতে অনুমতি পান তারা। এবার এই জনগোষ্ঠীর জন্য ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিল বাংলাদেশ।