জেলা প্রতিনিধিঃ
দামুড়হুদায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের (টুপি শহিদুল) ঘুষিতে ইসরাফিল মোল্লা (৮০) নামের এক বৃদ্ধর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে দামুড়হুদা মডেল থানার প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসরাফিল মোল্লা দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের পীরপুরকুল্লা গ্রামের নতুনপাড়ার মৃত জোনাব আলী মোল্লার ছেলে।
অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। এ ঘটনায় নিহত ইসরাফিল মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে দামুড়হুদা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে। এদিকে, ময়নাতদন্তের জন্য নিহত ইসরাফিল মোল্লার মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানায়, ইসরাফিল মোল্লা ও একই গ্রামের প্রতিবেশী শমসের আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম, আব্দুল ওহাব ও লিয়াকত আলীর মধ্যে জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। যে কারণে ইসরাফিল দামুড়হুদা থানায় একটি অভিযোগ করেন। এদিকে নজরুলরাও পাল্টা অভিযোগ করেন ইসরাফিলের বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য দুই পক্ষকেই থানায় ডাকেন দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক।
নজরুলদের পক্ষ নিয়ে আসেন দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম এবং অ্যাড. আবু তালেব। দুইপক্ষ একত্রিত হলে উভয়পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে মীমাংসাটি ইসরাফিলদের পক্ষে চলে যায়। পরে থানা থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রতিপক্ষ নজরুল, ওহাব ও লিয়াকত মিলে ইসরাফিলের চাচাতো ভাই নষ্কর আলী মোল্লা ও নাতি ছেলে আল আমিনকে মারধর করেন। ইসরাফিল মোল্লা ঠেকাতে গেলে দামুড়হুদা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাঁকে একটি ঘুষি মারেন। এসময় ইসরাফিল মোল্লা রাস্তার ওপর পড়ে গেলে তাঁকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
এসময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসরাফিল মোল্লাকে মৃত ঘোষণা করেন।ইসরাফিলের ভাতিজা বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আমার বৃদ্ধ চাচা ইসরাফিলকে থানার ভেতর থেকে গালিগালাজ করতে করতে গেটের সামনে এসে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারে। এসময় চাচা অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরে আমরা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা চিৎলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান, হাসপাতালের নেওয়ার আগেই চাচার মৃত্যু হয়েছে। আমরা আমার চাচার মুত্যুর সঠিক বিচার চাই। শহিদুল ইসলাম আমার চাচাকে মেরে ফেলেছে। চেয়ারম্যান বলে যেন অপরাধী ছাড়া না পায়।’দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তানভির মোহাম্মদ আসিফ বলেন, পরিবারের সদস্যরা দুপুরে বৃদ্ধ ইসরাফিলকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় নিহতের নাতি আল-আমিন বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৯ ধারার ৩০২/৩৪, তারিখ ১৬/০৪/২১। নিহত ইসরাফিল মোল্লার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রির্পোট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
রিপোর্ট সাপেক্ষ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এদিকে, ইসরাফিলের মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে দামুড়হুদা থানার (ওসি) আব্দুল খালেক এবং ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ওরফে টুপি শহিদুল দুপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সালিশ বৈঠক বসায়।
যা পুলিশের এখতিয়ার বহির্ভূত হয়।এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঝে মধ্যে এ ধরণের শালিসের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হয়। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। এটি গুজব ও সম্পূর্ণ মিথা।’