রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর সাহাবি হজরত উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞাসা করেন- হে আল্লাহর রাসুল! মুক্তির উপায় কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি তোমার জবান সংযত রাখ, (পরকালে) তোমার বাসস্থান যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয় আর তোমার গোনাহের জন্য কাঁদো।’ (তিরমিজি)
দুনিয়াতে যত ফেতনা-ফাসাদ ও অপকর্ম সংঘটিত হয় তার অধিকাংশই জিহ্বা ও লজ্জা স্থানের মাধ্যমে হয়। এ দুটোকে নিয়ন্ত্রণের অঙ্গীকারে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো ঈমানদার বান্দার মুক্তির জিম্মাদার হবেন বলেও হাদিসে এভাবে ঘোষণা দিয়েছেন-
হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দুই উরুর (পায়ের) মধ্যবর্তী স্থান (লজ্জাস্থান)-এর নিরাপত্তার জামানত দেবে, আমি তাঁর জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (বুখারি)
সুতরাং বোঝা গেল, যেসব বিষয় মানুষের মুক্তির অন্তরায় তন্মধ্যে প্রথমেই জবান বা জিহ্বার অবস্থান। এ জিহ্বাই মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সফরে মানুষের ধ্বংস থেকে মুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট নসিহত করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একবার প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কোনো এক সফরে ছিলাম। সফরের মধ্যে তাঁকে একান্তে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম-
হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্তির উপায় হিসেবে দীর্ঘ উপদেশ দিলেন। এক পর্যায়ে বললেন-
এ সব কিছুর মূল কী, আমি কি তোমাকে বলে দেব?
আমি বললাম, জী, হে আল্লাহর নবি! তখন তিনি নিজের জিহ্বা টেনে ধরে বললেন, ‘এটাকে সংযত কর’।
এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আমাদের কথাবার্তার জন্যও জিজ্ঞাসিত হব?
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আরে! জবানের (জিহ্বার) কামাই-ই তো মানুষকে নিন্মমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
উল্লেখিত হাদিসগুলোর বর্ণনা ও আলোচনার আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, মানুষের মুক্তির অন্যতম উপায় হচ্ছে, জবান বা জিহ্বার হেফাজত তথা নিয়ন্ত্রণ করা। আর তাতেই অধিকাংশ মানুষের মুক্তি সুনিশ্চিত।
কেননা মুখে যা আসে তা চিন্তা-ভাবনাহীনভাবে বলে বেড়ানোয় রয়েছে মারাত্মক ক্ষতি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে দিকেও তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় বান্দা কখনও আল্লাহ্র সন্তুষ্টির কোনো কথা বলে অথচ সে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আবার বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে; যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ ওই কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং মুমিন বান্দার উচিত, কথা বলার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া। অবচেতন মনে, চিন্তাভাবনা ছাড়া এমন কোনো কথা না বলা, যে কথা বললে পরকালীন জীবনে মুক্তি মিলবে না। মুক্তির বিষয়টি হয়ে পড়বে অনেক কঠিন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা ও সংযত হওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত আমল যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমে মুক্তি নিশ্চিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।