‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নওগাঁতে শুরু হয়েছে সাতদিনব্যাপী বৃক্ষ মেলা। সবুজায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই মেলা স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের নওজোয়ান মাঠে মেলার উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিরোদা রাণী রায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নওগাঁ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. মেহেদীজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক এবং সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান। মেলার আয়োজনে নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বন বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উদ্বোধনের আগে শহরের প্রাইমারী ট্রিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) মাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়, যা নওজোয়ান মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা, স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্যরা, এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন, যা মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এবারের মেলায় ৩০টি স্টল রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিক্রির পাশাপাশি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্টলগুলোতে ফলজ, বনজ, ওষধি এবং সৌন্দর্যবর্ধক গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। এতে অন্যতম আকর্ষণীয় বৃক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, নারিকেল, লেবু, বেল, নিম, আকাশমণি, মহুয়া, বকুল, হাসনাহেনা, এবং রাধাচূড়া। এছাড়া, মেলায় ঔষধি গাছের মধ্যে তুলসী, অর্জুন, থানকুনি, হরিতকী, বহেরা, এবং অশ্বগন্ধার চারা বিক্রি হচ্ছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বহুল জনপ্রিয়। মেলায় যারা বাগান করতে আগ্রহী, তাদের জন্য বাগান গড়ার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণও পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তারা বলেন, “পরিবেশ সংরক্ষণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের মেলা আমাদের গাছ লাগানোর গুরুত্ব এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে।” বক্তারা আরও জানান, গাছ শুধু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে না, এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ফলজ গাছ যেমন আম, কাঁঠাল, এবং পেয়ারা স্থানীয় কৃষকদের জন্য আয় বৃদ্ধির একটি বড় উৎস। মেলার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে গাছ রোপণ ও পরিচর্যার বিষয়ে সাধারণ মানুষ আরও আগ্রহী হয়। মেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃক্ষরোপণ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানছে এবং তাদের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার চিন্তা গড়ে উঠছে। এছাড়া, মেলায় প্রতিদিন বৃক্ষরোপণ, গাছের যত্ন, ও বাগান পরিকল্পনার ওপর বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করা হবে। এই সেমিনারগুলোতে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন এবং গাছের উপকারিতা ও সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করবেন। মেলাটি আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এবং শেষ দিনে বিশেষ আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ এই মেলার মাধ্যমে সবুজায়নের প্রসার ঘটাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা ভবিষ্যতে এই ধরনের মেলার আয়োজন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে যাতে আরও বেশি মানুষ গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ হয় এবং দেশের সবুজায়নে অবদান রাখতে পারে। এবারের বৃক্ষ মেলা শুধু নওগাঁর মানুষদের জন্য নয়, বরং গোটা বাংলাদেশের জন্য একটি সুদূরপ্রসারী বার্তা বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। মেলার এক ব্যবসায়ী মো. হেলাল হোসেন, “আমাদের স্টলে আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, নারিকেল, নিমসহ নানা প্রজাতির গাছের চারা আছে। এছাড়াও ঔষধি গাছ যেমন তুলসি, থানকুনি, অশ্বগন্ধার চারা ভালো বিক্রি হচ্ছে।স্থানীয় ক্রেতারা এগুলো কিনতে আগ্রহী।” আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, “মেলায় প্রচুর মানুষ ভিড় করছেন, বিশেষত সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্রেতাদের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। ফলজ গাছগুলোর দিকে বেশি ঝোঁক দেখছি, তবে দুর্লভ বনজ ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছগুলোর প্রতি মানুষের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। আমি মনে করি, এ বছর মেলার বিক্রি খুব ভালো হবে।” মেলায় আগত এক ক্রেতা বিলকিস হোসেন বিজলী জানান, “মেলায় যে গাছগুলোর চারা বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে, যার জন্য দাম স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি মনে হয়েছে। সচরাচর আমরা যে সকল গাছ কিনে থাকি সেগুলোর দাম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে মেলার পরিবেশটা চমৎকার এবং গাছের মানও ভালো।”