মহামারির মধ্যেও ক্ষমতাসীন দল ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শনিবার ছুটির দিনে বৃহৎ পরিসরে সামরিক কুচকাওয়াজে নতুন সমরাস্ত্রের প্রদর্শন করলো পারমাণবিক ক্ষমতাধর উত্তর কোরিয়া। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ভোরের কুচকাওয়াজে হাজির ছিলেন সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন।
বিবিসি এক অনলাইন প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে লিখেছে, উত্তর কোরিয়া সাধারণত নতুন কোনো ক্ষেপণাস্ত্র এবং অস্ত্র প্রদর্শন করতে এমন বিশাল কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শনিবার সকালের কুচকাওয়াজে সময় উত্তর কোরিয়া নতুন একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শন করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, কুচকাওয়াজে ১৩ চাকার একটি সামরিক বাহনে করে প্রদর্শিত নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র হয়তো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ওপেন নিউক্লিয়ার নেটওয়ার্কের সহকারী পরিচালক মেলিসা হ্যানহাম ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘দানব’ বলে অভিহিত করেছেন।
করোনা সংকট উত্তোরণে আফ্রিকার প্রয়োজন ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার
দুই বছর পর প্রথমবারের মতো দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক কয়েক দিন আগে বিশাল এই কুচকাওয়াজের আয়োজন করলো পিয়ংইয়ং। ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের প্রথম সম্মেলনের পর কুচকাওয়াজে কোনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শন করা হয়নি।এ ছাড়াও প্রদর্শন করা হয়েছে হাওয়াসং-১৫ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র। উত্তর কোরিয়া এ পর্যন্ত যতগুলো ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে এটির পাল্লা সবচেয়ে বেশি। এটা দেখে মনে হয়েছে এটা হয়তো ডুবোজাহাজ থেকে ছোড়া যাবে এমন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। যাকে বলা হয় এসএলবিএম।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী শনিবার ভোরেরও আগে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। তবে কেন এত ভোরে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হলো তার কারণ অবশ্য এখনও জানা যায়নি।বিবিসি জানিয়েছে, কোনো বিদেশি গণমাধ্যম ও বিদেশি নাগরিকের ওই কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকার অনুমতি ছিল না। ফলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বিশ্লেষকদের।
প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমা ধাঁচের একটি স্যুট পরিহিত উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন শিশুদের কাছ থেকে ফুল গ্রহণ করছেন। এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, আত্মরক্ষা এবং বহিঃশত্রুর আঘাত মোকাবিলার জন্য তার দেশ নিজেদের সামরিক সক্ষমতা জোরদার করার এই কাজ অব্যাহত রাখবে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার দেশের একজন মানুষও এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হননি। শয়তান এই ভাইরাসে সংক্রমণের শিকার হয়ে বিশ্বজুড়ে যেসব মানুষ অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’
তবে উত্তর কোরিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নেই—এমন দাবি বারবার করলেও কিম জং উনই আবার করোনার বিস্তার ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। উত্তর কোরিয়ায় করোনার কোনো সংক্রমণ নেই পিয়ংইয়ংয়ের এমন দাবি অবশ্য মানতে নারাজ বিশ্লেষকরা।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এবারের কুচকাওয়াজে অবশ্য কম মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তবে কিম জং উন-সহ উপস্থিত কাউকেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি।গত ডিসেম্বরের শেষে প্রতিবেশী চীনে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পর জানুয়ারিতেই সীমান্ত বন্ধ করে দেয় উত্তর কোরিয়া। পরমাণবিক শক্তিধর এই দেশ সে সময়েই কঠোর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আরোপ করে।