ঢাকা ০৩:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শোক Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে প্রবাস থেকে শোক প্রকাশ করলেন সেলিম রেজা Logo নলছিটিতে বিএনপির পক্ষে জনসংযোগ ও পথসভা করলেন এ্যাড. শাহাদাৎ হোসেন Logo কাঁঠালিয়ায় গণঅধিকার পরিষদের মনোনয়ন প্রত্যাশির লিফলেট বিতরণ Logo পানছড়িতে জামায়াতের মাসিক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত Logo ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি নেতা সেলিম রেজার জনপ্রিয়তা বেড়েছে Logo কিশোরগঞ্জে সুপারি চুরি করতে গিয়ে গাছ ভেঙে চোরের মৃত্যু Logo মানবতার ডাক’-এর মহতী উদ্যোগ: মরণ ফাঁদ রাস্তায় ফেরালো জীবনের চলাচল Logo গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ জাতিসংঘ আদালতের Logo মাটিরাঙ্গায় গনধর্ষণের শিকার কিশোরী: আটক-২

নারায়ণগঞ্জে তিন মাসে ৩০ ধর্ষণ, ‘নিরুপায়’ প্রশাসন

News Editor
  • আপডেট সময় : ০৫:০৭:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অক্টোবর ২০২০
  • / ১০৮১ বার পড়া হয়েছে

কখন অভিযোগ উঠেছে সন্তানের সামনে মাকে গণধর্ষণ। কখনও আবার এক ঘরে ধর্ষণ হয়েছে দুই বোন। সবার সামনে রাস্তা থেকে তুলে নিয়েও করা হচ্ছে পালাক্রমে ধর্ষণ। কোন ভাবেই যেন থামছে না ধর্ষণের অভিযোগ। পুলিশ বলছে, ‘সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, বিভিন্ন জেলার মানুষের বসবাসে এ অপরাধ বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণের মামলার মূলে নারীর সম্মতিতেও ঘটছে শারীরিক সম্পর্ক।’

গত ৩ মাসে নারায়ণগঞ্জে অন্তত ৩০টি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে বন্দরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। তারপরই আছে রূপগঞ্জ। বন্দরে ৭, রূপগঞ্জে ৬, ফতুল্লায় ৫, সদর থানায় ৪, সোনারগাঁয়ে ২, আড়াইহাজার ও সিদ্ধিরগঞ্জে ঘটেছে ৩টি করে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন,‘ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে কাজ করছে মানুষের মূল্যবোধের অভাব। সমাজে সচেতনতা এখনো তৈরি হয়নি। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পুলিশের পক্ষে একা অপরাধ নির্মূল সম্ভব নয়, এ জন্য সব স্তরের মানুষের সাহায্য প্রয়োজন। আমি ৯ মাস হলো এসেছি নারায়ণগঞ্জে, এই সময়ে ধর্ষণ অন্য সময়ের চেয়ে কম। ধর্ষণ হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এমনকি বেশির ভাগ ধর্ষণের মামলার মূলে নারীর সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক। পরবর্তীতে সম্পর্কে ফাটল ধরলে ধর্ষণের মামলা করছেন নারী।’

তবে নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমীর হোসেন স্মিথ ভিন্ন মত প্রকাশ করে বলেন, ধর্ষণের পিছনে বড় একটি কারণ প্রশাসনের দুর্বলতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রীদা ও বিচারহীনতা। বাংলাদেশে কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলে বিচারের আশায় বছরের পর বছর ধৈর্য ধরতে হয়। এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিচার পান না। এছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, অসচেতনতাও এর বড় একটি প্রভাব বলে মনে করেন তিনি।

ফতুল্লায় থানার আফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম জানান, শিল্প নগরী হওয়ার কারণে এখানে বাইরে থেকে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি। তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা অনেক দিন ধরে সম্পর্কে আছে কিন্তু পরে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় থানায় এসে মামলা করেন। থানায় যে কোন অভিযোগ আসলেই আমরা আইনের পরিপেক্ষিতে তৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না হয়, সেই জন্য আমরা প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক করি এবং আমরা যেখানেই যাই মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি। তাছাড়া সবাইকে বুঝিয়ে দেয়া হয়- যারা এইসব কাজের সাথে লিপ্ত আইনে কাছে তাদের কোন ঠাঁই নাই। তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবেই।

সদর থানার আফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সর্বদা ধর্ষণের বিষয়ে সোচ্চার, আমরা প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক করছি। আমরা মহিলাদের বিভিন্নভাবে সতর্ক করছি, যাতে তারা রাতে বেশি বাইরে না থাকে। তাদের আমরা ৯৯৯ নম্বর টির সাথে অবগত করাচ্ছি, যে কোন সমস্যা হলে তৎক্ষণিক আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে।

আড়াইহাজার থানার আফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের পেছনে মনে করি মানুষের ভিতর সামাজিক সচেতনতা এবং ধর্মীয় অনুভূতি কমে যাওয়া। তাদের সামাজিক সচেতনতা এবং ধর্মের প্রতি বিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে হবে। এছাড়া আমাদের যুবসমাজ বিভিন্ন আসামাজিক কার্যকলাপের সাথে লিপ্ত এর পিছনে আনলাইরে বিভিন্ন পর্নোসাইট এর ও ভূমিকা রয়েছে।

বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া জানান, বাবা-মার যে দায়িত্ব; সেই ব্যাপারে অনেকেই অসচেতন। এখানকার মানুষের সামাজিক সচেতনতাটাও কম। বেশির ভাগ লোকই বাইরের জেলা থেকে এসে বসবাস করছে। আমরা সবাইকে প্রতি মিটিংয়ে সচেতন করি এবং তাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে বলি।

নারায়ণগঞ্জে তিন মাসে ৩০ ধর্ষণ, ‘নিরুপায়’ প্রশাসন

আপডেট সময় : ০৫:০৭:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অক্টোবর ২০২০

কখন অভিযোগ উঠেছে সন্তানের সামনে মাকে গণধর্ষণ। কখনও আবার এক ঘরে ধর্ষণ হয়েছে দুই বোন। সবার সামনে রাস্তা থেকে তুলে নিয়েও করা হচ্ছে পালাক্রমে ধর্ষণ। কোন ভাবেই যেন থামছে না ধর্ষণের অভিযোগ। পুলিশ বলছে, ‘সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, বিভিন্ন জেলার মানুষের বসবাসে এ অপরাধ বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণের মামলার মূলে নারীর সম্মতিতেও ঘটছে শারীরিক সম্পর্ক।’

গত ৩ মাসে নারায়ণগঞ্জে অন্তত ৩০টি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে বন্দরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। তারপরই আছে রূপগঞ্জ। বন্দরে ৭, রূপগঞ্জে ৬, ফতুল্লায় ৫, সদর থানায় ৪, সোনারগাঁয়ে ২, আড়াইহাজার ও সিদ্ধিরগঞ্জে ঘটেছে ৩টি করে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন,‘ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে কাজ করছে মানুষের মূল্যবোধের অভাব। সমাজে সচেতনতা এখনো তৈরি হয়নি। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পুলিশের পক্ষে একা অপরাধ নির্মূল সম্ভব নয়, এ জন্য সব স্তরের মানুষের সাহায্য প্রয়োজন। আমি ৯ মাস হলো এসেছি নারায়ণগঞ্জে, এই সময়ে ধর্ষণ অন্য সময়ের চেয়ে কম। ধর্ষণ হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এমনকি বেশির ভাগ ধর্ষণের মামলার মূলে নারীর সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক। পরবর্তীতে সম্পর্কে ফাটল ধরলে ধর্ষণের মামলা করছেন নারী।’

তবে নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমীর হোসেন স্মিথ ভিন্ন মত প্রকাশ করে বলেন, ধর্ষণের পিছনে বড় একটি কারণ প্রশাসনের দুর্বলতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রীদা ও বিচারহীনতা। বাংলাদেশে কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলে বিচারের আশায় বছরের পর বছর ধৈর্য ধরতে হয়। এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিচার পান না। এছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, অসচেতনতাও এর বড় একটি প্রভাব বলে মনে করেন তিনি।

ফতুল্লায় থানার আফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম জানান, শিল্প নগরী হওয়ার কারণে এখানে বাইরে থেকে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি। তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা অনেক দিন ধরে সম্পর্কে আছে কিন্তু পরে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় থানায় এসে মামলা করেন। থানায় যে কোন অভিযোগ আসলেই আমরা আইনের পরিপেক্ষিতে তৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না হয়, সেই জন্য আমরা প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক করি এবং আমরা যেখানেই যাই মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি। তাছাড়া সবাইকে বুঝিয়ে দেয়া হয়- যারা এইসব কাজের সাথে লিপ্ত আইনে কাছে তাদের কোন ঠাঁই নাই। তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবেই।

সদর থানার আফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সর্বদা ধর্ষণের বিষয়ে সোচ্চার, আমরা প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক করছি। আমরা মহিলাদের বিভিন্নভাবে সতর্ক করছি, যাতে তারা রাতে বেশি বাইরে না থাকে। তাদের আমরা ৯৯৯ নম্বর টির সাথে অবগত করাচ্ছি, যে কোন সমস্যা হলে তৎক্ষণিক আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে।

আড়াইহাজার থানার আফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের পেছনে মনে করি মানুষের ভিতর সামাজিক সচেতনতা এবং ধর্মীয় অনুভূতি কমে যাওয়া। তাদের সামাজিক সচেতনতা এবং ধর্মের প্রতি বিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে হবে। এছাড়া আমাদের যুবসমাজ বিভিন্ন আসামাজিক কার্যকলাপের সাথে লিপ্ত এর পিছনে আনলাইরে বিভিন্ন পর্নোসাইট এর ও ভূমিকা রয়েছে।

বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া জানান, বাবা-মার যে দায়িত্ব; সেই ব্যাপারে অনেকেই অসচেতন। এখানকার মানুষের সামাজিক সচেতনতাটাও কম। বেশির ভাগ লোকই বাইরের জেলা থেকে এসে বসবাস করছে। আমরা সবাইকে প্রতি মিটিংয়ে সচেতন করি এবং তাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে বলি।