নির্বাচন নিয়ে কারো উপর আস্থা নেই বিএনপির, চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়-বিএনপি
আস্থা ডেস্কঃ
দেশের মানুষের চলমান সংগ্রামে বিএনপি সর্বাত্মক সমর্থন প্রত্যাশা করে, যেন অচিরেই বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন হয়। বিএনপি একসঙ্গে গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিগুলো পুনঃস্থাপন করতে চায়, যেন বাংলাদেশে আবারও প্রতিষ্ঠিত হয় আইনের অনুশাসন, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
বিএনপি বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ না করার জন্য চীনের রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটির সঙ্গে তাঁর নিজের বক্তব্যই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, তিনিই আবার বলছেন বর্তমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত।
বিএনপির ভাষায়, রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন সমগ্র জাতি গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের প্রয়াসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে।
দলটি বলছে, চীন বাংলাদেশের ‘সংবিধান অনুযায়ী’ আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন, তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়।
দেশের নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয় বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। শনিবার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বিএনপি বলেছে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন, তা বিএনপি ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা জনগণের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। রাষ্ট্রদূত ওয়েন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সংবিধান মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর এই উদ্বেগকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি এটিও মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনকারী দল হিসেবে বিএনপি সব সময় সেই সংবিধানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, যা জনগণ দ্বারা অনুমোদিত ও গৃহীত।
দুঃখজনকভাবে, ভোট ডাকাতির অপসংস্কৃতির ধারক হিসেবে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অপপ্রয়াসে, বিতর্কিত সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার।
এতে আরো বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, সর্বজনস্বীকৃত ও বহুল প্রশংসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাতিল করেছে।
সাংবিধানিক আইনজ্ঞ ও সুশীল সমাজের বিশেষজ্ঞ মতামত এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে এই দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠী জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পরপর দুইটি প্রহসনমূলক জাতীয় নির্বাচন স্পষ্টতই প্রমাণ করেছে যে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, নির্বাচনের নামে যে রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তায়ন, তাতে অনেক ক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি চিহ্নিত অংশ।
জনগণের একটি সুবিশাল অংশ গত দশ বছরে ভোট প্রদানের কোনো সুযোগ পায়নি। আর তাই, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন ও কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার অধীনে নয়, বরং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাচ্ছে।
তবু বাস্তবতাকে অস্বীকার করে বর্তমান সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে জানিয়ে মিডনাইট ফ্যাসিস্ট সরকার একগুঁয়েমি আচরণ ও নজিরবিহীন বলপ্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। এতে এটিই পুনঃপ্রমাণিত, নির্বাচনে কারচুপির নীলনকশা সাজিয়ে, আরো একটি ভোট ডাকাতির নির্লজ্জ নাটক মঞ্চস্থের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যথারীতি জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়।
বিবৃতিতে দলটি আরো বলেছে, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যবসা, বাণিজ্য, জ্ঞান ও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের ভিত্তিতে। বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনেই কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত। তাই বিএনপি চীনকে আহ্বান করছে, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির প্রতি আলোকপাত করার জন্য।