বশেমুরবিপ্রবি ট্রেজারারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের অভিযোগ
মোঃ শাহাজান ইসলাম/বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
সভায় শিক্ষকদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক সমিতি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত বুধবার উপাচার্যের অফিস কক্ষে “আপগ্রেডেশন ও ডিউডেট প্রাপ্যতার বিষয়ে জটিলতা নিরসনকল্পে গঠিত কমিটি”র একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, সকল অনুষদের ডিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার, ডেপুটি রেজিষ্ট্রারসহ ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন বিশেষজ্ঞ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ মোবারক হোসেন শিক্ষকদের দীর্ঘদিন যাবৎ জটিলতার কারণে আটকে থাকা আপগ্রেডেশন ও ডিউডেট প্রাপ্যতার বিষয়টিতে অতিরিক্ত জাজমেন্টাল হয়ে এসব “অপ্রয়োজনীয়-বাজে” উল্লেখ করে মত প্রকাশ করতে থাকেন। তবে এ ব্যাপারে তাকে শিক্ষকদের পদোন্নতি-সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্ব কোনো ধারণার বশবর্তী হয়ে জাজমেন্টাল না হওয়ার জন্য সভা চলাকালে উপস্থিত সদস্যদের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এতে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ইস্যুকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে টেনে এনে বিনা উস্কানিতে বিনা কারণে সভায় উপস্থিত সকল শিক্ষকের সামনে বশেমুরবিপ্রবি সকল শিক্ষককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ অশ্রাব্য গালিগালাজ করে সভা ত্যাগ করেন বলে জানা যায়।
তবে বিষয়টি সভার আলোচনার কোনো বিষয় ছিল না এবং এ বিষয়ে সভার কেউ তাঁর সাথে কোনো ধরনের মতবিনিময়ও করেননি বলেও বিবৃতিতে বলা হয়। সভায় ট্রেজারারের এমন অকথ্য গালিগালাজ শুনে উপস্থিত সকলে স্থম্ভিত ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় উক্ত ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ট্রেজারারের এরূপ ভাষার ব্যবহার ও কুরুচিপূর্ণ মনোভাবে অসম্মানিত বোধ করে সভাস্থল ত্যাগ করেন বলে জানা যায়।
বিবৃতির তথ্যমতে, ইতোপূর্বে তাঁর এ ধরনের ছাপার অযোগ্য ভাষার ব্যবহার করার সাক্ষীও হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তা। তবে এতদিন তাঁর বয়স বিবেচনায় এরূপ বেফাঁস মন্তব্য এড়ানো গেলেও, এবারের ঘটনা সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে বলেই তাঁরা সবাই মনে করেছেন। এমনকি কিছুদিন পূর্বে ভিসি বাংলোতে বসেও তিনি অত্র বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় মন্তব্য করেছিলেন বলে জানা যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষক সমিতি বর্তমান ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ মোবারক হোসেনের এমন আচরণ ও ভাষার ব্যবহারকে অত্যন্ত ঘৃণিত ও গর্হিত অপরাধ বলে বিবেচনা করছে। তাছাড়া, ট্রেজারারের মতন দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে কোন ব্যক্তির এ ধরণের অশ্রাব্য, অকথ্য, কুরুচিপূর্ণ ও অপরিশীলিত ভাষা ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই এবং এই আচরণ স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে তিনি নৈতিকভাবে উক্ত পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এবং ট্রেজারারের তাঁর এমন আচরণ ও অপরিশীলিত ভাষার ব্যবহার একান্তভাবে হয় মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ কিংবা নীচু মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে জানান তারা।
উভয় বিবেচনাতেই তিনি উক্ত ট্রেজারার পদে বিবেচনার জন্য উপযুক্ত নন বলেই বশেমুরবিপ্রবি’র শিক্ষক সমিতি স্পষ্টভাবে মনে করছে। এবং আগামী শনিবারের (২৭মে) মধ্যে ট্রেজারার যদি লিখিতভাবে সকল শিক্ষকদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করেন এবং ভবিষ্যতে এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি দেন, তবে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের সাথে নিয়ে তাঁর বিষয় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ মোবারক হোসেনের সাথে মুঠোফোনে বিবৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিতো এব্যাপারে এখোনো কিছু জানি না। কি বলব এখন! আমি ঢাকায় আছি, পরে কথা বলব৷ তবে বিবৃতির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়েই তিনি ফোন রেখে দেন।
ঘটনার প্রেক্ষিতে উপাচার্য ড. এ. কিইউ. এম. মাহবুব এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শিক্ষক সমিতির সদস্যরাও শিক্ষক আমরাও শিক্ষক। ট্রেজারার মহোদয় বৃদ্ধ মানুষ। ভুল হতে পারে যে কারোর দ্বারাই। আমরা চাইনা কেউ অপপ্রচার চালুক এসব বিষয় নিয়ে। এসব ভুল বোঝাবুঝি আমাদের নিজেদের মধ্যে বসে সমাধান করা হবে। সবার প্রতি আমার আহ্বান থাকবে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নষ্ট করবেন না।