দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে অবশেষে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চীনের অভিনন্দন ।
শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, মার্কিন নাগরিকদের রায়কে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। বাইডেন এবং হ্যারিসকে অভিনন্দন।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বেইজিং এবং ওয়াশিংটনের পাশাপাশি সারাবিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
মাছে করোনা, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি নিষিদ্ধ চীনে
রাশিয়া এখনও বাইডেন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়নি।
চার বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যে সব বিশ্বনেতা তাকে প্রথম দিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
৩ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চারদিন পর শনিবার (০৭ নভেম্বর) বাইডেনকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে মার্কিন গণমাধ্যম। মাঝখানে প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলও টুইটারে, টেলিগ্রামে কিংবা ফোনকল- কোনো মাধ্যমেই বাইডেনকে অভিনন্দন জানায়নি মস্কো।
গণমাধ্যমকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, সঠিক পদক্ষেপ হলো-নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি।
শনিবার মার্কিন গণমাধ্যমের সম্ভাব্য ফলাফলে বাইডেনকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ঘোষণার পরই বিশ্বনেতাদের অভিনন্দনে ভাসছেন তিনি। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তথ্য প্রমাণ ছাড়া বলে বেড়াচ্ছেন মার্কিন নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের একদল নির্বাচনী কর্মকর্তা সরাসরি ট্রাম্পের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন, মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে সুরক্ষিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রকে কি বার্তা দিয়েছে?
চীনের নেতারা বিশেষ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বাইডেনের বিজয়ের ফলাফলকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের আইনি চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও জানুয়ারিতে বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলেও প্রত্যাশা বেইজিংয়ের।
এর আগে চীন সরকার জানায়, বাইডেনের বিজয়ী ঘোষণার দিকে তাকিয়ে আছে তারা। অভিনন্দন জানিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানান, আমরা বিশ্বাস করি মার্কিন নির্বাচনের ফল দেশটির আইন এবং নীতি দ্বারা নির্ধারিত হবে।
বিশ্বের পরাশক্তি দুই দেশের মধ্যে চরম বৈরি সম্পর্ক বিরাজ করছে। ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে সম্পর্ক খারাপের সূচনা হয়। করোনা ভাইরাসকে চীনা ভাইরাস এবং কুং ফ্লু আখ্যা দিয়ে সম্পর্ক অবনতিতে আরো ভূমিকা রাখেন তিনি।
গুপ্তচরবৃত্তি, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ে সামরিক স্থাপনা নির্মাণ, চীনের পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়ানে মুসলিম সংখ্যালঘু উইঘুরদের গণকারাগারে আটকে রাখাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চীনা-মার্কিন উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের জন্য চীন কাকে সমর্থন দিচ্ছে নির্বাচনের আগে সেটা আলোচনার বিষয় ছিল। তখন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করেছিল, শি জিনপিং এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি জো বাইডেনের দিকে ঝুঁকছে।
তবে চীনের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ান জুয়েতোং বলেন, চীন আরো চার বছর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিল।
নির্বাচনের আগে তিনি বলেন, ট্রাম্প চীনের আরও ক্ষতি করবেন এ জন্য তাকে চাওয়া হয়নি, বরং বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বেশি ক্ষতি করবেন তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই আরো চার বছর চেয়েছে বেইজিং।
চীনের বিষয়ে মার্কিননীতি কবে নাগাদ পাল্টাবেন বাইডেন এ বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেইজিংয়ের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে কংগ্রেসে সর্বদলীয় একটি চুক্তি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তাদের সম্পর্কে কৌশলগত একটা পরিবর্তন আসবে। বাইডেন মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে চীনকে মোকাবিলার চেষ্টা করবেন। জলবায়ু পরিবর্তনরোধের মতো বিষয়গুলোতে চীনের সহায়তা চাইবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চীনের অভিনন্দন । রাশিয়া ছাড়াও, ব্রাজিল, মেক্সিকো, উত্তর কোরিয়া এখনও বাইডেনকে অভিনন্দন জায়নি।