ভারতে বাম এবং কংগ্রেসের নানা সংগঠন কৃষি সংক্রান্ত তিনটি অধ্যাদেশকে সংসদীয় রীতি-নীতির তোয়াক্কা না করে বিলে পরিণত করার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমে পড়েছে। পথে নামার ঘোষণা করে দিয়েছে তৃণমূলও। আর বিরোধীরা কৃষি বিল নিয়ে মানুষকে ‘বিভ্রান্ত’ করছে বলে অভিযোগ করে রাজ্য জুড়ে পাল্টা প্রচারে নামার কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি।
কৃষি বিলের বিরোধিতায় এবং নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ‘স্বৈরাচারী শাসনে’র প্রতিবাদে এ দিন রাজভবনের সামনে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে যুব কংগ্রেস। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কৃষক সেজেও এসেছিলেন যুব কংগ্রেসের কিছু কর্মী। প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি শাদাব খান, ছাত্র পরিষদের সভাপতি সৌরভ প্রসাদ, দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, যুব কংগ্রেসের শাহিনা জাভেদ, শেখ হবিবুর রহমান-সহ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে জনাপঞ্চাশকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষি বিল এবং ‘গণতন্ত্র-হত্যা’র সর্বাত্মক প্রতিবাদের ডাক দেওয়ার পরেই তৃণমূলের তরফে কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই গতকাল রাত থেকে কৃষি সংক্রান্ত বিল পাশ করানোর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির ধর্না, স্লোগান এবং গান চলল গাঁধীমূর্তির পাদদেশে।
এদিকে তৃণমূলের মহিলা সংগঠন মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) মেয়ো রোডে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না-অবস্থানে বসবে। পর দিন, বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ শহরে মিছিল করে মেয়ো রোডেই প্রতিবাদ সভা করবে।
বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ কিষাণ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ভারত বন্ধ এবং দেশ জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে কৃষিকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার নীতির প্রতিবাদে।
সিটু, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি-সহ কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি ওই প্রতিবাদকে সমর্থন করছে। আলিমুদ্দিনে এ দিন বামফ্রন্ট এবং সহযোগী মিলে ১৬টি দল বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছে। বিভিন্ন অংশের মানুষ ও সংগঠনকে নিয়ে ২৫ তারিখ ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত যে মিছিলের ডাক দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।
আরও পড়ুনঃবৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ’ তৈরি করুন:শেখ হাসিনা
রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘রাজ্যসভা পরিচালনার ১২৫ নম্বর ধারায় বলা রয়েছে, কোনও সদস্য কোনও বিল নিয়ে আপত্তি তুললে সেটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে হবে। যদি না আগেই তা সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়ে থাকে। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান শাসক দলের মর্জি মতো কাজ করেছেন।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কৃষি বিল নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এই বিলের ফলে আসলে কী ভাবে কৃষক উপকৃত হবেন, জেলা থেকে বুথ পর্যন্ত প্রচার করে আমরা সেই সত্য তুলে ধরব।’’
অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে গোটা বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লিখে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন কংগ্রেস-সহ বারোটি বিরোধী দলের সাংসদেরা। তাঁকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে, বেআইনি ভাবে পাশ হওয়া বিলে সই না-করতে। প্রায় সব বিরোধী দলই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এই কৃষি সংক্রান্ত বিল পাশের বিরোধিতা করায়, মোদী-বিরোধী আন্দোলন বড় মঞ্চ পেয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।