দেশের সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্বদাতা বেনাপোল বন্দর বাণিজ্যিক দিক দিয়ে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় হলেও ভারত অংশে নানা অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মে দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে আসছে আমদানি বাণিজ্য।
বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের বনগাঁ ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেটের হাতে প্রায় দুই যুগ ধরে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশি আমদানিকারকরা। ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক চেষ্টা করেও সিন্ডিকেট মুক্ত হতে পারেননি তারা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন বিষয়টি সুরহার চেষ্টা তারা করছেন।
জানা যায়, ১৯৭২ সাল থেকে বেনাপোল বন্দরের সাথে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু। এ বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দ্রুত মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রথম থেকে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। এ পথে আমদানি পণ্যের মধ্যে অধিকাংশ রয়েছে শিল্পকারখানার জরুরি কাঁচামাল। হিসাব মতে একটি পণ্যবাহী ট্রাক মাত্র ৫ ঘণ্টায় কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে বন্দর ও কাস্টমসের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ওপারে বনগাঁ পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন পার্কিংয়ে সিরিয়ালের নামে হাজার হাজার টাকা অর্থ বাণিজ্য করে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ২০ থেকে ২৫ দিন আটকে রাখা হচ্ছে। এসময় প্রতিদিনের জন্য দুই হাজার রুপি অর্থ গচ্ছা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এছাড়া এ দীর্ঘ সময় পণ্য চালান আটকা পড়ে যেমন পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে তেমনি সময় মত পণ্য সরবরাহের অভাবে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ট্রাক চালকরাও। বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে এ অনিয়ম চলে আসলেও সিন্ডিকেটের হাত থেকে কোনভাবে মুক্তি মিলছে না ব্যবসায়ীদের। এতে এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে গত কয়েক বছর ধরে এপথে যেমন আমদানি কমেছে তেমনি সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
আমদানি পণ্যবহনকারী ভারতীয় ট্রাক চালকরা জানান, বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগেই ইচ্ছের বিরুদ্ধে বনগাঁ কালিতলা পার্কিংয়ের সিরিয়ালের নামে পণ্যবাহী ট্রাক ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখে। ফলে তারা দ্রুত পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে পারে না। এছাড়া আটকে থাকায় নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বনগাঁ পার্কিংয়ে চাঁদাবাজির কারণে অনেক ব্যবসায়ীরা এ পথে আমদানি বন্ধ করেছেন। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে অভিযোগ তুললেও আজ পর্যন্ত পরিত্রাণ পায়নি আমদনিকারকরা।
বেনাপোল বন্দর ট্রাক ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়নের সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী জানান, বাংলাদেশ থেকে রফতানি বাণিজ্যে বেনাপোল বন্দর এলাকায় কোন ট্রাক পার্কিং বা চাঁদাবাজি নাই কিন্তু ভারত থেকে আমদানি সময় বনগাঁ পার্কিং বানিয়ে নিরব চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, পার্কিংয়ে দিনের পর দিন ট্রাক আটকে থাকায় যেমন পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে তেমনি শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিবন্ধকতা না থাকলে আগের মত কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে দিনের দিন পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে পারবে। উচ্চপর্যায়ে আলোচনা ছাড়া এ সমস্যা সমাধানের সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না।
জাহালমের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে রায় বুধবার দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে ভারতীয় ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেটের হাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেরন। ভারতীয় হাই কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বনগাঁ পর্কিংয়ের অনিয়মের ব্যাপারে আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে অনেকবার কথা বলেছি। তবে আশা করছি খুব দ্রুত সমাধান আসবে।
উল্লেখ্য, দেশের চলমান ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল বন্দর। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে চট্টগ্রামের পরেই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার আমদানি বাণিজ্য হয়। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে। নানা সমস্যায় এ পথে আমদানি কমে যাওয়ায় গত তিন বছরে সরকারের লক্ষ্য মাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা।