মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গণনাও চলে এসেছে প্রায় শেষ দিকে। আর মাত্র সাতটি অঙ্গরাজ্যে পপুলার ভোটে বিজয়ীর নাম জানা বাকি। এ অবস্থায়ও ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সবশেষ তথ্যমতে, নির্বাচনে ২৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৩টি ইলেকটোরাল ভোট।
ফলাফল আসতে বাকি সাতটি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে চারটিতে এগিয়ে রয়েছে রিপাবলিকানরা। মজার বিষয় হচ্ছে, তারা সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও তিনটি রাজ্যে জয় পেলেই বিজয়ী হতে পারেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।
বাংলাদেশ সময় বুধবার সন্ধ্যায়ও পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, মিশিগান ও আলাস্কায় এগিয়ে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসময় জল্পনার সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছিল মিশিগান। এই অঙ্গরাজ্যে যে জিতবে সে-ই প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল।
নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। সন্ধ্যায় ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষে মিশিগানে রিপাবলিকানরা এগিয়ে রয়েছে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু মাত্র ঘণ্টা দুয়েক পরেই ৯৪ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন জো বাইডেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাটলগ্রাউন্ডে বাইডেন পেয়েছেন ২৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৫টি (৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ)। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৫ লাখ ৮ হাজার ৫৯২টি (৪৯ দশমিক ১ শতাংশ)।
অর্থাৎ রাজ্যটিতে এ মুহূর্তে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন জো বাইডেন। শেষ পর্যন্ত এ অবস্থান ধরে রাখতে পারলে মিশিগানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটই পকেটে পুরবেন তিনি।
মিশিগানে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এগিয়ে থাকা বাকি দু’টি অঙ্গরাজ্য নেভাদা ও উইসকনসিনে জেতাটাও। কারণ, এ দুটিসহ মিশিগানে জয় পেলেই বিজয়ী হতে আবশ্যক ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট জমা হবে তাদের পাল্লায়। এর মধ্যে একটি হাতছাড়া হলেই জিতবেন ট্রাম্প।
এ পর্যন্ত নেভাদা ও উইসকনসিনে ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। নেভাদায় ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৫২টি (৪৯ দশমিক ২ শতাংশ) ভোট পেয়েছেন এ ডেমোক্র্যাট নেতা। সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬০৫টি (৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ) ভোট। রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত ৬৭ শতাংশ ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। এখানে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ছয়টি।
উইসকনসিনে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান আরও কম। সেখানে বাইডেন পেয়েছেন ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৩৪টি (৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ) ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছেন ১৬ লাখ ৯ হাজার ৫৮৬টি (৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ)। রাজ্যটিতে ভোট গণনা হয়েছে ৯৫ শতাংশ। সেখানে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ১০টি।
অপরদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০টি ইলেকটোরাল ভোট থাকা ব্যাটলগ্রাউন্ড পেনসিলভানিয়ায় পেয়েছেন ২৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩৬টি (৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ) ভোট। সেখানে বাইডেনের ঘরে গিয়েছে ২২ লাখ ৯০ হাজার ৬২৪টি (৪৩ দশমিক ১ শতাংশ)। অঙ্গরাজ্যটিতে ভোট গণনা হয়েছে ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ এখনও বেশ কিছু ভোট বাড়তে পারে দুই পক্ষেরই।
নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প ২৭ লাখ ৩২ হাজার ১০৪টি (৫০ দশমিক ১ শতাংশ) ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। বিপরীতে বাইডেন পেয়েছেন ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯২টি (৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ)। এ রাজ্যটিতে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ১৫টি।
আরেক ব্যাটলগ্রাউন্ড জর্জিয়াতেও এগিয়ে ট্রাম্প। ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট থাকা এ রাজ্যে তিনি পেয়েছেন ২৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৪৬ (৫০ দশমিক ৫ শতাংশ) ভোট। আর প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেন পেয়েছেন ২২ লাখ ৭৮ হাজার ১২৩টি (৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ)।
আলাস্কায়ও বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ২৩১টি (৬২ দশমিক ৯ শতাংশ) ভোট। আর বাইডেন পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৮৪৯টি (৩৩ শতাংশ) মাত্র। এ অঙ্গরাজ্যে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে মাত্র তিনটি।
এগিয়ে থাকা এ চারটি অঙ্গরাজ্যে জিতলে ট্রাম্পের মোট ইলেকটোরাল ভোট হবে ২৬৭টি। ফলে নির্বাচনে জিততে তাকে এখন আশ্চর্যজনক কিছুই দেখাতে হবে।
তবে এবারের নির্বাচনে ১০ কোটির বেশি আগাম ভোট (ডাকভোট) পড়েছে। সেগুলো যোগ হলে বদলে যেতে পারে গোটা ভোটের হিসাব-নিকাশ। কারণ, কোনও অঙ্গরাজ্যে পপুলার ভোটে জয়ী হলে সেখানকার সব ইলেকটোরাল ভোটই চলে যায় বিজয়ীর পকেটে।
এখন পর্যন্ত মোট পপুলার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন, তবে ইলেকটোরাল ভোটে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আবার ডাকভোট যোগ হলে মিশিগানের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোতে বিজয়ীর নাম পরিবর্তন হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে মিশিগানে ট্রাম্প জিতলে তার ফের হোয়াইট হাউস দখলের পথ সুগম হবে, তেমনি বাইডেন জিতলে তারও প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।