রংপুরে নিজের মেয়েকে হত্যা করার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মা জাহানারা বেগম। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক আল-মেহেবব।
শুক্রবার ঘটনাস্থল থেকে জাহানারা বেগম ও তার স্বামী মেনহাজুল হককে আটক করে পুলিশ। ওইদিন বিকালে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বুজরুক হাজিপুর গাছুয়াপাড়ায় নিজের ঘরে খুন হন মাহবুবা আক্তার মেরী নামে তাদের ২৫ বছর বয়সী মেয়ে।
শুক্রবার রাতে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর মেরীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। এরপর শনিবার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার গণমাধ্যমকে জানান, প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে এটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হয়। কিন্তু গলায় কাটার ধরন ও পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয় থেকে আমাদের কাছে এটি আত্মহত্যা মনে হয়নি। তাই নিহতের বাবা ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জাহানারা বেগম প্রকৃত ঘটনাটি খুলে বলেন। তিনি জানান, মেয়ে নামাজরত অবস্থায় ছিল। তখন পেছন দিয়ে জাপটে ধরে গলায় ধারালো ছুরি দিয়ে মেয়েকে খুন করেন তিনি।
পুলিশ সুপার আরও জানান, নিহত তরুণী মাহবুবা আক্তার মেরী মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এ কারণে তার বিয়ে হচ্ছিল না। চিকিৎসায় প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। এ কারণে মেরীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মধ্য সবসময় ঝগড়াঝাটি হতো। শুক্রবারও মা ও মেয়ের মধ্য ঝগড়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হন জাহানারা বেগম।
প্রতিবেশীরা জানান, শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ঘটনা ঘটলে। কিন্তু পরিবারের লোকজন তাদের কাউকে কিছুই জানায়নি। সন্ধ্যার পর আত্মীয়-স্বজনরা ওই বাড়িতে এসে কান্নাকাটি শুরু করলে তখন প্রতিবেশীরা বুঝতে পারেন, ওই বাড়ির কেউ মারা গেছে। সেসময় প্রতিবেশীরা ওই বাড়িতে গেলে মৃগীরোগের কারণে মেরী আত্মহত্যা করেছে বলে জানায় পরিবার। সেসময় প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দিলে রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এরপর সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সদস্যরাও যান এবং তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন।
তারা আরও জানান, মেরী স্থানীয় ওয়ারেসিয়া দাখিল মাদ্রাসায় একসময় পড়ালেখা করলেও রোগের কারণে তা চালিয়ে যেতে পারেননি। রক্ষণশীল ওই পরিবারটির সঙ্গে প্রতিবেশীদের তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে মেরী শান্ত স্বভাবের ছিল। তার বাবা রামনাথপুর বি ইউ দাখিল মাদ্রাসার সুপারিটেনডেন্ট মেনহাজুল হক।
ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশও নিশ্চিত হয়েছে ঘটনার সময় তার উপস্থিত না থাকার বিষয়টি। এ কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার। এ ব্যাপারে এরই মধ্য বদরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।