রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ রংপুরের তারাগঞ্জে যৌতুকের কারণে নির্যাতিত গৃহবধূ তার স্বামী, শশুর, শ্বাশুরী ও ননদসহ ৭জনকে অভিযুক্ত করে নিজে বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একং যৌতুকের দাবীতে মারপিঠ ও জখমের ঘটনায় রোববার মামলা দায়ের করেছেন।
ওই গৃহবধূ নির্যাতনের ১১দিনপর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ সকালে তার স্বামীকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ওইদিনই দুপুরে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। মামলা ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ বছর পূর্বে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রামের আব্বাস মুহুরীর ছেলে রমজান আলী (৩১) এর সঙ্গে পারিবারিক সম্মতি অনুসারে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তি গংগাচড়া উপজেলার উত্তর পানাপুকুর গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে মেরিনা খাতুন (২৫) এর।
মেয়ের সংসার গোছাতে প্রায় ৩ লাখ টাকা নগদ অর্থসহ স্বর্ন অলংকার ও ঘরের আসবারপত্র দিয়েছিলেন মেয়ে জামাই রমজানকে। প্রথম বছর ওই দম্পতির সংসার ভালোভাবেই চলছিলো। কিন্তু দ্বিতীয় বছরে পা রাখতেই কারণে অকারণে আরো প্রায় দুই লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে প্রায় স্ত্রী মেরিনাকে মারপিঠ করতেন স্বামী রমজান নিজেই ও মেরিনার শাশুর-শাশুড়ী। এমন নিষ্টুর নির্যাতন সয্য করতে না পেরে মেরিনা বাবার বাড়িতে চলে গিয়ে প্রায় সময় থাকতেন।
মেরিনার পরিবারের লোকজন মেয়েকে নির্যাতনের কথা সইতে না পেরে গরু-ছাগল বিক্রি করে কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে জামাইয়ের বাড়িতে পাঠাতেন সংসার করতে। এরই মধ্যে মেরিনার কোল জুড়ে পুত্র সন্তান মোরসেদুল (৫) ও জাকিয়া আক্তার (৩) আসে। ঠিক তখন মেরিনা ভেবে ছিলেন স্বামী-সন্তান, শশুর-শাশুড়ীদের নিয়ে সুখে শান্তিতে সময় কাঠবে। এরই মধ্যে গত বছর দূর্গা পুজার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গা দেবীকে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে এস্ট্যাস্ট দিয়ে আইসিটি মামলায় পুলিশের হাতে আটক হয়ে প্রায় ৯ মাস জেল খেটে বাড়িতে আসেন অভিযুক্ত রমজান আলী।
এসেই গত ৩১ আগষ্ট ২ লাখ টাকা যৌতুক আনতে স্ত্রী মেরিনাকে বাবার বাড়িতে যেতে বলেন। বাবার বাড়িথেকে বার বার টাকা আনতে পারবে না এমন কথা জানালে স্বামী রমজান আলীসহ শশুর আব্বাস মুহুর (৬২), শাশুড়ী রোকেয়া বেগম (৪৯), ননদ ছায়মা বেগম (২৫), আয়শা বেগম (৩৪),জোহরা বেগম (৩০), ছপুরা বেগম (২৩) রাত প্রায় ৯ টার সময় ওই গৃহবধুকে চুলের মুষ্টি ধরে কিল-ঘুষিসহ লাঠি ও দা দিয়ে জখম করেন।
এ ঘটনায় রাতেই এলাকার লোকজন নির্যাতিত গৃহবধুর পরিবারকে খবর দিয়ে গুরুত্বর অবস্থায় মেরিনাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এতে টানা ১১দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে রোববার সকালে তারাগঞ্জ থানায় গৃহবধু নিয়ে বাদী হয়ে স্বামী, শশুর-শাশুড়ী ও ননদের অভিযুক্ত করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং যৌতুকের দাবী, মারপিঠ ও জখমের ঘটনায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ মামলার প্রথম আসামী স্বামী রমজানকে তার বাড়ি থেকে আটক কওের দুপুরে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
নির্যাতিত গৃহবধুর ভাই মোতালেব হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মোর বোইনটাক ওমরা মাইর-ডাং করি একবারে শ্যাষ করি দিছে। বোইনটার খালি জিউ কোনা আছে। শরিলোত কিছুই নাই। তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুক আহম্মদ নির্যাতিত গৃহবধুর স্বামীকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানোর কথা স্বীকার করে বলেন, বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।