চৌধুরী নুপুর নাহার তাজ :দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি:
১৬ই এপ্রিল হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কালো অধ্যায়। ২০১৫ সাথে এই দিনে বিবিএ অনুষদের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি অনুষদের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। আজ জাকারিয়া ও মাহমুদুল হাসান মিল্টন নিহতের ৬ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্স অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে ছাত্রলীগের অন্য অংশের সংঘর্ষে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি অনুষদের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন নিহত হন।
খুনের ঘটনায় পরিবারের করা পৃথক দুইটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়। নিহত মিল্টনের চাচা মকসুদার রহমান বাদী হয়ে ৩৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার এক নম্বর আসামি তখনকার উপাচার্য রুহুল আমিন। অন্যদিকে নিহত জাকারিয়ার বাবা গোলাম মোস্তফা একই বছর দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজ্জবকে এক নম্বর আসামি করে এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত কুমার ঘোষ কাঞ্চনসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন।
গত বছরের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে গিয়ে নিহত মিল্টনের মা ও জাকারিয়ার বাবাকে বিচারের আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরেই ২৯ জুলাই’২০ দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে অব্যহতিপ্রাপ্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি আবু ইবনে রজ্জব(৪২), সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাকির(৪০), কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন(৪৮)সহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি।
এর আগে গত বছরের ১১ জুন শহরের নিজ মালিকানাধীন আবাসিক হোটেল আফিয়া ইন্টারন্যাশনাল থেকে দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজ্জবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান সিঙ্গেলকে(৩০) গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তাঁর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া এই মামলায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, মিল্টন ও জাকারিয়া হত্যার মামলার চার্জশিট হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরাও চাই দুই শিক্ষার্থী’র হত্যার বিচার হোক। সেজন্য আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম এ্যাডভোকেট বলেন,
২০১৫ ইং১৬ ই এপ্রিল হাজী মোঃ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছত্রলীগ নেতা তৎকালীন ভিসি প্রশাসনের সহায়তায় মূলত বহিরাগতদের দ্বারা নৃশংস ভাবে খুন হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দুই নিহতের বাবা- মা কে দশ দশ কুড়ি লক্ষ টাকা অর্থনৈতিক সহযোগীতার পাশাপাশি সর্বোচ্চ ন্যায় বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দেয়ায় খুনের ঘটনার চার বছর পর মামলাটি আলোর মুখ দেখে, একই কারণে দীর্ঘদিন পরে হলেও মামলায় চার্জশীট হয়। প্রধান আসামী বাবু বিশ্বজিত ঘোষ কাঞ্চন সহ অনেকে এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে কি না কে জানে?নিহত জাকারিয়া ও মিল্টনের বাবা – মা অভিভাবকরা একাধিকবার নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ এনেছেন। আজ ছয় বছর পেরিয়ে গেলো। আজ তাঁর বাবাকে শহরের বাসা থেকে গাড়ীতে নিয়ে ঘটনার দিন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুপ্রায় কয়েকজন ছাত্রলীগনেতা সহ হাজী দানেশ ছাত্রলীগের ২০/২৫ জন নেতা-কর্মী সহ খানসামা থানাধীন নিহত জাকারিয়ার কবর জিয়ারতে তার গ্রামের বাড়ীতে গেলাম ১৬ এপ্রিল বিকেল ০৪ টায়। জাকারিয়ার দাদা জনাব আবুল খায়ের মাস্টার, (বয়স আনুমানিক ১০০ বছর। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন ১৯৪৬ সালে। এখনও খালি চোখে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন) কাঁদলেন, কবর জিয়ারত শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সকলের জন্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য, জাতীয় চারনেতা সহ স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকলের জন্য, উপস্হিত সকলের পিতা মাতা আত্মীয় স্বজনসহ সকলের জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা, কোভিড-১৯ মোকাবেলাসহ সার্বিক দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর জন্য দোয়া হলো। ইয়া আল্লাহ তুমি জোড়া খুনের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করো, আমাদের সকলকে রক্ষা করো আর কোন মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়, আমিন।