আমির হোসেন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠি রাজাপুর উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে কাটা-ছেঁড়ার সেলাইর জন্য রোগীদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এসিস্ট্যান্ট অফিসার বিবেক সিকদারের বিরুদ্ধে।
রোববার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর মায়ের পা কেটে যাওয়ায় তাকে নিয়ে রাজাপুর হাসপাতালের ইমারজেন্সী রুমে গেলে ডিউটিরত এসিস্ট্যান্ট বিবেক সিকদার নিজেই কাটা পায়ে সেলাই দিয়ে ব্যান্ডিস করে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন৷ এরপর সেলাই দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজাপুর হাসপাতালের এসিস্ট্যান্ট বিবেক সিকদার যখন ডিউটিতে থাকে তখন হাসপাতালে আসা কাটা-ছেঁড়ার সব রোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক সেলাই দেওয়ার জন্য টাকা নেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে সেলাই দেওয়ার ৩দিন পর পূনরায় হাসপাতালে ব্যান্ডিস খুলে সেলাই স্থান পরিস্কার করার জন্য হাসপাতালে আসলে তখনও রোগীদের তাকে টাকা দিতে হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী মিনারা বেগম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সন্ধ্যার পরে সাংবাদিক নাইম ভাই তার মা’কে নিয়ে হাসপাতালে আসে এরপর ওখানের ডিউটিতে থাকা একজন (এসিস্ট্যান্ট বিবেক সিকদার) সেলাই দিয়ে ব্যান্ডিস করে দেওয়ার টাকা চায়। যদি আমার কাছে টাকা চাইতো তাহলে আমি তাকে জুতাপিটা করতাম৷ তিনি তো কিছু করলো না। সরকারি হাসপাতাল সব কিছু ফ্রি সেখানে আবার টাকা দিতে হবে কেনো। তাদের কাজের জন্য সরকার বেতন দিচ্ছে তারপরও কেনো সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসলে টাকা দিতে হবে। একজন সাংবাদিককে যদি সরকারি হাসপাতালে এসেও টাকা দিতে হয়। তাহলে আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের কি অবস্থা হয়। তারা কতটা হয়রানির শিকার হয় বুঝেন এবার।
এবিষয়ে সংবাদকর্মী মো. নাঈম বলেন, আম্মুর পা কেটে যাওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে ডিউটিরত এসিস্ট্যান্ট পায়ে সেলাই দিয়ে ব্যান্ডিস করে দেন। এর বিনিময়ে টাকা দাবি করেন তখন তাকে সরকারি হাসপাতালে কাটা-ছেঁড়ার সেলাই দেওয়ার জন্য টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এটা নিয়ম সবাই টাকা দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমার আম্মুর আগে যে রোগী ছিলো তার কাছ থেকেও এই বিবেক সিকদার টাকা নিছেন। তিনি ডিউটিতে থাকা অবস্থায় এরকম রোগীদের থেকে টাকা নেন। ইমারজেন্সী রুমের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলে তার টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ পাওয়া যাবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত এসিস্ট্যান্ট বিবেক সিকদারের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে ডাঃ রাসেলের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে তিনি জানান খুশি হয়ে অনেকেই টাকা দেয়।
এবিষয়ে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল বলেন, বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে বলে তাকে হাসপাতালের অন্য চিকিৎসক জানিয়েছেন। যদিও তিনি নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভ না। এখনও তিনি কোন লিখিত অভিযোগ পাননি। ঘটনা শুনে একজন আর এম ও কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সি সি টিভি ফুটেজ দেখে বিষয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদে বিবেক শিকদার ঘটনা অস্বীকার করেছে। তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।