সম্রাট শাহজাহান স্ত্রী মমতাজের জন্য বানিয়েছেন বিখ্যাত তাজমহল। তবে লালমনিরহাটের কৃষক দুলাল চন্দ্র তার স্ত্রী তুলশী রানী দাসীর জন্য তাজমহল বানাতে না পারলেও স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণের জন্য কিনে আনলেন জলজ্যান্ত এক হাতি। দাম সাড়ে ১৬ লাখ টাকা।
এমনই এক বিরল ভালোবাসার ঘটনা এখন জেলার সবার মুখে মুখে। দুলাল চন্দ্র রায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রথিধর দেউতি গ্রামের মৃত বীরেন্দ্র নাথের ছেলে।
আরও পড়ুনঃ সব মুসল্লি মাস্ক পড়ে নামাজে আসেন তা নিশ্চিত করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বপ্নে পরম ঈশ্বরের দৈব আদেশ বাড়িতে হাতি এনে সেটির পরিচর্যা করতে হবে। পরম ঈশ্বরের আদেশ পালন করতে হবে, নইলে যে কঠিন অভিশাপ নেমে আসবে। এমন চিন্তা থেকে স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ করতেই দুলাল চন্দ্র বিক্রি করেন চাষাবাদের ৩ বিঘা জমি। সেই জমি বিক্রির টাকায় গত সপ্তাহে ঘরে তুলেছেন হাতিটি।
দুলাল চন্দ্রের স্ত্রী তুলসী রানী দাসী ঈশ্বরের আদেশ পালনে কয়েক বছর আগে স্বামীর কাছে প্রথমে একটি ঘোড়া, রাজহাঁস ও ছাগল চান। কেনার পর তিনি সেগুলোর পরিচর্যা করেন।
কিন্তু গত এক বছর আগে আবারও ঈশ্বরের নির্দেশনা পান হাতি কিনে তার যত্ন নেয়ার।
সেই নির্দেশনা পেয়ে পুনরায় স্বামী দুলালের কাছে হাতি কিনে দিতে বায়না ধরেন তুলসী রানী দাসী। স্ত্রীর সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই জমি বিক্রি করে হাতি কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন দুলাল চন্দ্র।
সিলেটের মৌলভীবাজার গিয়ে সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় হাতি কেনেন তিনি। হাতিটি লালমনিরহাটে নিয়ে আসতে ট্রাক ভাড়া গুনতে হয়েছে আরও কুড়ি হাজার টাকা। আর হাতিটি দেখভালের জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ইব্রাহীম মিয়া নামে এক মাহুতকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দুলাল চন্দ্র।
দুলাল চন্দ্র রায় ও তুলশী রানী দাসীর সংসারটিতে সদস্য সংখ্যা ৪ জন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার এই দম্পতির। বাড়িতে একটি টিনের চালা ও একটি মাটির তৈরি ঘরেই তাদের বাস। কৃষি জমি আবাদ করেই চলতো তাদের সংসার।
তুলসী রানী দাসী বলেন, দেবতা মহাদেব ও বিশ্বকর্ম্মা স্বপ্নে নির্দেশ করেছেন হাতি কিনে তার যত্ন-আত্তি নিতে। তাই স্বামীর কাছে হাতি কেনার বায়না ধরায় স্বামী সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় হাতি কেনেন। দেবতা যতদিন হাতিটিকে রাখতে বলবেন ততদিন হাতি তাদের বাড়িতে থাকবে।
হাতির মালিক দুলাল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এর আগেও পরম ঈশ্বরের নির্দেশে ঘোড়া, ছাগল ও রাজহাঁস কিনতে বলায় সেটিও কিনে দিয়েছি। পরম ঈশ্বর আর স্ত্রীকে খুশি করতেই হাতিটি কেনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দুলাল চন্দ্র রায়।
হাতি কেনার খবরে এলাকার লোকজনসহ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসছেন দুলাল-তুলসী রানীর বাড়িতে। সেই হাতিটিকে নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের যেন শেষ নেই। হাতিটির খাবার হিসেবে রাস্তার ধারে থাকা কলাগাছ কেটে খাওয়ানো হচ্ছে।
এছাড়াও প্রতিদিন ৩ কেজি ভুসি, ২ কেজি গুড় ও ২ কাঁদি কলা খাওয়ানো হচ্ছে হাতিকে।
মাহুত ইব্রাহীম বলেন, থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ মালিকের। এ ছাড়া মাসিক ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে মৌলভীবাজার থেকে তিনি এসেছেন। স্থানীয় দুইজনকে হাতিটির দেখভালের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তিনি চলে যাবেন বলে জানালেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার বলেন, এমন একটি ঘটনার কথা জানতে পেরেছি।