হলুদের গুঁড়ো বিক্রি করে সফল পানছড়ির নারী উদ্যোক্তা হাসু
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
রান্নার সামগ্রী হলুদের গুঁড়ো বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় সরবরাহ করে সফলতা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছেন খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার নুকুল মাষ্টারপাড়া এলাকার নারী উদ্যোক্তা হাসু আক্তার (২৭)।
২০২০ সালের দিকে করোনা ক্রান্তিকালে ফেইসবুকে প্রবেশ করে একদিন তার নজরে পড়ে Women E-Commerce সাইট নামের একটা উদ্যোক্তা প্লাটফর্ম। সেই প্লাটফর্ম এর কর্ণধার নাছিমা আক্তার নিশার থেকে তিনি প্রথম অনুপ্রেরণা পেয়ে শুরু করেন ব্যবসা। তারপর সেখান থেকে গ্রুপের বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন রান্নার সামগ্রী সরবরাহ করতে শুরু করেন।
সেই বছরের জুলাই মাসে হলুদ নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিলে তাতে সাড়া পান তিনি। প্রথমে একটু কম বিক্রি হলেও তারপর ধীরে ধীরে বিক্রি বৃদ্ধি পায়।
জানা যায়, পানছড়ি উপজেলার লোগাং এলাকায় নিজস্ব জায়গায় সর্বপ্রথম কিছু লোক দিয়ে ৮ মন হলুদের চাষ করেন তিনি। তারপর হলুদ উপযুক্ত হলে তা ধুঁয়ে সিদ্ধ করার পর রোঁদে শুকিয়ে মিশিং দ্বারা গুঁড়ো করে প্যাকেটিং এর মাধ্যমে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। একইভাবে কয়েক মাস বিক্রয় করা পর অর্থনৈতিকভাবে লাভের মুখও দেখেন তিনি।
এরপর তিনি শুরু করেন লাল কালো বিনি চাল সরবরাহ করা, তারপর ডাটা ফেলানো মরিচের গুঁড়ো। তবে তার সাথে আলাপ কালে জানা যায়, সবচাইতে সাঁড়া পেয়েছেন হুলুদের গুঁড়ো ও লাল কালো বিনি চাল বিক্রি করে। লাল কালো বিনি চাল সব জেলায় পাওয়া না যাওয়ায় তিনি অর্ডার বেশি পেতেন। সবমিলিয়ে পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় তার অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসায় দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে বিক্রির চাহিদা।
তিনি প্রতি মাসে গড়ে ১০০ থেলে ১২০ কেজি হলুদের গুঁড়া, ২০০ কেজি লাল কালো বিনি চাল, ১৫ কেজি ডাটা ফেলানো মরিচের গুঁড়ো দেশের ৬৪টি জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। এবং সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে ঘরে বসেই গড়ে ৪০-৪৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
তার সাথে আলাপ কালে আরও জানা যায়, প্রথম অবস্থায় তার টিউশনির জমানো ৩০ হাজার টাকা নিয়েই শুরু করেন এই ব্যবসা। মাঝখানে পারিবারিক সমস্যা ও অসুস্থতায় ব্যবসাটি চালিয়ে নিতে পারেননি অনেক মাস।তারপর প্রবল আত্মবিশ্বাসে পুনরায় শুরু করেন ঘরে বসে রান্নার বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ।
হলুদ কালেকশন থেকে শুরু করে প্যাকেট প্রক্রিয়াজাত পর্যন্ত প্রতিদিন তিনঘন্টা করে তার কাছে কাজ করতো ৪ জন মহিলা। এবং প্রতি জনকে ১শ টাকা করে দেওয়া হতো।
ঘরে বসে এই কাজ করে তিনি অর্থনৈতিক সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন এবং তার এই ইনকাম থেকে পারিবারিক খরচও চালাতেন।তার ইচ্ছা এই প্রসারটা আরও বৃদ্ধি করা।তার জন্য দরকার অর্থনৈতিক সাপোর্ট। সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা কিংবা লোন পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করাসহ কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।তিনি বিশ্বাস করেন: যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতার প্রথম শর্ত প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম।
লিপি কর্মকার নামের এক মহিলা বলেন:হাসু আপু বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।আমি অনেক বার তার থেকে সরাসরি হলুদের গুঁড়ো নিয়েছি।হলুদের গুণগত মান অনেক ভালো। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে এর পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে।এবং কর্মসংস্থানও হবে অনেকের।