১৪ বছরেও হয়নি যুব-ছাত্রদলের ৩ নেতাকর্মী হত্যার বিচার
আস্থা ডেস্কঃ
রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে যুবদল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকে হত্যার ১৪ বছরেও ন্যায় বিচার পায়নি তাদের পরিবার। ২০১০ সালের নভেম্বরে যুবদলকর্মী আরিফকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনার পরবর্তীতে ২০১২ সালের সেই একই নভেম্বর মাসেই আবারো হত্যা করা হয় একই ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতা চিংখই অং মারমা (২৩) ও ছাত্রদল কর্মী পাইচা খই (২১) মারমাকে।
সে সময় বহুল আলোচিত এই ৩ টি নির্মম হত্যার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করলেও দীর্ঘ ১৪ বছরেও এই মামলার বিচার না পায় নি।
তথ্যে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন যুবদল নেতা আরিফুর রহমান (২৮)। সেদিন ১৮ই নভেম্বর বৃহস্পতিবার শ্বশুর বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ১০/১২ জনের একটি দল আরিফকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বেদড়ক মচরধর করেতে থাকে। সে সময় খবর পেয়ে আরিফের ভাই, ভাবী, স্ত্রীসহ অন্যরা বাঁচাতে গেলে তাদেরও মারধর করে সন্ত্রাসীরা।
পরবর্তীতে সন্ত্রাসীরা আরিফের পায়ে গুলি করে এবং তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে মনারটেক জঙ্গলে লাশ গুম করার চেষ্টা করে। লোকজন দেখে ফেললে লাশ ফেলে হত্যাকারিরা পালিয়ে যায়।
নিহত যুবদল নেতা আরিফের বড় ভাই বাহার এর বক্তব্য, কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা পরবর্তীতে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর নির্দেশনায় তারই চিহ্নিত ক্যাডার বাহিনী আমার ছোট ভাই আরিফুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
তিনি জানান, এই ঘটনার পর অংসুইয়ের হস্তক্ষেপে তার ক্যাডার বাহিনীর প্রত্যক্ষ হুমকিতে কাউখালী থানা পুলিশ নির্মম এই হত্যাকান্ডের মামলা পর্যন্ত নেয়নি।
বাহার আরও বলেন, আমার ভাইকে নির্মমভাবে মেরে ফেলছে এমন খবর সে সময় বেতবুনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে জানালেও তাদের ইনচার্জ উপস্থিত নেই অজুহাতে আমাকে পুলিশ সাহায্য করেনি।
সে সময়ের কাউখালী থানার ওসি শ্যামল কান্তি বড়ুয়া আমাকে ধমক দিয়ে মামলা না করার জন্য শাসিয়েছে। পরে আমি রাঙামাটি কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলাম। এই কারনে অংসুর ক্যাডার বাহিনীর হুমকিতে আমি এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে হয়েছে। পরবর্তীতে হত্যাকারিদের নানান হুমকিতে মামলা নিয়ে আমি আর বেশি কিছু জানতে পারিনি।
২০১২ সালের নভেম্বরের ১৮ তারিখে অংসুইয়ের অনুসারি মাদক ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট চক্র কর্তৃক বেতবুনিয়া ইউপি’র সাবেক সদস্য পাইচিং মং মারমার ছেলে ও ৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি চিংখই অং মারমা (২৩) ও স্থানীয় মংচিং মারমার সন্তান ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য পাইচা খৈ মারমা (২১)কে তুলে নিয়ে বেদড়ক পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে। সেসময় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে রাউজান ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসারত অবস্থায় ১৯ নভেম্বর রাঁত সাড়ে ৮টায় মৃত ঘোষনা করে।
নিহত ছাত্রদল নেতার পিতা বিএনপি নেতা পাইচিং মং মারমা বলেন, আমার সন্তান ছাত্রদল করে এবং আমি বিএনপি করি এটাই আমাদের অপরাধ। একারনে কাউখালীর প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা অংসুই প্রু চৌধুরীর নির্দেশনায় আমার ছেলেকে ও আমার চাচাতো ভাইকে মেরে ফেলার লক্ষ্যেই আটকিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছে।
ছেলে মারা যাওয়ার পেছনেও রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, কাউখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংচা প্রু চৌধুরী ও সামসুদ্দোহা চৌধুরীর হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন পাইচিং মং।
এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে গেলে উল্টো সে সময়ের কাউখালী থানার ওসি শ্যামল কান্তি বড়ুয়া
আমাকে ৪টি মিথ্যা মামলার আসামী করেছে।
কাউখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংচা প্রু চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, এরকম একটি ঘটনা সে সময় ঘটেছিলো এটা ঠিক। আমি সে সময়ের ওসি শ্যামল কান্তিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমাকে জড়িয়ে যে অভিযোগ এখন তোলা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ন মিথ্যা।
এছাড়া উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে বক্তব্য জানতে অন্যদুই প্রভাবশালী নেতা রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী ও কাউখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা চৌধুরী মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে এবং হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ দিয়েও সাড়া মেলেনি।
কাউখালী থানার বর্তমান ওসি রাজীব কর বলেন, ২০১০ সালের নভেম্বরে আরিফ হত্যার ঘটনায় তার ভাই ১৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। পুলিশ তদন্ত করে ৮ আসামীর বিরুদ্ধে এবং ২০১২ সালের দুই ছাত্রদল নেতাকর্মী হত্যার ঘটনায়ও ৮ জনের
আদালতে চার্জশীট প্রদান করেছে।
সিনিয়র আইনজীবি ও রাঙামাটি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পনির বলেন, যুবদলের নেতা আরিফকে হত্যার ঘটনাটি ছিলো একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং কাউখালী আওয়ামীলীগের নেতা অংসুই প্রু চৌধুরী কর্তৃক হত্যাকারীদের রক্ষা করায় এবং তাদের বিচার না হওয়ার কারনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের আরো দুই ছাত্রদল নেতাকে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা নির্দয়ভাবে পিঠিয়ে মেরে ফেলেছে।