স্বল্পমূল্যে প্লট পাওয়ার কথা বলে প্লটপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার চুক্তি করেছে নাসিম রিয়েলে এস্টেট। রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করে একেকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নিয়ে নাসিম রিয়েল এস্টেটর মালিক প্রায় ৩শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকুন : তথ্যমন্ত্রী
তিনি ৫৫টি গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. ইমাম হোসেন নাসিম (৬৬) ও তার সহযোগী তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমা (৩২)।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ মিমি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, এক লাখ ৩৫ হাজার জাল টাকা, ১৪শ পিস ইয়াবা, দুই বোতল বিদেশি মদ, চারটি ওয়াকিটকি সেট, ছয়টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক বই এবং ৩২টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, এই প্রতারকের বাবা-দাদার বাড়ি ভোলায়। দেশ স্বাধীনের আগে তার বাবা ও বেলায়েত হোসেন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। তাকে নিয়ে তার বাবা রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় চলে আসেন। পরবর্তীসময়ে মিরপুর এলাকায় পড়ালেখা করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮২ বা ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিতাসের তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছেন। এরপরে ২০০২ সালে নাসিম রিয়েল এস্টেট নামে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গড়ে তোলে।
মোজাম্মেল হক বলেন, সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে কিছু খাসজমি, দখল করা জমি ও পানিপূর্ণ জমি দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে জমি পাওয়া যাচ্ছে বলে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। স্বল্পমূল্যে প্লট পাওয়ার কথা বলে প্লটপ্রতি পাঁচলাখ টাকা করে নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার চুক্তির কথা আমরা জানতে পেরেছি। রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করে এক একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নিয়েছে। সব মিলিয়ে এভাবে ৩শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথা জানতে পেরেছি।
ডিআইজি বলেন, বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার শিকার মানুষদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যেতেন। অস্ত্র প্রদর্শন ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিশ্চিত করতেন নিজের নিরাপত্তা। গ্রেফতার এড়াতে আন্ডারগ্রাউন্ডে তার গোপন সুড়ঙ্গে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্বলিত দরজার গোপন অফিসে আত্মগোপনে থাকতেন। নাসিমের অনুপস্থিতিতে প্রতারণার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন তার তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার।
‘তিনি ৫৫টি গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভূমিদস্যুতা, মাদক ও জালটাকা মামলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা মাদক কারবারীদের কাছে বিক্রি করতেন। এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোটের ব্যবসা আছে তার। ’
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক আরও বলেন, গ্রেফতার নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ প্রতারণার চারটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। ভুক্তভোগীরা র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যারা মামলা করতে ইচ্ছুক র্যাব-৪ তাদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত।