DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশুক্রবার ৩১শে জানুয়ারি ২০২৫
ঢাকাশুক্রবার ৩১শে জানুয়ারি ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

এখনই রমযানের প্রস্তুতির নিন

রায়হান জামান
মার্চ ২০, ২০২৩ ৭:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মহান আল্লাহ তায়ালা পুরস্কার ও মহিমান্বিত হিসেবে দান করেছেন শাবান মাসকে। যে মাসকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর নিজের মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যে মাসে রয়েছে লাইলাতুল বরাতের মতো অত্যন্ত বরকতময় একটি রাত। যে রাতকে বলা হয়, পবিত্র মাহে রমজানের আগমনী বার্তা। শাবান মাস মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির একটি মাস। প্রতিবারের মতো শাবান মাস মুসলমানদের কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমান্বিত রমজান মাসের সওগাত নিয়ে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি বেশি নফল রোজা, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও নামাজ আদায় করে। রমজান মাসের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো নফল রোজা রাখতে শুরু করলে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি বিরতি দেবেন না। আর রোজার বিরতি দিলে আমরা বলতাম যে তিনি মনে হয় এখন আর নফল রোজা রাখবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি বেশি নফল রোজা রেখেছেন।’ মুসলিম। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে ‘শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত অধিকহারে নফল রোজা আদায় করতেন না।’ বুখারি শরীফ।

নবী কারীম (সা.) হিজরি সালের শাবান মাসের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য বিবেচনায় এ মাসে অধিকহারে নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন। রমজান মাসের মর্যাদা রক্ষা এবং হক আদায়ের অনুশীলনের জন্য রাসুলূল্লাহ (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। এ সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) বলেছেন, নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞাস করা হলো ‘আপনার কাছে রমজান মাসের পর কোন্ মাসের রোজা উত্তম?’ তিনি বললেন ‘রমজান মাসের সম্মান প্রদর্শনকল্পে শাবানের রোজা উত্তম।’ তিরমিযি। রমজান মাসের দীর্ঘ ৩০টি রোজা পালনের কঠিন কর্মসাধনা সহজ ও নির্বঘেœ আদায় করার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শাবান মাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় মাসের একটি হলো শাবান। এ মাসে নফল রোজা আদায় করেই তিনি রমজান মাসের রোজা পালন করতেন।’ আবু দাউদ।

মানব জীবনের সব কালিমা দূর করার বিশেষত্ব নিয়ে বরকতের মাস রমজানুল মোবারক আসে শাবান মাসের সমাপ্তির পরই। তাই গুরুত্ববহ এ মাস সারাবিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য, বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়। তাই আসন্ন মাহে রমজানের মূল সিয়াম শুরু করার আগে শাবান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কিছু কিছু নফল রোজা রাখা দরকার। যাতে করে মাহে রমজানের রোজা পালন সহজ হয় এবং লক্ষ্যও ঠিকমত অর্জিত হয়। যারা শাবান মাসে নফল রোজা রাখতে চান, তাদের মধ্যভাগেই শেষ করে ফেলা উচিত। শাবান মাসের অর্ধেকের পর বেশি রোজা আর না রাখাই ভালো। মাহে রমজানের প্রস্তুতিকল্পে ইসলামে শাবান মাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের চাঁদের কথা অধিক যতেœর সঙ্গে স্মরণ রাখতেন, যা অন্য মাসের বেলায় হতো না।’ মুসনাদে আহমাদ।

শাবান মাসে শবে বরাত নামে বিশেষ একটি রাত অতিবাহিত হয়েছে, যে রজনীতে বান্দার সারা বছরের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং আগামী এক বছরের জন্য বান্দার হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত ইত্যাদির নতুন বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। যে কারণে শাবান মাসকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ মাসে মুসলমানদের আমল-আখলাক যেন সুন্দর হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। শাবান মাসে ভারসাম্যপূর্ণ নেক আমলের তাগিদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করবে, কেননা আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল তা-ই যা সর্বদা পালন করা হয়।’ বুখারি। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায় গোটা শাবানে নফল রোজা পালন করতেন এবং অন্যদেরও বিশেষভাবে আমল করার উৎসাহ দিতেন। তাই বলা হয় ‘রজব মাসে শস্য বপন করা হয়, শাবান মাসে ফসল কাটা হয় এবং রমজান মাসে ফসল ঘরে উঠানো হয়।’ শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।’

শাবান মাসকে রমজান মাসের প্রস্তুতি ও সোপান মনে করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশেষ দোয়া করতেন এবং অন্যদের তা শিক্ষা দিতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শাবান মাসের মর্যাদা এতই বেশি যে, যখন তিনি এ মাসে উপনীত হতেন, তখন মাহে রমজানকে স্বাগত জানানোর উদ্দেশ্যে আল্লাহর কাছে অধিক হারে এই বলে প্রার্থনা করতেন যে ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন।’ মুসনাদে আহমদ।

সুতরাং রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এখনই। তাই এই মাসব্যাপী অন্যান্য মাসের তুলনায় আমাদেরকে অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি ও মধ্য শাবানের রজনীতে তওবা-ইস্তেগফার করে অতীতের সব গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর আনুগত্য ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুমহান আদর্শ অনুসরণে নিজেদের জীবন পরিচালনার দৃঢ় প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণ করি এবং হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোও বেশি বেশি পড়ি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুন, আমিন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:২২
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:৪৩
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:২৭
  • ১২:১৪
  • ৪:০৩
  • ৫:৪৩
  • ৭:০০
  • ৬:৪১