জেলা প্রতিনিধিঃ পা ভাঙ্গা এক নারী রোগীবাহী প্রাইভেটকার থামিয়ে আধাঘন্টা পর মামলা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট নবাবের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ওই নারীর বড় ভাই স্কুলশিক্ষক এবং সরোজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সবুর জাহাঙ্গীর আলম সুমন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার পর চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি রেলগেটে এ ঘটনা ঘটে।
সবুর জাহাঙ্গীর আলম সুমন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ছোট বোনের পা ভেঙে গেলে আমার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারে করে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে তার পায়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে বাড়ি ফেরার পথে চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি রেলগেট এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা আমার গাড়িটি থামান। এসময় সেখানে উপস্থিত কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট নবাবকে আমি বলি, আমার গাড়ির সব কাগজ আছে, তবে রানিং বছর ফেল আছে, আমি দু-একদিনের মধ্যে কাগজ আপডেট করে নিবো।
আমাকে একটু দ্রুত ছেড়ে দিন। কারণ আমার ছোট বোনের পা ভেঙে গেছে, সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।’ তখন সার্জেন্ট নবাব প্রাইভেটকারের মধ্যে তাকিয়ে বলেন, এখন রোগী দেখার টাইম নেই, আপনি নামেন গাড়ির কাগজপত্রগুলো দেখান। আমি সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে নিজেকে একজন স্কুলশিক্ষক ও সরোজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলে পরিচয় দিই।
এমনকি বোনকে দ্রুত বাড়ি নিতে ফেভার পেতে সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আমার এক খালাতো ভাইয়ের সাথেও সার্জেন্ট নবাবের কথা বলিয়ে দিই। তাতেও কাজ নাহলে আমি স্থানীয় যে পত্রিকাতে কাজ করি সেই পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে পরিচয় দিই। এতে করে সার্জেন্ট নবাব ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে। তারপর আধাঘন্টা অতিবাহিত হলে একটি কেস স্লিপ আমার হাতে ধরিয়ে দেয়।
যেহেতু আমার গাড়ির কাগজ রানিং বছর ফেল আছে তাই কেস দিয়েছে। আমি মেনেও নিয়েছি। এনিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তাহলে আধাঘন্টা আগেই কেস দিয়ে আমাকে ছাড়তে পারতো। এছাড়া এর আগে আমি আমার গাড়ির কাগজপত্র আপডেট করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে ঠিকঠাক অফিস খোলা পায়নি। যার জন্য আমার প্রাইভেটকারটি বের করিনা।
কিন্তু আমার ছোট বোন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে শনিবার সকালে বের করে হাসপাতালে আসি। আর ফেরার পথে অমানবিক আচরণের শিকার হলাম। প্রায় আধাঘন্টা আমার অসুস্থ বোনকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়টা আমাকে খুব পীড়া দিয়েছে। আমি চুয়াডাঙ্গার বর্তমান পুলিশ সুপার জাহিদ স্যার খুব মানবিক মানুষ হিসেবে জানি। আমি নিজেও তাঁর মানবিকতা নিয়ে লেখালেখিও করি।
এ ঘটনার পর সবুর জাহাঙ্গীর আলম সুমন বাড়ি ফিরে নিজের ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসটা দেন। এর কিছু সময় পর আবেগঘন স্ট্যাটাসটি সরিয়েও ফেলেন তিনি।
এবিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট নবাবের সাথে কথা হলে, তিনি এসব বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ট্রাফিক কন্সটেবলরা তার গাড়িটি থামিয়েছিল। ভিতরে রোগী ছিল কিনা সেটা তিনি জানতেন না। তাছাড়া তার গাড়ির ফিটনেসসহ কিছু কাগজপত্রের সমস্যা ছিল পরিচয় পাওয়ার পর শুধু ফিটনেসের মামলা দেওয়া হয়।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা ট্রফিক ইন্সপেক্টর ফকরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশ সুপার মহোদয় অবগত হয়ে তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ঘটনাস্থলে কর্মরত সকলের কাছে খোঁজখবর নেন। তবে উপস্থিত সকলেই জানতেন না যে গাড়িটির ভিতরে অসুস্থ রোগী আছে।
বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’