ঢাকা ১২:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo চট্টগ্রামের কারখানার ভয়াবহ আগুন ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে! Logo চট্টগ্রাম ইপিজেডে আগুন নেভাতে সেনা ও নৌবাহিনীর সহায়তা Logo পানছড়ির মধ্যনগরে ভোট ফর ওয়াদুদ ভূইয়া-ভোট ফর ধানের শীষ ক্যাম্পেইন অনুষ্টিত Logo ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ও অনুভূতিহীন কর্তৃপক্ষ Logo চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাঁচ কলেজে পাস করেনি কেউ! Logo গরমছড়িতে জমি দখল নিয়ে তাণ্ডব, ফটিকছড়িতে বসতবাড়িতে হামলা! Logo চাকসুতে ভিপি-জিএস শিবিরের, এজিএস ছাত্রদলের Logo এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের সংখ্যায় বিপর্যয় — মাত্র ৩৪৫ প্রতিষ্ঠান Logo কিশোরগঞ্জে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হামলা ও লুটপাট Logo নিজের যোগ্যতায় আসতে হবে: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর

দুনিয়ার ধন-সম্পদ মানুষের জন্য পরীক্ষা

Doinik Astha
Doinik Astha
  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪
  • / ১৪৩৬ বার পড়া হয়েছে

কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ মানুষের পরীক্ষারও একটি মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা ন্যায়ানুগভাবে কমবেশি মাত্রাভেদে মানুষের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করেছেন। সম্পদ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিআমত। আবার বান্দার প্রতি কল্যাণকামিতার বিচারে তিনি যাকে যতটুকু সম্পদ দিয়েছেন, সেটা তার জন্য পরীক্ষার একটি ক্ষেত্রও বটে। পরকালে প্রত্যেককে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সূরা তাকাসুরের শেষ আয়াতে সে সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

ইরশাদ করেন : অতঃপর সে দিন তোমাদেরকে নিআমতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে (যে, তোমরা তার কী হক আদায় করেছ?) (সূরা তাকাসুর : ৮)। একথা রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে একাধিক হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। যুবায়র ইবনুল আওয়াম রা. থেকে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি উক্ত আয়াত সম্পর্কে নবীজী (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে কোন্ নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে; আমাদের কাছে আছেই তো কেবল পানি আর খেজুর। নবীজী বললেন, এগুলো সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করা হবে। (জামে তিরমিযী : ৩৩৫৬)।
একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) ক্ষুধার তাড়নায় এমন সময় ঘর থেকে বের হলেন, যে সময় সাধারণত কেউ বের হয় না। পথে হযরত আবু বকর ও ওমর রা.-কে দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘এসময়ে তোমরা ঘর থেকে বের হলে যে?’ তারা উত্তর দিলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! ক্ষুধার তাড়নায় বের হয়েছি।’ নবীজী (সা.) বললেন, ‘তোমরা যে কারণে বের হয়েছ, আমিও সে কারণেই বের হয়েছি। ঠিক আছে, চলো।’ তারা চলতে চলতে আবুল হাইছাম ইবনুত তাইহান নামে এক আনসারী সাহাবীর বাড়িতে উপস্থিত হলেন। ওই সাহাবী তখন বাড়িতে ছিলেন না। তার স্ত্রী তাদেরকে দেখে, অভ্যর্থনা জানালেন। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন। অমুক কোথায়? ওই সাহাবীর স্ত্রী বললেন, ঘরের জন্য সুপেয় মিষ্টি পানি আনতে গেছেন।

খানিক পরে আবুল হাইছাম এলেন। নবীজী (সা.), আবু বকর ও ওমর রা.-কে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, আজকে মেহমানের দিক থেকে আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। তারপরে তিনি তাদেরকে বাগানে নিয়ে গিয়ে কাঁচা, পাকা ও শুকনো এক ছড়া খেজুর খেতে দিলেন। আর ছাগল জবাই করার জন্য ছুরি নিলেন। নবীজী (সা.) তাকে বললেন, সাবধান, দুধেল মাদী ছাগল জবাই করবে না।
ওই সাহাবী একটি ছাগল জবাই করলেন। সবাই মিলে ছাগলের গোশত, খেজুর ও মিষ্টি পানি পান করলেন। তারা যখন পরিতৃপ্ত হলেন, তখন নবীজী (সা.) আবু বকর ও ওমর রা.-কে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর কসম, কিয়ামতের দিন তোমরা এ নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, এই শীতল বাতাস, তাজা খেজুর, সুপেয় পানি। তোমরা ক্ষুধার তাড়নায় ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলে, আর এখন এ নিআমত লাভ করে ফিরে যাচ্ছ। (সহীহ মুসলিম : ২০৩৮)।

প্রত্যেককেই তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। যথাযথ হিসাব নেওয়া হবে। মৃত্যুর পরে তো কোনো সম্পদই আর নিজের থাকে না। বেঁচে থাকতেও মানুষ যা কামাই করে সবটা তার নিজের নয়। বরং প্রত্যেকের সম্পদের সঙ্গে আরো অনেক মানুষের অনেক রকমের হক জড়িত থাকে। সকলের হক যথাযথভাবে আদায় করা কর্তব্য। আদায় করা না হলে নিজের কামাই করা সম্পদও পুরোটা ভোগ করা নিজের জন্য অন্যায্য হবে এবং আখেরাতে আল্লাহ তাআলার কাছে এ ব্যাপারে জবাবদিহিতা করতে হবে। এ মর্মেও অনেক আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
অতএব, ধন-সম্পদ অর্জনে মত্ত থাকা কোনো নেক বান্দার কাজ হতে পারে না। যে সম্পদ অর্জিত হয়ে যায়, তা আল্লাহ তাআলার নিআমত মনে করে শোকর আদায় করা জরুরি। সেইসঙ্গে একে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষার মাধ্যম মনে করে যথাযথ হক আদায় করা আবশ্যক। সম্পদ কামানোর প্রতিযোগিতা এবং অর্জিত সম্পদ নিয়ে গর্ব করা কিছুতেই সমীচীন নয়।

ট্যাগস :

দুনিয়ার ধন-সম্পদ মানুষের জন্য পরীক্ষা

আপডেট সময় : ০৯:০৭:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ মানুষের পরীক্ষারও একটি মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা ন্যায়ানুগভাবে কমবেশি মাত্রাভেদে মানুষের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করেছেন। সম্পদ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিআমত। আবার বান্দার প্রতি কল্যাণকামিতার বিচারে তিনি যাকে যতটুকু সম্পদ দিয়েছেন, সেটা তার জন্য পরীক্ষার একটি ক্ষেত্রও বটে। পরকালে প্রত্যেককে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সূরা তাকাসুরের শেষ আয়াতে সে সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

ইরশাদ করেন : অতঃপর সে দিন তোমাদেরকে নিআমতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে (যে, তোমরা তার কী হক আদায় করেছ?) (সূরা তাকাসুর : ৮)। একথা রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে একাধিক হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। যুবায়র ইবনুল আওয়াম রা. থেকে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি উক্ত আয়াত সম্পর্কে নবীজী (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে কোন্ নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে; আমাদের কাছে আছেই তো কেবল পানি আর খেজুর। নবীজী বললেন, এগুলো সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করা হবে। (জামে তিরমিযী : ৩৩৫৬)।
একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) ক্ষুধার তাড়নায় এমন সময় ঘর থেকে বের হলেন, যে সময় সাধারণত কেউ বের হয় না। পথে হযরত আবু বকর ও ওমর রা.-কে দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘এসময়ে তোমরা ঘর থেকে বের হলে যে?’ তারা উত্তর দিলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! ক্ষুধার তাড়নায় বের হয়েছি।’ নবীজী (সা.) বললেন, ‘তোমরা যে কারণে বের হয়েছ, আমিও সে কারণেই বের হয়েছি। ঠিক আছে, চলো।’ তারা চলতে চলতে আবুল হাইছাম ইবনুত তাইহান নামে এক আনসারী সাহাবীর বাড়িতে উপস্থিত হলেন। ওই সাহাবী তখন বাড়িতে ছিলেন না। তার স্ত্রী তাদেরকে দেখে, অভ্যর্থনা জানালেন। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন। অমুক কোথায়? ওই সাহাবীর স্ত্রী বললেন, ঘরের জন্য সুপেয় মিষ্টি পানি আনতে গেছেন।

খানিক পরে আবুল হাইছাম এলেন। নবীজী (সা.), আবু বকর ও ওমর রা.-কে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, আজকে মেহমানের দিক থেকে আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। তারপরে তিনি তাদেরকে বাগানে নিয়ে গিয়ে কাঁচা, পাকা ও শুকনো এক ছড়া খেজুর খেতে দিলেন। আর ছাগল জবাই করার জন্য ছুরি নিলেন। নবীজী (সা.) তাকে বললেন, সাবধান, দুধেল মাদী ছাগল জবাই করবে না।
ওই সাহাবী একটি ছাগল জবাই করলেন। সবাই মিলে ছাগলের গোশত, খেজুর ও মিষ্টি পানি পান করলেন। তারা যখন পরিতৃপ্ত হলেন, তখন নবীজী (সা.) আবু বকর ও ওমর রা.-কে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর কসম, কিয়ামতের দিন তোমরা এ নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, এই শীতল বাতাস, তাজা খেজুর, সুপেয় পানি। তোমরা ক্ষুধার তাড়নায় ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলে, আর এখন এ নিআমত লাভ করে ফিরে যাচ্ছ। (সহীহ মুসলিম : ২০৩৮)।

প্রত্যেককেই তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। যথাযথ হিসাব নেওয়া হবে। মৃত্যুর পরে তো কোনো সম্পদই আর নিজের থাকে না। বেঁচে থাকতেও মানুষ যা কামাই করে সবটা তার নিজের নয়। বরং প্রত্যেকের সম্পদের সঙ্গে আরো অনেক মানুষের অনেক রকমের হক জড়িত থাকে। সকলের হক যথাযথভাবে আদায় করা কর্তব্য। আদায় করা না হলে নিজের কামাই করা সম্পদও পুরোটা ভোগ করা নিজের জন্য অন্যায্য হবে এবং আখেরাতে আল্লাহ তাআলার কাছে এ ব্যাপারে জবাবদিহিতা করতে হবে। এ মর্মেও অনেক আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
অতএব, ধন-সম্পদ অর্জনে মত্ত থাকা কোনো নেক বান্দার কাজ হতে পারে না। যে সম্পদ অর্জিত হয়ে যায়, তা আল্লাহ তাআলার নিআমত মনে করে শোকর আদায় করা জরুরি। সেইসঙ্গে একে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষার মাধ্যম মনে করে যথাযথ হক আদায় করা আবশ্যক। সম্পদ কামানোর প্রতিযোগিতা এবং অর্জিত সম্পদ নিয়ে গর্ব করা কিছুতেই সমীচীন নয়।