ঢাকা ১২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo ফুলবাড়ীয়ায় ককটেল ও পেট্রোল বোমা উদ্ধার Logo শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা জোরদার Logo বাংলাদেশ বেতার থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় সরাসরি সম্প্রচার Logo সচিবালয়ে সতর্ক অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী Logo কঙ্গোতে তামার খনি ধসে নিহত ৪০ Logo ২১ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে সীমিত থাকবে যান চলাচল: আইএসপিআর Logo শাহজালালে পুশকার্টের ধাক্কায় ‘ভেঙে গেছে’ এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের চাকা Logo কারওয়ান বাজারে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ, সীমানা নিয়ে দুই থানার ‘ঠেলাঠেলি’ Logo আ.লীগের লকডাউনেও গণপরিবহন চলবে: শ্রমিক ফেডারেশন Logo কিশোরগঞ্জ-১ আসনের তরুণ ও প্রবীণ ভোটারদের আস্থার প্রতীক ভিপি ওয়ালী উল্লাহ রাব্বানী

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করেই পার করেছে ২৭ বছর

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ১২:২৫:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১০৯৮ বার পড়া হয়েছে

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করেই পার করেছে ২৭ বছর

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বয়স আজ ২৭ বছর পূর্ণ হলো। শুধু বর্ষপূর্তি পালন করেই পার হয়ে গেলো এতগুলো বছর।

দীর্ঘ এই ২৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটে গেছে বহু অঘটন। কিন্তু চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন তো হয়নি, বরং চুক্তিটির ভবিষ্যত পরিণতি কী হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। কারণ চুক্তির ফলে গঠিত আঞ্চলিক পরিষদ আইন বাতিলসহ জেলা পরিষদের কিছু উল্লেখযোগ্য ধারা বাতিল করে ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছে, যা এখন আদালতে লিভ টু আপিলে রয়েছে।

তবে চুক্তি বাস্তবায়ন না হলেও চুক্তির বর্ষপূর্তি এলে দিনটি পালনে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ শান্তির র‌্যালি করে, কেউ সভা-সমাবেশ করে, কেউ কনসার্টের আয়োজন করে। ফানুসও উত্তোলন-কেক কাটার মতো দৃশ্যও আমরা দেখেছি। চুক্তি বর্ষপূর্তিতে এসব তামাশা দেখলে মনে হয় যেন চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বড়ই শান্তি বিরাজ করছে! কিন্তু আদতে শান্তি তো নাই।

এই চুক্তির সবচেয়ে ট্রাজেডির দিক হলো- চুক্তির পরবর্তী অন্তত দুই ডজনের অধিক সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি বেদখলসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

তথাকথিত শান্তি-সম্প্রীতির কনসার্টসহ নানা কিসিমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। জনগণের সাথে এর চেয়ে নিষ্ঠুর তামাশা ছাড়া আর কী হতে পারে!? আসলে এসব দেখে মনে হয়, সরকার কাছে পার্বত্য চুক্তি হলো কেবল সেলিব্রেট করার বিষয়, বাস্তবায়নের বিষয় নয়। এই চুক্তি যেন তাদের কাছে ‘বিজয়’ দিবস।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৭ বছর ধরে এটাও প্রত্যক্ষ যে, চুক্তি বর্ষপূর্তির দিনটি এলে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের একটি পক্ষ (জনসংহতি সমিতি) হতাশার বাণী শোনায়, মাঝে মাঝে আন্দোলনের বুলিও আওড়ায়। কিন্তু আন্দোলন তো হয় না, বরং বছর ঘুরে যখন বর্ষপূর্তি চলে আসে তখন একই হতাশার সুর ভেসে ওঠে তাদের কণ্ঠে। আর অপর পক্ষ নানা আশ্বাসবাণী শুনিয়ে আর রঙ্গ-তামাশা করে দিনটি পালন করে থাকে।

অবশ্য এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। চুক্তি স্বাক্ষকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন।

বর্তমানে দেশের ক্ষমতায় রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস রয়েছেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্বে। চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. ইউনুসও একটি বাণী দিয়েছে। তাঁর বাণীতে আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একটি ‘রাজনৈতিক চুক্তি’ এবং ‘পার্বত্য অঞ্চলকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়’ বলে উল্লেখ থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি।

এতে বলা হয়েছে “শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের” কথা, বলা হয়েছে “পার্বত্য জেলাসমূহের ‘নৈসর্গিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের” প্রসারে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার কথা। এ থেকে ধরে নেয়া যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ব্যতীত চুক্তি বাস্তবায়নের পথে এগুবে না।

ট্যাগস :

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করেই পার করেছে ২৭ বছর

আপডেট সময় : ১২:২৫:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করেই পার করেছে ২৭ বছর

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বয়স আজ ২৭ বছর পূর্ণ হলো। শুধু বর্ষপূর্তি পালন করেই পার হয়ে গেলো এতগুলো বছর।

দীর্ঘ এই ২৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটে গেছে বহু অঘটন। কিন্তু চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন তো হয়নি, বরং চুক্তিটির ভবিষ্যত পরিণতি কী হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। কারণ চুক্তির ফলে গঠিত আঞ্চলিক পরিষদ আইন বাতিলসহ জেলা পরিষদের কিছু উল্লেখযোগ্য ধারা বাতিল করে ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছে, যা এখন আদালতে লিভ টু আপিলে রয়েছে।

তবে চুক্তি বাস্তবায়ন না হলেও চুক্তির বর্ষপূর্তি এলে দিনটি পালনে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ শান্তির র‌্যালি করে, কেউ সভা-সমাবেশ করে, কেউ কনসার্টের আয়োজন করে। ফানুসও উত্তোলন-কেক কাটার মতো দৃশ্যও আমরা দেখেছি। চুক্তি বর্ষপূর্তিতে এসব তামাশা দেখলে মনে হয় যেন চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বড়ই শান্তি বিরাজ করছে! কিন্তু আদতে শান্তি তো নাই।

এই চুক্তির সবচেয়ে ট্রাজেডির দিক হলো- চুক্তির পরবর্তী অন্তত দুই ডজনের অধিক সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি বেদখলসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

তথাকথিত শান্তি-সম্প্রীতির কনসার্টসহ নানা কিসিমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। জনগণের সাথে এর চেয়ে নিষ্ঠুর তামাশা ছাড়া আর কী হতে পারে!? আসলে এসব দেখে মনে হয়, সরকার কাছে পার্বত্য চুক্তি হলো কেবল সেলিব্রেট করার বিষয়, বাস্তবায়নের বিষয় নয়। এই চুক্তি যেন তাদের কাছে ‘বিজয়’ দিবস।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৭ বছর ধরে এটাও প্রত্যক্ষ যে, চুক্তি বর্ষপূর্তির দিনটি এলে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের একটি পক্ষ (জনসংহতি সমিতি) হতাশার বাণী শোনায়, মাঝে মাঝে আন্দোলনের বুলিও আওড়ায়। কিন্তু আন্দোলন তো হয় না, বরং বছর ঘুরে যখন বর্ষপূর্তি চলে আসে তখন একই হতাশার সুর ভেসে ওঠে তাদের কণ্ঠে। আর অপর পক্ষ নানা আশ্বাসবাণী শুনিয়ে আর রঙ্গ-তামাশা করে দিনটি পালন করে থাকে।

অবশ্য এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। চুক্তি স্বাক্ষকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন।

বর্তমানে দেশের ক্ষমতায় রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস রয়েছেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্বে। চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. ইউনুসও একটি বাণী দিয়েছে। তাঁর বাণীতে আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একটি ‘রাজনৈতিক চুক্তি’ এবং ‘পার্বত্য অঞ্চলকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়’ বলে উল্লেখ থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি।

এতে বলা হয়েছে “শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের” কথা, বলা হয়েছে “পার্বত্য জেলাসমূহের ‘নৈসর্গিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের” প্রসারে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার কথা। এ থেকে ধরে নেয়া যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ব্যতীত চুক্তি বাস্তবায়নের পথে এগুবে না।