ঢাকা ০৯:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশের গুলিতে নিহত স্বামী, লাকী থাকেন অন্যের ঘরে

News Editor
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৫:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১০৩৭ বার পড়া হয়েছে

কুমিল্লা প্রতিনিধি:লাকী নামের অর্থ ভাগ্যবান। দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে সংসারজীবনে নামের সার্থকতা মিলেছিল লাকীর। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান স্বামী আবুল হোসেন (৩৪)। পুলিশের নির্মমতায় লাকীর নামের সার্থকতা মুছে দিয়েছে।

নিহত আবুল হোসেন পেশায় ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রির সহকারী। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে দিশাহারা লাকী। বড় ছেলে সুজনের বয়স ১০ বছর। কোলের শিশু সিয়ামের বয়স সাত মাস।

অভাব-অনটন থেকে মুক্তি নিয়ে ভাগ্যের চাকা সচল করতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকা শহরে। থাকতেন সাভারের আশুলিয়ার বাইপাল এলাকায়। কিন্তু নির্মমতার কাছে হার মেনে গ্রামে ফিরে আসা লাকীর এখন মাথা গোজার ঠাঁই নেই! তাই তিনি অবুঝ দুই সন্তান নিয়ে থাকেন অন্যের ঘরে। দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।

নিহত আবুল হোসেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের ফুলঘর গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে আবুল হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর তাঁর স্বজনরা তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর ১৯ আগস্ট সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের চাপে বাধ্য হয়ে জিডি নেয় আশুলিয়া থানার পুলিশ। তারপর ২৯ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ।

সেই ভিডিওতে গায়ে ব্রাজিলের জার্সি ও পরনে লুঙ্গি দেখে আবুল হোসেনকে শনাক্ত করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু শনাক্ত করলেও আবুল হোসেনের লাশ পায়নি পরিবার। কারণ প্রাণে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা; তাঁর লাশের সঙ্গে আরো ছয়টি লাশ ভ্যানে তুলে থানার সামনেই আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকী আক্তার বলেন, ‘আমার দুই সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব এখন কে নেবে। তাদের ভবিষ্যৎ কী। কিছুই জানি না। আমি গ্রামে চলে আসছি, এখানে বাচ্চাদের নিয়ে থাকার মতো ঘর নেই। আমার জন্য একটি ঘর ও আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করার জন্য আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই।

আবুল হোসেনের মা সালমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের লাশটাও ধরে দেখার ভাগ্যে ছিল না আমার। এই শোক কিভাবে সইব।’

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবুল হোসেনের পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

ট্যাগস :

পুলিশের গুলিতে নিহত স্বামী, লাকী থাকেন অন্যের ঘরে

আপডেট সময় : ০৯:৩৫:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

কুমিল্লা প্রতিনিধি:লাকী নামের অর্থ ভাগ্যবান। দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে সংসারজীবনে নামের সার্থকতা মিলেছিল লাকীর। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান স্বামী আবুল হোসেন (৩৪)। পুলিশের নির্মমতায় লাকীর নামের সার্থকতা মুছে দিয়েছে।

নিহত আবুল হোসেন পেশায় ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রির সহকারী। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে দিশাহারা লাকী। বড় ছেলে সুজনের বয়স ১০ বছর। কোলের শিশু সিয়ামের বয়স সাত মাস।

অভাব-অনটন থেকে মুক্তি নিয়ে ভাগ্যের চাকা সচল করতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকা শহরে। থাকতেন সাভারের আশুলিয়ার বাইপাল এলাকায়। কিন্তু নির্মমতার কাছে হার মেনে গ্রামে ফিরে আসা লাকীর এখন মাথা গোজার ঠাঁই নেই! তাই তিনি অবুঝ দুই সন্তান নিয়ে থাকেন অন্যের ঘরে। দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।

নিহত আবুল হোসেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের ফুলঘর গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে আবুল হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর তাঁর স্বজনরা তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর ১৯ আগস্ট সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের চাপে বাধ্য হয়ে জিডি নেয় আশুলিয়া থানার পুলিশ। তারপর ২৯ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ।

সেই ভিডিওতে গায়ে ব্রাজিলের জার্সি ও পরনে লুঙ্গি দেখে আবুল হোসেনকে শনাক্ত করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু শনাক্ত করলেও আবুল হোসেনের লাশ পায়নি পরিবার। কারণ প্রাণে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা; তাঁর লাশের সঙ্গে আরো ছয়টি লাশ ভ্যানে তুলে থানার সামনেই আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকী আক্তার বলেন, ‘আমার দুই সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব এখন কে নেবে। তাদের ভবিষ্যৎ কী। কিছুই জানি না। আমি গ্রামে চলে আসছি, এখানে বাচ্চাদের নিয়ে থাকার মতো ঘর নেই। আমার জন্য একটি ঘর ও আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করার জন্য আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই।

আবুল হোসেনের মা সালমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের লাশটাও ধরে দেখার ভাগ্যে ছিল না আমার। এই শোক কিভাবে সইব।’

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবুল হোসেনের পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।